২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সকাল ৭:০০/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৭:০০ পূর্বাহ্ণ

শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব, আজ মহাষষ্ঠী

     

বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ব বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে আজ সোমবার থেকে আরম্ভ হচ্ছে।

পঞ্জিকা অনুসারে শুক্রবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে সমাপ্ত হবে ৫ দিনব্যাপী এ শারদীয় উৎসবের।

এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আলাদা বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

দূর্গা শব্দের বাংলা অর্থ হলো আবদ্ধ হয়ে থাকা স্থান। যেসব দুঃখ কষ্ট আর বেদনা মানুষকে আবদ্ধ করে। যেমন- বাধাবিঘ্ন, ভয় দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রণা এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রবিদরা দুর্গার নামে অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখ আর বেদনার মাধ্যমে যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্য ক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।

হিন্দু পূরাণ মতে দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া স্বত্তেও শরৎ কালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের মৃদুল মহারাজ বলেন, ধারীত্রীর মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘাটক (ঘোড়ায়) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ শোক হানাহানি মারামারি বাড়বে। অন্যদিকে কৈলাশে (স্বর্গে) বিদায় নেবেন দোলায় চড়ে। যার ফলে জগতে মড়ক, ব্যাধি এবং প্রাণহানির মতো ঘটনা বাড়বে।

এদিকে পূজাকে আনন্দ ও উৎসবমুখর করে তোলার জন্য সারাদেশে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সমাপ্ত করা হয়েছে। দেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল কাঁসা এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মণ্ডপ।

রামকৃষ্ণ মিশনের নিঘণ্টে বলা হয়েছে, সোমবার সকাল সাড়ে ৬টায় কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পূর্ণ হবে। এদিন সকাল থেকে চন্ডিপাঠে মুখরিত থাকবে সকল মণ্ডপ এলাকা।

পূজার দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টায়। বুধবার মহাঅষ্টমীর পূজা আনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায় এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে দুপুর ১২টা ৫৬ মিনিটে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পরদিন শুক্রবার সকাল ৭টায় পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টায়। পরে প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ পূজা উৎসবের।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটারর্জি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, এবার সারা দেশে ৩১ হাজার ২৭২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আর রাজধানী ঢাকাতে এবার পূজা অনুষ্ঠিত হবে ২৩৪টি মণ্ডপে। গত বছর দেশজুড়ে ২৯ হাজার ৭৪ টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং রাজধানী ঢাকায় মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ২২৫টি।

তিনি বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা ইতোমধ্যেই পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণভাবে যাতে পূজা সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়ে তারা পূর্ণ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছা রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়াও ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপ, গুলশান বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ মণ্ডপ রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরোদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, সিদ্ধেশ্বরী কালিমাতা, ভোলানাথ মন্দির আশ্রম, জগন্নাথ হল, ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, বাসাবো বালুর মাঠ, শাখারী বাজারের পানিটোলা মন্দিরসহ অন্যান্য মণ্ডপে দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্র্স্তুতি নেয়া হয়েছে।

দূর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply