১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:৪১/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ২:৪১ অপরাহ্ণ

আমাদের আরো পরিবর্তন হওয়া চাই

     

আজহার মাহমুদ
এ যেন এক আলো-আঁধারের মহাকাব্য! সাড়ে ৫০০ এলইডি বাতির আলোতে ঝলমল করছে পুরো চট্টগ্রাম। হ্যাঁ৤ আমি জাম্বুরি পার্কের কথা বলছি৤ যাত্রা শুরু করলো চট্টগ্রামের সবচেয়ে আধুনিক নজরকাড়া জাম্বুরি পার্ক৤ আগ্রাবাদ ১০ তলা ভবনের সামনে সাড়ে আট একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এবং নজরকাড়া এই উদ্যান। এ উদ্যান তৈরী করতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ১৮ কোটি টাকারও বেশী। এত দিন সরকারি এই জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় মাদক সেবীদের জন্য ছিলো মাদকের অন্যতম আড্ডাস্থল৤ সেখানে গেলেই মিলত অবাধে মাদক আর মাদক৤ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন’র উদ্যোগে অতি দ্রুততার সাথে গড়ে তোলা হয়েছে এ পার্ক ৤ ৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে পার্কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মাননীয় মন্ত্রী৤ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিলো ২০১৫ সালে৤ স্থাপত্য অধিদপ্তরের নকশায় ৮.৫৫ একর জমির ওপর রোপণ করা হয়েছে ৬৫ প্রজাতির ১০ হাজার গাছের চারা৤ এর মধ্যে আছে সোনালু, নাগেশ্বর, চাঁপা, রাধাচূড়া, বকুল, শিউলি, সাইকাস, টগর, জারুল সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ এবং বণজ বৃক্ষ৤ খোলা চত্বরে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন জাতের সবুজ ঘাস৤ পার্কে বসার সুযোগও রাখা হয়েছে অতি সুন্দরভাবে৤ আর শুধু হাঁটার জন্য রাখা হয়েছে ৮ হাজার ফুট রাস্তা৤ ৫০ হাজার বর্গ ফুট জলাধার ও দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা যে কারো নজর কাড়বেই এ উদ্যান৤ নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে ১৪ টি ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা৤ জলাধারের পাশে রয়েছে দুটি পাম্প হাউস৤ বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির বিপদ থেকে রক্ষার জন্য পুরো পার্ক সড়ক থেকে তিন ফুট উঁচু করা হয়েছে৤ পানি নিষ্কাশনের জন্য রয়েছে অভ্যন্তরীণ মাস্টার ড্রেন। পার্কে প্রবেশের জন্য রয়েছে ছয়টি গেট৤ উত্তর পাশে দুটি, দক্ষিণ পাশে দুটি, পূর্বপাশে ১০ তলা ভবনের সামনে একটি, পশ্চিম পাশে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে একটি বড় গেট আছে৤ নাগরিকদের জন্য উত্তর-পূর্বকোণ ও দক্ষিণ পশ্চিমকোণে রাখা হয়েছে আধুনিক গণশৌচাগার৤ পার্কে প্রবেশে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম কানুন বেঁধে দিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ৤ ছুটির দিন সহ প্রতিদিন সকাল থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এ পার্ক৤ নিষেধ আছে সেখানে খাবার নেওয়া যাবেনা৤ জলাধারে গোসল করা যাবেনা৤ গাছের ক্ষতি করা যাবেনা৤ পার্কে প্রবেশের জন্য কোনো ধরনের ফি রাখেনি কর্তৃপক্ষ। তবে এখানকার সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত সন্ধ্যার পর৤ আলো-আঁধারির ঝলকানি যে কারোর ভালো লাগবে৤ আগামী কয়েক বছর সঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করা হলে নতুন পর্যটন স্পট হয়ে উঠতে পারে এটিও৤ জাম্বুরি পার্ক মূলত শরীরচর্চার জন্য প্রশস্থ ও দীর্ঘ জগিং ট্র্যাক৤ একইসঙ্গে এটি হয়ে উঠেছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের প্রশান্তির উন্মোক্ত উদ্যান। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেন, বান্ধবী নিয়ে আসেন, কবিতা পড়েন, আড্ডা দেন, কিন্তু পার্ক নষ্ট করবেন না৤ তিনি এত সুন্দর বক্তব্য এবং অনুরোধের পরও এ পার্কের অবস্থা নোংরা করে ফেলছে পার্কে আসা মানুষ গুলো৤ তিনি আরও বলেন, পার্কের গাছ গুলো বাড়তে দিন, দেখবেন রমনা পার্কের চেয়েও অনেক সুন্দর হবে এ পার্ক৤ প্রকৃতপক্ষে এ পার্কের দায়িত্বটা আমাদেরকেই নিতে হবে। সরকার উন্নয়ণ করলে কি হবে, সমাজের কিছু নোংরা এবং হীনমন্য জাতের মানুষ রয়েছে, যারা পার্কে এসে উদ্যানটি নোংরা এবং ময়লায় ভরপুর করে রাখে। এ যে পার্কটি পরিচ্ছন্ন রাখা, এটা কার দায়িত্ব? এটাও কি সরকার কিংবা পার্কের কর্তৃপক্ষ করবে? আমাদের কি কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্য নেই? পার্ক সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আমাদের তো কোনো কাজ করতে হচ্ছেনা, কিন্তু আমরা এ সুন্দর স্থানটিকে কেনো নোংরা করে রাখবো? এর দায় কি সরকার নিবে? আমারা কি এতটাই নিচে নেমে গিয়েছি? এ পার্কটি তৈরী করার জন্য তো চট্টগ্রামের প্রতিটি মানুষ থেকে চাঁদা উঠায়নি সরকার। বিনামূল্যে এবং কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া চট্টগ্রামবাসীকে উপহার দিয়েছে একটি নান্দনিক বিনোদন পার্ক। পার্কটি মূলতঃ শরীরচর্চা ও প্রাকৃতিক পরিবেশে বিশ্রাম বা সময় কাটানোর জন্য গড়ে তোলা হয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষের বিনোদনের কথা চিন্তা করেই সরকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ণ করেছে। এখানে আমরাই সময় কাটাবো। আমাদেরর পরিবার পরিজন বন্ধু-বান্ধবরাইতো ঘুরতে আসবে। তবে কোনো এ পার্কটিতে ময়লা ফেলে নোংরা করবো আমরা। আমাদের নিজেদের ভেতর কি কোনো সচেতনতা আর নৈতিকতা বোধ নেই। আমরা ভুল করবো এর দায় নিতে হবে সরকার কিংবা প্রসাশনকে। আমরা নিজেরা কতটা সচেতন এবং সুশৃংখল সেটা কি আমরা একবারও চিন্তা করি? আসলে আমাদের নিজেদের বিবেকের কাঠগড়ায় আমাদের দাড়াতে হবে। আমরা আগে নিজেদের পরিবর্তন করি, তারপর দেশ সমাজ এমনিতেই পরিবর্তন হয়ে আসবে। আমাদের আচরণ, ব্যবহার, চালচলন এসকল বিষয়ে আরো সুন্দর হতে হবে। আমরা যেখানে সেখানে ময়লা, থুথু, এবং আবর্জনা ফেলতেও সংকোচ বোধ করিনা। আমাদের এসকল নোংরা মানসিকতা পরিবর্তন আনতে হবে আগে। তারপর আমরা অন্য বিষয় নিয়ে ভাবতে পারবো। তাই আসুন আগে নিজে পরিবর্তন হই এবং অন্যদের পরিবর্তন করি। তারপর সমাজ এবং দেশকে নিয়ে চিন্তা করি। মনে রাখবেন আপনার পরিবর্তন মানেই দেশের পরিবর্তন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply