২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৩:২০/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৩:২০ অপরাহ্ণ

লামা-আলীকদমে পাহাড় কেটে ইট ভাটা

     

 

লামা-আলীকদম প্রতিনিধি
‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ না মেনে বান্দরবানের লামা-আলীকদম উপজেলায় ৩০টি ইটভাটায় ইট তৈরীর প্রক্রিয়া চলছে। ইটের জন্য মাটি নেওয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী পাহাড় কেটেই। কয়েকদিন পরেই শুরু হবে বন থেকে কাটা লাকড়ি দিয়ে ইটপোড়ানো। ইতোমধ্যেই প্রাকৃতিক বিভিন্ন পাহাড় থেকে লাকড়ি কাটা হচ্ছে নির্বিচারে।
জানা গেছে, লামায় ২৭টি ও আলীকদমে স্থাপিত তিনটি ইটভাটার কোনটারই বৈধতা নেই। তারপরও সংশ্লিষ্টদের শত বাধা তোয়াক্কা না করে এবং অনেককে ম্যানেজ করে চলছে প্রতিবছর অবৈধ ইটের ভাটায় লাকড়ি পোড়ানো ও পাহাড় কেটে ইট তৈরী কার্যক্রম। ইতোপূর্বে দু’উপজেলা পরিবেশ ও বন কমিটির সভায় ব্রিকফিল্ডগুলোতে কাঠ পোড়ানোর বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ হয়েছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে বর্ষার শুরু থেকে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অব্যাহত অভিযান চালু রেখেছে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে। অনেকগুলো ভাটা এলাকায় মোবাইল কোর্ট করে জরিমানা ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক দুদুকে মামলা করে জেল হাজত করার নজিরও রয়েছে। এত কিছুর পরেও পরিবেশ বিদ্ধেষী মহলটি তাদের কার্যক্রম দুর্দান্ত প্রতাপে চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে ২১টি, ফাঁসিয়াখালী ইউপিতে ৬টি এবং আলীকদম উপজেলার পূর্ব পালং পাড়া ও আমতলী এলাকায় ২টি ও চৈক্ষ্যং তারাবুনিয়ায় আরেকটি ইটের ভাটা রয়েছে। দু’উপজেলার অনেকগুলো ভাটায় ড্রামসিট চিমনী দিয়ে ইটভাড়া গড়ে তোলেছে। স্থানীয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রতিবছরই পুঁজিবাদী মহল নতুন নতুন ইটতৈরির কারখানা স্থাপন কারে পরিবেশের বারোটা বাজিয়ে চলছে। বর্ষায় পাহাড় কাটার পর এখন থেকেইে শুরু হয়েছে এসব ভাটায় লাকড়ি পরিবহনের কাজ। এর ফলে গ্রামীণ সড়কগুলো সারাবছরই ক্ষতবিক্ষত থাকে। ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট ভেঙ্গে জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ চরমে উঠে। রাস্তাঘাট ধুলায় একাকার হয়ে সর্বসাধারণের চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়। রাস্তার ধুলিকনা একই সাথে ভাটার কালো ধুয়া মারাত্মকভাবে বাতাশ দূষিত হচ্ছে।
অপরদিকে লামা-আলীকদমে অবৈধ এসব ইটভাটাকেন্দ্রিক চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটও গড়ে উঠেছে। ইটের ভাটায় অবৈধভাবে আহরিত লাকড়ির যোগান দিতে গত কয়েক বছর ধরে আলীকদম উপজেলায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে কথিত ক্ষুদ্র কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি। এ সমিতির মাধ্যমে প্রতিমন লাকড়ি থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা তোলা হয়। সে চাঁদার ভাগ যায় বিভিন্ন ঘাটে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ৬ ধারায় উল্লেখ আছে, ‘কোন ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানী হিসেবে কোন জ্বালানী কাঠ ব্যবহার করতে পারবেন না’। এ আইন অমান্য করলে ‘অনধিক ৩ বৎসরের কারাদ- বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়  দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন’ মর্মে এ আইনের ১৬ ধারায় বলা হয়েছে।
অপরদিকে, এ আইনের ৪ ধারায় উল্লেখ আছে ‘জেলা প্রশাসকের নিকট হতে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করতে পারবেন না’। ৫নং ধারায় বলা আছে, ‘কৃষি জমি বা পাহাড় বা টিলা হতে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল ব্যবহার করা যাবে না’। এছাড়াও ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন করা যাবে না’ মর্মে আইনে উল্লেখ আছে।
আইন অনুযায়ী পার্বত্য জেলায় ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে, পার্বত্য জেলার পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোন স্থানে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ১ কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে এবং ইউনিয়ন সড়ক হতে আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবেনা।
এ আইনের ৮ ধরার ৩ (খ) উপধারায় উল্লেখ আছে, ‘বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অনুমতি ব্যতীত সরকারী বনাঞ্চলের সীমারেখা হতে ২ কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না’। কিন্তু এসব আইনের কোন ধারাই মানছেন না ভাটা স্থাপনকারীরা। সরে জমিন দেখা যায়, লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে বিদ্যালয়ের একেবারে পাশ ঘেসে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। এসব অবৈধ ভাটার ১৩টি নিয়ন্ত্রণ করছেন কবির খাঁন নামের এক ব্যাবসায়ী। বাকী ফিল্ডগুলো বিক্ষিপ্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন সরকার দলীয় নেতারা।
এব্যাপারে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি বলেন, বর্ষার শুরু থেকে তিনি পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছেন। অনেকের জরিমানা করা হয়েছে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে পরিবেশ আইনে মামলা হয়ে পাহাড় কর্তনের দায়ে একজনের জেলও হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি মামলা করেছেন। তিনি জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবেশ বিদ্ধেষী কর্মকান্ড বন্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন তিনি। অপরদিকে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার বলেন, আলীকদমে কোন ইট ভাটার লাইসেন্স নেই। শ্রীঘ্রই অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এদিকে স্থানীয়দের দাবী হচ্ছে, পাহাড় কর্তন রোধে আইনের বাস্তবিক প্রয়োগ ঘটাতে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হলে, এসব পরিবেশ বিদ্ধেষী নিষ্টুর কর্মকান্ড বন্ধ হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা নজরে আনবেন বলেও স্থানীয়রা প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেছেন।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply