২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১:১৯/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ১:১৯ পূর্বাহ্ণ

সারা বিশ্বে একইদিনে রোজা শুরু বা ঈদ পালন করার দাবি শরীয়ত বিরোধী

     

সারা বিশ্বে একইদিনে রোজা শুরু বা ঈদ পালন করার দাবি করা সম্মানিত শরীয়ত উনার বিরোধী। সউদি আরব পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ অনুসরণ না করে এবং খালি চোখে চাঁদ না দেখে ‘উম্মুল কুরা’র মনগড়া নিয়ম ব্যবহার করে আরবী মাসের তারিখ ঘোষণা করায় বা তারিখ হেরফের করায় মুসলমানদের ফরজ ইবাদত হজ্জ, রোজাসহ অন্যান্য ইবাদত বন্দেগী বাতিল হচ্ছে।আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে রাজারবাগ শরীফের পক্ষ থেকে ‘মাজলিসু রুই্য়াতিল হিলাল’ এর উদ্যোগে “একইদিনে সারা বিশ্বে রোজা শুরু করা বা ঈদ পালন করা সম্ভব নয়” শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে “সারা বিশ্বে একইদিনে রোজা শুরু বা ঈদ পালন করার দাবি শরীয়ত সম্মত নয়” এ বিষয়ে সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মুফতিয়ে আ’যম আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ এবং বিশিষ্ট চাঁদ ও মহাকাশ গবেষক এবিএম রুহুল হাসান।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, সারাবিশ্বে যারা একদিনে রোযা রাখা এবং একদিনে ঈদ করার কথা বলে থাকে, সামান্যতম ভৌগোলিক জ্ঞানও তাদের নেই। কেননা, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের সময়ের পার্থক্য হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা। পৃথিবীর এক প্রান্তে যখন দিন, তখন অন্য প্রান্তে পূর্ব বা পরের দিন অথবা রাত। কাজেই সেখানে তখন চাঁদ দেখার প্রশ্নই আসে না। তাহলে কি করে একদিনে সারাবিশ্বে রোযা রাখা বা ঈদ করা যেতে পারে? এটা মূলতঃ নেহায়েত অজ্ঞতা ও জিহালতপূর্ণ কথা।

বক্তারা বলেন, পৃথিবীর এমন অনেক স্থান আছে সেখানে সউদী আরবের পূর্বে চাঁদ দেখা যায়। যদি কোন বছরের যিলহজ্জ মাসের চাঁদ সউদী আরবের পূর্বে অন্য কোন দেশে দেখা যায় এবং তার একদিন পর যদি সউদী আরবে যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দৃশ্যমান হয় তাহলে কি সউদী আরবের পূর্বে বা আগেই প্রথমে যে স্থানে যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা গেল সে অনুযায়ী হাজীদের আরাফার ময়দানে উপস্থিত থাকতে হবে! যদি তাই হয়, তাহলে কারো হজ্জ আদায় হবে না। সউদী আরবের আকাশে যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখেই যিলহজ্জ মাস শুরু করতে হবে এবং তাদের ৯ই যিলহজ্জ তারিখে পৃথিবীর সব হাজীকে আরাফার ময়দানে উপস্থিত থাকতে হবে। যেখানে অবস্থান করা ফরয।

বক্তারা আরোও বলেন, অমাবস্যায় কখনো চাঁদ দৃশ্যমান হয়না বরং তার এক থেকে দেড় দিন পর চাঁদ দেখা যাবার আকৃতিতে আসে। কিন্তু যুগযুগ ধরে সউদি আরব খালি চোখে চাঁদ না দেখে উম্মুল কুরার মনগড়া নিয়ম ব্যবহার করে আরবী মাসের তারিখ ঘোষণা করায় বাংলাদেশের চেয়ে এক বা দুইদিন আগে মাস শুরু করছে। বিগত অনেক বছরের সউদী আরবের চাঁদের রিপোর্টে তার প্রমাণ রয়েছে। সউদি আরব উম্মুল কুরা’র মনগড়া নিয়ম ব্যবহার করে এভাবে চাঁদ না দেখে একদিন বা দুইদিন পূর্বে পবিত্র যিলহজ্জ মাস গণনা শুরু করলে অকুফে আরাফা অনুষ্ঠিত হয় ৭ই যিলহজ্জ বা ৮ই যিলহজ্জ তারিখে। অথচ ৯ই যিলহজ্জ এর পরিবর্তে এসব দিনে আরাফার ময়দানে অবস্থান করলে অকুফে আরাফার ফরয বাতিল হবার পাশাপাশি আরও অনেক ওয়াজিব আমল বাতিল হয়ে যায়। একইভাবে যাদের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব তাদের কেউ যদি ১০ই যিলহজ্জ মনে করে ৯ই যিলহজ্জ-এ কুরবানী আদায় করে তবে সে ওয়াজিবও আদায় হবে না। যার কারণে হাজীদের হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। এমনিভাবে তারিখ হেরফের হবার কারণে মুসলমানগণের রোজা, শবে বরাত, শবে ক্বদরসহ অনেক আমলই বাতিল হয়ে যায়।

বক্তারা বলেন, সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী আকাশে খালি চোখে চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করতে হয় এবং সেই ১৪৩৯ বছর ধরেই এই নিয়ম মুসলিম বিশ্বে পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন সঠিক পদ্ধতিতে আমাদের দেশে মাস গণনা করে থাকলেও “সারা বিশ্বে একদিনে ঈদ পালন” করতে চাওয়া দলটি বর্তমানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার চেষ্ঠা করে যাচ্ছে। আসলে মাতলা বা উদয়স্থল এবং হাদিস শরীফ এবং ফিকাহর উসুল না বোঝার কারণেও তাদের মধ্যে এই বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, যেহেতু সউদী আরব আমাদের দেশের পশ্চিমে অবস্থিত এবং সবসময় সউদী আরব আমাদের একদিন আগে ঈদ পালন বা রোজা শুরু করে থাকে এক্ষেত্রে অনেকের মনেই ধারণা জন্মেছে সউদী আরব হয়তো ভৌগলিকভাবে এমন অবস্থানে রয়েছে যে তারাই আগে চাঁদ দেখবে। এমনকি অনেক সেমিনার এবং লেখনি থেকেও আমরা এমন বক্তব্য পেয়েছি। কিন্তু সঠিক তথ্য হলো কেবল সউদী আরব নয়, পৃথিবীর কোন  নির্দিষ্ট দেশেই সবসময় আগে চাঁদ দেখবে না বরং চাঁদ যে কোন মাসে যে কোন দেশেই প্রথম দেখা যেতে পারে। যেহেতু সউদী আরব চাঁদের তারিখ ঘোষণা করার ক্ষেত্রে তাদের মনগড়া নিয়মের অনুসরণ করে যাচ্ছে তাই এই বিভ্রান্তি দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশের বিভিন্ন দল সউদী আরবকে অন্ধ অনুকরণ করতে গিয়ে নিজ নিজ দেশে চাঁদ না দেখেই ঈদ পালন বা রোজা শুরু করছে এবং এতে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিচ্ছে।

সুতরাং সকলের উচিত কোন নির্দিষ্ট দেশের নিয়ম অনুসরণ না করে পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ অনুযায়ী খালি চোখে চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করা এবং সম্মানিত শরীয়তের এই নিয়ম অনুসরণ করলে একদিনে সারা বিশ্বে ঈদ পালন বা রোজা শুরু করা কখনোই সম্ভব নয়।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply