২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৩:৩৭/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৩:৩৭ অপরাহ্ণ

আমরাও স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য: প্রধানমন্ত্রী

     

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্পেসএক্স-এ দেয়া এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ থেকে আমরাও স্যাটালাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হলাম। প্রবেশ করলাম এক নতুন যুগে।  বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ করতে পারি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসি, প্রকল্প এবং স্যাটেলাইট কোম্পানির কর্মীদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি নির্মাতা ও উৎক্ষেপণকারী উভয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় মহাকাশে সফল উড্ডয়ন করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। বাংলাদেশ সময় গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে বঙ্গবন্ধু-১ এর সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়।

পুনর্নির্ধারিত সময়ে ফ্যালকন-৯ রকেটের নতুন সংস্করণ ব্লক ফাইভ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে নিয়ে রওনা হয় নিজস্ব কক্ষপথে। ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চপ্যাড ৩৯ এ থেকে মহাকাশের বুকে লাল সবুজের পদচিহ্ন আঁকে বঙ্গবন্ধু-১।

এই উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক হলো। মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সফল হওয়ায় দেশবাসী ও সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতায় এই স্যাটেলাইট নতুন মাইলফল বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হলো জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছুদিনের মধ্যেই দেশের মানুষ স্যাটেলাইটের সুফল পেতে শুরু করবে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আজ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যিনি দীর্ঘ ২৪ বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগ্রামে জেল-জুলম ও নির্যাতন সহ্য করে উপহার দিয়েছেন স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশকে। স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদকে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ উন্নত মর্যাদাশীল দেশ হিসেব বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি অনুধাবন করেছিলেন বহির্বিশ্বের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগ রক্ষা করতে না পারলে প্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এজন্য স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মধ্যে ১৯৭৪ সালে তিনি রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেন। যার সাহায্যে তথ্য-উপাত্ত আদান-প্রদানের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ তৈরি হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমরা জাতির পিতার সেই স্বপ্ন বাস্তাবায়নে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলাম নিজস্ব উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে। তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে আজ যুক্ত হচ্ছে স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ। আজ থেকে আমরা স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য। প্রবেশ করলাম এক নতুন যুগে। এ স্যাটেলাইট দিয়ে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তাজাকিস্তান, কাজাকিস্তান ও উজবেকিস্তানের অংশ বিশেষে আমরা সেবা দিতে পারব।’

‘ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন বিটিআরসির থেকে প্রকল্প গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসি ও স্যাটেলাইট কোম্পানির কর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি স্যাটেলাইট নির্মাতা ও উৎক্ষেপণকারী উভয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ জানাচ্ছি ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও জনগণকে এ কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য। পাশাপাশি ধন্যবাদ জানাই রাশিয়াকে, তাদের কক্ষপথ আমাদের ভাড়া দেয়ার জন্য।’

প্রধানমন্ত্রী সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করে আরও বলেন, ‘আপনারা সবাই দোয়া করবেন যাতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ করতে পারি। সবাইকে আবারও ধন্যবাদ জানিয়ে সফল উৎক্ষেপণ ঘোষণা করছি।’

প্রসঙ্গত, মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থান করবে কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। আর এটি কক্ষপথ থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও সার্কভুক্ত সব দেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তানসহ আশপাশের দেশ ফ্রিকোয়েন্সির আওতায় আসবে। টেলিভিশন ও বেতার সম্প্রচার, ইন্টারনেট সেবাদান, ভি-স্যাটসহ ৪০ ধরনের সেবা দেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।

দেশের বাইরে তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে স্যটেলাইটটি প্রাথমিকভাবে পরিচালনা করবে ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেস। তবে পরবর্তী সময় বাংলাদেশের গাজীপুরের জয়দেবপুর এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া থেকেই পরিচালিত হবে বঙ্গবন্ধু-স্যাটেলাইট-ওয়ান।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply