২৪ এপ্রিল ২০২৪ / ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৮:৪২/ বুধবার
এপ্রিল ২৪, ২০২৪ ৮:৪২ অপরাহ্ণ

আসুন বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়াই

     

আজহার মাহমুদ
যত দোষ নন্দ ঘোষ- প্রচলিত এই বাক্যটি আসলেই যথার্থ। বর্তমানে আমরা এখনও সেই বাক্যটির ভেতরই বসবাস করছি। আমাদের দেশে উন্নয়ন যেমন হচ্ছে ঠিক তেমনভাবে কোনো না কোনো সমস্যা কোনো না কোনো স্থানে লেগে আছে। মানলাম, সমস্যা ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশ নেই। তবে বাংলাদেশের সমস্যা গুলো রূপ নেয় ভয়ংকরভাবে। আর ভয়ংকর হওয়ার কারণ জানতে চান? কারণ হচ্ছি আমরাই। ছোট বেলায় বাবা-মার কাছ থেকে শুনতাম “এক হাতে তালি বাজে না”। আর এই বাক্যটি অনুসরণ করে বুঝতে পারলাম  বাক্যটিও যথার্থ। আমরা যদি না চাই তবে তা কখনোই সম্ভব না। আমাদের একটা বিষয় মানতে হবে, আমাদের দেশের অধিকাংশ সমস্যার জন্য আমরাই দায়ী। যা আমরা চাইলেই দূর করতে পারি। যেমন : সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যদি বলি, তবে বলতে হয় এখানে আমাদের অপরাধ কোনো দিক দিয়ে কম না। আমরা যদি নিজেরাই সেটা একবার লক্ষ্য করি তবে বিষয়টা বুঝতে পারব। সরকার রাস্তা পার হওয়ার জন্য ফুট ওভার ব্রীজ করে দিয়েছে, কিন্তু আমরা সেই ফুট ওভার ব্রীজের নিচ দিয়ে গাড়ি চলাচলের মাঝখানে দৌড়াচ্ছি। অনেক সময় গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার হচ্ছি। কিন্তু কেন? ফুট ওভার ব্রীজ দিয়ে গেলে কী হয়? আসলে এসব বিষয়ের কোনো মানে হয় না। আসলে আমরা বাঙ্গালীরা শর্টকার্ট বিষয়টি অতিরিক্ত পছন্দ করতে করতে শর্টকার্টে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। জেনে শুনেই আমরা এমনটা করি। আমাদের নীতিগত অভ্যাস কখনো পরিবর্তন হবে না। কয়েকদিন তৎপরতা আর সচেতন করলে আমরাও কয়েকদিন ভালোভাবে চলি, তারপর আবারও সেই আগের নিয়মে। বলতে লজ্জা লাগলেও বলতে চাই কুকুরের লেজ যেমন ১২ বছর চোঙ্গার ভেতর রাখলেও সোজা হয় না,  আমরাও ঠিক তেমন। আমরা পরিবর্তন হচ্ছি না। আমরা নিজেরা সচেতন না হলে অন্যকে কেনো দোষ দিব তা আমার বোধগাম্য নয়। আমরা একাট বিষয় শুধু বলতে পারি সরকারের ভুল, প্রশাসনের দোষ। বাস্তবে কখনো নিজেদেরটা দেখি না। আর এই জন্য আমরা সবচেয়ে বেশী সমস্যায় ভুগছি। রাস্তায় বের হলে ধুলোবালি উড়ছে এবং দূর্গন্ধ ময়লা আবর্জনা দেখি। অনেকে বলবেন, এগুলোও সরকার কিংবা প্রশাসন এসে ফেলে! আমরা ফেলি না! আবার যেখানে সেখানে ময়লা, কফ, থুথু ফেলে আমাদের পরিবেশকে হুমকিতে ফেলছি আমরাই। মন চাইলো দোকান থেকে সেভেন আপ কিনে খেয়ে রাস্তায় বোতলটা ফেলে বাসায় চলে আসি আমরা। আর সকালে উঠে বলি সিটি কর্পোরেশন এগুলো পরিষ্কার করে না কেনো। বড়ই অদ্ভুত আমরা! আসলে আমাদের বিবেক বোধ বলতে কিছু আছে বলেই মনে হয় না। আমরা সকলে মিলে একরুমে টিভি দেখি কিন্তু বাকি তিনটি রুমে লাইট-ফ্যান চালিয়ে রাখি আমরা। দিনে কত পরিমাণ বিদুৎ অপচয় করি তার কোনো হিসেব রাখি না, কিন্তু বিদুৎ না থাকলে কতক্ষণ পর্য্ন্ত বিদুৎ নেই সেই হিসেবটা আমরা ঠিকি রাখি। কারণ আমাদের ভেতর এখন মনুষ্যত্ব এবং বিবেক বোধ জন্ম নেয়নি। মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারিনি আমরা। টয়লেটে কিংবা গোসলখানায় গেলে কখনো হিসেব করি না কতটা পানি অপচয় করি, কিন্তু কখনো পানি না থাকলে সেই হিসেবটা প্রতিনিয়ত লাফিয়ে লাফিয়ে বলি। আসলে আমরাই ভালো, শুধু দেশটাই খারাপ! আমাদের ভেতর এমন মানসিকতা যতদিন থাকবে ততদিন আমরা এমন সমস্যায় ভুগব। এটা আমার বিশ্বাস। আমরা নিজেরাই যার যার অবস্থান থেকে সৎ নই আবার আমরা অন্যের দিকে আঙ্গুল তুলে ধরি। একবার নিজের ভুলগুলো নিজে ভাবুন, চিন্তা করুন মানুষের সাথে কতটা প্রতারণা করছেন আর কতটা উপকার করছেন। চিন্তা করুন কতটা ভালো এবং কতটা মন্দ আপনার মাঝে আছে। আমি বলছি না আমরা সকলেই ভালো না। অবশ্যই আমরা ভালো। তবে আমাদের ভেতর মন্দ একটু বেশী আছে। মন্দের পরিমাণ যদি কমিয়ে আনতে পারি তবে আমরা অবশ্যই সফল হবো। আমরা তখনই সচেতন আর পরিবর্তন হতে পারবো। তাই আগে নিজের বিচার নিজে করতে চেষ্টা করি, পরে না হয় অন্যকে দোষ দিব। এই নন্দ ঘোষের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করি। আমার ক্ষতি কীভাবে না হয় সেটা আমার অবশ্যই জানা থাকবে, ঠিক তেমনি আমাদের সমস্যা কীভাবে হবে না সেটা আমাদেরও জানা আছে। আমরা চাইলেই সেটা পারি। কিন্তু আমরা সেদিকে গুরুত্ব দিই না। যার কারণে আমাদের এই সমস্যা। পরিবেশ দূষণ, শব্দ দূষণ, পানি দূষণ, সড়ক দূর্ঘটনা, লোডশেডিংসহ যাবতীয় সমস্যায় আমি মনে করি আমরাও জড়িত। আমরা কিছু হলেই আন্দোলন, প্রতিবাদ, সমাবেশ, মানববন্ধন ইত্যাদি ইত্যাদি করি। কিন্তু যারাই এসব আন্দোলন প্রতিবাদে আসে প্রকৃতপক্ষে তরাই সবচে বেশী অসচেতন। আগে সচেতন হই তারপর সচেতন করি তারপর আন্দোলন, প্রতিবাদ। মূলতঃ তৃতয় ধাপে এই আন্দোলন, প্রাতিবাদ। এই সমস্যাগুলো সমাধানে প্রথম ধাপ হচ্ছে নিজেরা সচেতন এবং পরিবর্তন হওয়া। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমি সচেতন হলে অন্যজন সচেতন হবে। আমার দেখাদেখি অন্যজন যেমন  আন্দোলন এবং প্রতিবাদে আসে ঠিক তেমনি আমার দেখাদেখি অন্যজন পরিবর্তন এবং সচেতনও হবে। তাই আগে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। তবেই দেশকে এবং দেশের মানুষকে সুন্দর দেখাবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply