১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:০০/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ২:০০ অপরাহ্ণ

আজ ভয়াল ২৯শে এপ্রিল উপকূলবাসীর কান্নার দিনঃ ভাঙা বেড়িবাঁধ আতঙ্কে লাখো জনতা

     

এম সাজ্জাদ হোসাইন
২৯শে এপ্রিল উপকূলবাসীর কান্নার দিন। ১৯৯১ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। প্রাণ হারায় হাজারো মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় গবাদি পশু ও ফসলের। ঝড়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলের প্রায় লাখো মানুষ। ২৬ বছর পরও ঘূর্ণিঝড়ের সেই ক্ষত এখনো রয়ে গেছে উপকূলে। ভাঙা বেড়িবাঁধ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপেজলার লাখো মানুষ। প্রলয়ংকরী সেই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিল রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা গ্রামের দিলফুরুজ বেগমের মেয়ে রিনা আক্তার (১০)। তাঁর আরও আটজন স্বজনকে সেদিনের ঝড়ে হারিয়েছেন তিনি। এই ঝড়ের পর আরেকটি প্রবল ঝড় আসে। তা হলো ৯৮’র ঘূর্ণিঝড়। এই ঝড়ের পর আনোয়ারা উপকূলীয় এলাকায় সব মিলিয়ে ২০/২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে শেষ সময়ে এসে বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় এসে বিশেষ করে ২০১৬ সালের শক্তিশালী রোয়ানূর আঘাতে ভেঙে যায় সেই বাঁধ। এরপর থেকেই চলছে জোড়াতালির সংস্কার। দিলফুরুজের ছোট্ট ঘরটি গহিরা গ্রামের বেড়িবাঁধের পাশে। বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ ভাঙা। বর্ষায় জোয়ারের সময় বেড়িবাঁধ উপচে রায়পুর ইউনিয়নে এখনো পানি আছড়ে পড়ে। দিলফুরুজ বেগম (৫৮) বলেন, ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ের সময় ৫০ ফুটের বেশি উঁচু সেই জলোচ্ছ্বাসে রায়পুর ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। দিলফুরুজের প্রতিবেশী আবু তাহের (৫৬) বলেন, গত বছরের রোয়ানূর আঘাতে বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে গ্রামের ১৫০টির বেশি বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে। বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় আসছে বর্ষায় আবারও সেসব ঘরবাড়ি বিলীন হতে পারে। রায়পুর ইউনিয়নের পরুয়া পাড়া থেকে দক্ষিণ গহিরা ও সরেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটারের মতো বেড়িবাঁধের কয়েকটি ভাঙা অংশে দুটি এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। আবার মালিপাড়া থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বাইরের অংশে (সাগরের দিকে) রিং বাঁধ করা হচ্ছে। কিন্তু গহিরা বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ ও পাশের সরেঙ্গা এলাকার বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশে কাজ শুরু হয়নি। সরেঙ্গার জৈনক ব্যাক্তি বলেন, শীত মৌসুমে সাগর যখন শান্ত থাকে, তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভাঙা বাঁধের সংস্কার করে না। বর্ষায় যখন সাগর উত্তাল হয়, তখন বাঁধের সংস্কার শুরু হয়। রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জানে আলম বলেন, গহিরা ও সরেঙ্গা—এ দুই এলাকায় এখনো ভাঙা বেড়িবাঁধের সংস্কারকাজ শুরু হয়নি। ইউনিয়নের অন্যান্য এলাকার বেড়িবাঁধেরও কাজ হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। তাও হচ্ছে রিং বাঁধ। ভরা বর্ষায় উত্তাল জোয়ারের ধাক্কায় এসব নড়বড়ে রিং বাঁধ বিলীন হতে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। তখন বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিপরীতে সরকারের শত কোটি টাকা পানিতে যাবে। রায়পুরের পাশের ইউনিয়ন বারশত। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম কাইয়ূম শাহ বলেন, প্রতি বর্ষায় গহিরা ও সরেঙ্গার বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে রায়পুরের ৪০ হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হয়। পাউবো সূত্র জানায়, রায়পুর ইউনিয়নের প্রায় ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে সংস্কারকাজ চলছে মাত্র ২ কিলোমিটারের। এ জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে প্রায় ২৯০ কোটি টাকা। আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, “বর্ষার আগেই বেড়িবাঁধের সংস্কারকাজ শেষ করার দাবি ছিল মানুষের। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি।” অথচ সেন্টার থেকে গহিরা এলাকাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) গোষণা করা হয়েছে। তাই অতি দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কার করে এলাকা ও দেশের উন্নয়নের দারা অব্যাহত রাখা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ২২শে এপ্রিল, ১৯৯১ বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্মচাপের সৃষ্টি হয়। বাতাসে গতিবেগের ও নিম্মচাপের আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি ২৪শে এপ্রিল ঘুর্নিঝড়ে রূপ নেয়। ঘুর্নিঝড়টি উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে এর শক্তি আরও বাড়তে থাকে। ২৮ ও ২৯ এপ্রিল এটির তীব্রতা প্রচন্ড বৃদ্ধি পায় এবং গতিবেগ ১৬০ মাইল/ঘন্টায় পৌছায় যা একটি ক্যাটাগরী-৫ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য। ২৯শে এপ্রিল রাতে এটি চট্টগ্রামের উপকূলবর্তি অঞ্চলে ১৫৫ মাইল/ঘন্টা বেগে আঘাত করে যা ক্যাটাগরী-৪ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য। স্থলভাগে আক্রমণের পর এর গতিবেগ ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং ৩০শে এপ্রিল এটি বিলুপ্ত হয়।
এই ঘূর্নিঝড়ে প্রায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত হয়।[২] এদের বেশিরভাগই নিহত হয় চট্টগ্রাম জেলার উপকূল ও উপকূলীয় দ্বীপসমূহে। সন্দ্বীপ, মহেশখালী, হাতিয়া ইত্যাদী দ্বীপে নিহতের সংখ্যা সর্বাধিক। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল শিশু ও বৃদ্ধ। ১৯৭০ এর ভোলা ঘূর্নিঝড়ের পর অনেক সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হলেও সচেতনতা ও অজ্ঞাতার কারনে অনেকেই সাইক্লোনের মাত্র ঘন্টাখানেক আগে সেখানে আশ্রয় নেয়। অনেকেই ঝড়ের ভয়াবহতা বেশি হবে না এই আশায় আশ্রয় কেন্দ্রে উপস্থিত হয় নি। ধারণা করা হয় প্রায় ২০ লক্ষ লোক আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে বিপদজনক স্থানে অবস্থানের কারনে ঘূর্নিঝড়ে আক্রান্ত হয়

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply