২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:৫৩/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ২:৫৩ অপরাহ্ণ

জামাত নেতা ইয়াবা ছাবেরের কোটিপতি হবার নেপথ্য তথ্য

     

আনোয়ারা প্রতিনিধি
আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ছাবের আহমদকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে আনোয়ারা থানা পুলিশ।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুলাল মাহমুদ জানান, রায়পুর ইউনিয়নের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী সাবের আহমদ দীর্ঘদিন ধরে লিস্টেট হলেও ধরা ছোয়ার বাইরে ছিলেন। গত ১৭ জুন গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ছাবেরের নিজ বাড়িতে তল্লাসী চালিয়ে ৫০০ পিস ইয়াবাসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে আদালতে চালান করা হয়।
♦শূন্য থেকে শতকোটি : চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলাধীন দক্ষিণ পরুয়া পাড়া গ্রামের সাবের আহমেদের বছর পাঁচেক আগেও কিছুই ছিল না। তবে তাঁর বর্তমান অবস্থা মানুষের কল্পনাকেও হার মানাবে। তাঁর এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে এবং বিভিন্ন সুত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, ইয়াবা ব্যবসার মাধ্যমে তিনি রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন।
♦সাবেরের পরিচয় : সাবেরের বাবার নাম মরহুম এমদাদ। তাঁর বড় ভাই ইয়াবা গড ফাদার হাসান মাঝি। বর্তমানে সাবের জামাআত ইসলামি দক্ষিণ পরুয়া পাড়া শাখার সভাপতি।
♦হাসান মাঝির মাদক ব্যবসায় যুক্ত : এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাবের চুন্নাপাড়া মাদ্রাসা থেকে ফাযিল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। তারপর সৌদি আরব চলে যান। সেখানে বেশ কিছুদিন থাকার পর ভিসা জটিলতার কারণে তাঁকে নি:স্ব অবস্থায় দেশে ফিরতে হয়েছিল। দেশে এসে তিনি তার বড় ভাই হাসান মাঝির মাদক ব্যবসা ও সার পাচারে যুক্ত হন।
♦হাসান মাঝির পালিয়ে যাওয়ার পর : ২০০৮ সালে হাসান মাঝি ব্যাপক পরিসরে মাদক ব্যবসা করার জন্য পঁচির বাড়ির নাসির, লইন্যার বাড়ির নূর সৈয়দ, পারকীর জালাল, হান্নান সহ অর্ধশতাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিয়েছিলেন।পারকির টাকা সাবেরের মাধ্যমে কালেকশন করা হয়। কিন্তু বার্মায় হাসান মাঝির ব্যবসায়ী পার্টনারের সাথে জটিল সমস্যা তৈরি হওয়ায় তিনি তার ব্যবসায়ী পার্টনারকে টাকা দেওয়ার পর ও বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য আনতে পারেননি। একারণে তিনি মাদকের জন্য যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন, তাদের ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যান। হাসান মাঝি এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর সাবের নানা কৌশলে হাসান মাঝির পাওনাদারদের সামলাতে থাকেন।♦পারকীতে ধরে নিয়ে যাওয়া : হাসান মাঝি এবং সাবের পারকির জালাল ও তার পার্টনারদের অনেকবার টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও টাকা ফেরত দিতে পারেনি। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে ২০০৯ সালের শেষের দিকে পারকির জালাল এবং তার সহযোগিরা দলবল নিয়ে দলবল নিয়ে দক্ষিণ পরুয়া পাড়া থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে সাবেরকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।

♦ ইয়াবা ব্যবসা শুরু : বিভিন্ন সুত্র এবং তাঁর এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ সালে সাবের তার ভাই হাসান মাঝির সাথে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেন। তাদের সাথে যুক্ত হয় তাদের বোন ছেনোয়ারা (প্রকাশ ছেল্ল)- এর স্বামী হাসান মিয়া। হাসান মাঝির বিরোদ্ধে কয়েকটি মামলা থাকার কারণে প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারতেন না। তাই সাবেরের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গঠন এবং ব্যবসা পরিচালিত হত। তাকে এসব কাজে সহযোগিতা করতেন তাদের বাড়ির ইসহাক, শলার বাড়ির ইবরাহীম উরফে সুরত, তাদের ভাগিনা এবং সাদ্দাম সহ আরো কয়েকজন।প্রসঙ্গত, ইয়াবা সহ ধরা পড়ে সাদ্দাম জেল খেটেছিল।

♦ইয়াবা নিয়ে দুই পাড়ার মধ্যে ঝগড়া : এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ধরা পড়ার ভয়ে সাবের এবং হাসান মাঝি তাদের প্রচুর পরিমাণ ইয়াবা হাজির পাড়ার ইসমাইলের কাছে রেখেছিল।ইসমাইল ইয়াবাফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানালে সাবের -হাসানের
পাড়ার মানুষের সাথে ইসমাইলের পাড়ার মানুষের ঝগড়া লেগে যায়।

♦: সাবের ও হাসান মাঝির ৬ লাখ ইয়াবা আটক :২০১৭ সালের ১৯ মার্চ পতেঙ্গায় মায়ানামারের ছয় নাগরিকসহ ৮ জনকে আটক করেছিলেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। তাদের কাছ থেকে ৬ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছিল । র‌্যাব অধিনায়কের ভাষ্য অনুযায়ী, আটক হওয়া ৮ জন মিলে মায়ানমার থেকে ইয়াবাগুলো সরাসরি চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছিল। আনোয়ারার দুই ভাই ইয়াবা ব্যবসায়ী হাসান মাঝি (৪০) ও সাবের আহমেদ (২৮) তাদের দিয়ে ইয়াবাগুলো
সংগ্রহ করেছিল। তাদের ভগ্নিপতি হাসান মিয়াও এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

 

 

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply