১৮ এপ্রিল ২০২৪ / ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:৪০/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ১৮, ২০২৪ ২:৪০ অপরাহ্ণ

নির্বাচনে যাবে ঐক্যফ্রন্ট, তফসিল পেছানোর দাবি

     

আজ রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জোটের এই সিদ্ধান্ত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেনের লিখিত বিবৃতি পড়ে শুনিয়ে ফখরুল বলেন, “নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত খুবই কঠিন। কিন্তু এরকম ভীষণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

“আমরা বর্তমান তফসিল বাতিল করে নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে দিয়ে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি করছি। সেই ক্ষেত্রেও বর্তমান সংসদের মেয়াদকালেই নির্বাচন করা সম্ভব হবে।”ঐক্যফ্রন্টের লিখিত বিবৃতিতে নির্বাচন পেছনোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন চার দলীয় জোটের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তফসিল দুই দফা পেছানো হয়েছিল।

২৩ ডিসেম্বর ভোটের দিন রেখে নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে তফসিল ঘোষণা করেছে, সেখানে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা এবং ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় রাখা হয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে বলেছেন, রাজনৈতিক জোটগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটের তারিখ পিছিয়ে দিলে তাতে তার দল আপত্তি করবে না।

তবে নির্বাচন পেছানো হলে তা যৌক্তিকভাবে করতে হবে এবং যে দলগুলো জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে, তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কাদের।আর জোটের সাত দফা দাবির বিষয়ে সেখানে বলা হয়, “এসব দাবি আদায়ের সংগ্রাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অব্যাহত রাখবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকেও সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করবে ফ্রন্ট।”

লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, “একটা অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কড়া নজর রাখবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের আচরণের প্রতি।

“আমরা বলে দিতে চাই, জনগণের দাবি মানা না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়-দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।”

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেন বলেন, “আন্দোলনতো চলতেই থাকবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য এবং পরিবেশ তৈরি করার জন্য আন্দোলন চলবে। যখনই প্রয়োজন হবে সব কিছু করা হবে।”

“আমরা বিশ্বাস করি, দশম সংসদ নির্বাচনের পর দেশে গণতন্ত্রের যে গভীর সঙ্কট তৈরি হয়েছে, সেই সঙ্কট দূর করে আমাদের ঘোষিত ১১ দফা লক্ষ্যের ভিত্তিতে একটা সুখী, সুন্দর, আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামে দেশের জনগণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাশে থাকবে।”

ঐক্যফ্রন্ট জোটগতভাবে নির্বাচন করলে এবং এক দল অন্য দলের প্রতীক ব্যবহার করতে চাইলে রোববারের মধ্যেই তা নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্পষ্ট কোনো উত্তর দিতে পারেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলো অভিন্ন প্রতীকে নির্বাচন করবে কিনা জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, “আমরা পরে জানাব।”

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তারা তড়িঘড়ি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করল নির্ধারিত ৯০ দিন শেষ হওয়ার ৩৫ দিন আগে। তফসিল ঘোষণা করার পর দেশের নানা স্থানে সরকারি দলের আনন্দ মিছিল প্রমাণ করে- এই কমিশন আসলে সরকারের চাহিদা মতই তফসিল ঘোষণা করেছে।”

গণফোরাম সভাপতি কামাল অভিযোগ করেন, “সরকার আসলে আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমঝোতা চায়নি। এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, সরকারের যাবতীয় চেষ্টার উদ্দেশ্য হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আদলে আরেকটি নির্বাচন করা।”

তিনি বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় লেভেল প্লেইং ফিল্ডের ন্যূনতম শর্ত এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও বিটিভিসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে, যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, জেএসডির আসম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দকী, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া বিএনপির আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান, আইয়ুব ভুঁইয়া, গণফোরামের মোকাব্বির খান, জগলুল হায়দার  আফ্রিক, আওম শফিকউল্লাহ, মোশতাক আহমেদ, রফিকুল ইসলাম পথিক, নাগরিক ঐক্যের আতিকুর রহমান জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply