২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:২৬/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ২:২৬ অপরাহ্ণ

সাতকানিয়ায় ইটভাটায় পাহাড়-বৃক্ষ নিধন, কাঠ পোড়ানো হচ্ছে

     

 

সাতকানিয়া প্রতিনিধি

উপজেলায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ৪৬টির অধিক ইটভাটাতে মাটি সংগ্রহে পাহাড়কাটা ও কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব চলছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে সরকারি পাহাড় কেটে, বন ধ্বংস করে ও ফসলি জমি ১৫-৩০ ফুট গভীর করে খনন করে ইটভাটায় মাটি পাচার করছে প্রতিদিন। খাল-বিল দখল, সরকারি পাহাড় কেটে ও ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটার প্রভাবে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য। ফলে পরিবেশ যেমন ধ্বংস হচ্ছে অন্যদিকে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের কফ-কাশিসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। এইসব বিষয়ে চট্টগ্রামের বহুল প্রচারিত দৈনিক পূর্বকোণসহ বহু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ওই সংবাদের সূত্র ও আমাদের প্রতিনিধির সরেজমিন ঘুরে ইট ভাটার এই হালচিত্র ও প্রতিবেদন তৈরী করেছেন।

সূত্রমতে, সাতকানিয়া-বাঁশখালী সীমান্তের এওচিয়া চূড়ামনি এলাকায় গড়ে উঠা ইটভাটাগুলোর চারদিকে রয়েছে বনবিভাগের সরকারি বনাঞ্চল। এসব বনাঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে গাছের বাগান। অন্যদিকে অসংখ্য পাহাড়-টিলা কেটেই গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটাগুলো। অবৈধভাবে গড়ে তোলা এসব ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে পাশর্^বর্তী বনাঞ্চলের কাঠ। পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি কাটার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে শতাধিক স্কেভেটর। স্কেভেটর দিয়ে টপসয়েলসহ প্রায় ১৫-৩০ ফুট গভীর করে ফসলি জমির মাটি কেটে পাচার করা হচ্ছে ইটভাটায়। ইটভাটার চিমনী থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার প্রভাবে বনাঞ্চলের গাছগুলো মারা যাচ্ছে। নির্বিচারে পাহাড়ি এলাকার গাছ নিধনের ফলে বন্যপ্রাণীরা বনাঞ্চল ছেড়ে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। এতে মানুষের জানমাল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে স্থানীয় গরিব কৃষক ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষগুলোর উপর। প্রতিবছর নতুন নতুন ইটভাটা গড়ে উঠায় সাতকানিয়ায় কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, কোনো পাহাড় বা টিলার উপরিভাগে বা ঢালে বা তৎসংলগ্ন সমতলের অন্তত আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যেও ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। এসব নিয়মের কোন তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে এ অঞ্চলের অধিকাংশ ইটভাটা। পরিবেশবান্ধব চিমনী স্থাপন করা ইটভাটা নির্মাণের পূর্বশর্ত। সরকারি নিয়ম ভঙ্গকারীদের বেলায় কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান বা উভয় দণ্ডের বিধান থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোন কোন কর্মকর্তা মাসোহারার বিনিময়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ ইটভাটার মধ্যে কয়েকটিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও পরবর্তীতে তাদের ম্যানেজ করে আবারো পুরোদমে কার্যক্রম চালাচ্ছে ইটভাটার মালিকরা। সাতকানিয়ায় পরিবেশ বিনষ্টকারী অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটাসমূহে নামমাত্র মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হলেও এ পর্যন্ত কোন ইটভাটা সম্পূর্ণভাবে সিলগালা করে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়নি। এতে প্রতিবছর গড়ে উঠছে নতুন নতুন ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র থেকে শুরু করে বৈধ কোন কাগজপত্র ছাড়াই চলছে এসব ইটভাটা। সরকারের পরিবেশ আইন অনুসারে বনাঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে ইটভাটা স্থাপনে সম্পূর্ণ বিধি-নিষেধ থাকলেও এসব কিছুর তোয়াক্কা না করে এখানকার ভাটা মালিকেরা তাদের অবৈধ কার্যক্রম পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলের ফসলি জমি থেকে ইটভাটায় মাটিপাচারকারী সিন্ডিকেটের অর্ধশতাধিক স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি। স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার কারণে বিদ্যুৎ বিভাগের চট্টগ্রাম-মহাসড়কের সাতকানিয়ার মৌলভীর দোকান থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত গ্রিড লাইনের টাওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

জানাগেছে, জমির উপরিভাগ বা টপসয়েলের একফুট গভীরের মধ্যে থাকে খাদ্যকণা। টপসয়েল হলো জমির প্রাণ। এসব টপসয়েল কেটে নিলে জমির উর্বরতা বলতে কিছু থাকে না। মাটির হিউমাস স্তর কেটে নিলে মাটির উর্বরতাশক্তি ফিরে পাওয়া দুর্লভ। সাতকানিয়া উপজেলার মৌলভীর দোকান থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত, সাতকানিয়া রাস্তার মাথা থেকে ছদাহা শিশুতল পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দু’ পাশে স্থাপিত হয়েছে অর্ধ শতাধিকেরও বেশি ইটভাটা। এসব ইটভাটায় ইতিপূর্বে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া সড়ক ও মহাসড়ক দিয়ে বেপরোয়াভাবে মাটির ডাম্পার ট্রাক চালানোর কারণে প্রতিবছর প্রাণহানি ঘটে থাকে।

সাতকানিয়া ব্রিকফিল্ড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরিদুল আলমকে এই বিষয়ে চানতে চেয়ে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্থতা দেখান এবং মিটিংএ আছে বলে লাইন কেটে দেন এবং তিনি নজরুল ইসলাম মানিক নামক জনৈক ব্যক্তির নামের কথা বলার জন্য বলেন। সাতকানিয়া ব্রিক ফিল্ড মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব নিজাম উদ্দিনের সাথে মুটো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সমিতি ভুক্ত এম.আর.বি. ব্রিকফিল্ডের মালিক একজন জেল খাটা ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে শিশু-নারী নির্যাতন মামলাও রয়েছে।

জানা গেছে, অসমর্থিত সূত্রমতে সাতকানিয়া ব্রিক ফিল্ড মালিক কল্যাণ সমিতি প্রতিটি ব্রিক ফিল্ড থেকে প্রশাসনকে ম্যানেজ করার জন্য কোটি টাকার ফাণ্ড তৈরী করেছে। এই ফান্ডের টাকা নিজেরাই আত্মসাৎ করে বলে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক কয়েকটি ব্রিকফিল্ডের মালিক অভিযোগ করেছেন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply