২৮ মার্চ ২০২৪ / ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ৮:০৮/ বৃহস্পতিবার
মার্চ ২৮, ২০২৪ ৮:০৮ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারে আনন্দ ভ্রমনে ‘শ্রীপুর অনলাইন প্রেসক্লাব’

     

 

এস এম জহিরুল ইসলাম, কক্সবাজার থেকে

বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন অর্থাৎ প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত। এই সৈকত কক্সবাজার শহর থেকে বদরমোকাম নামক জায়গা পর্যন্ত একটানা একশ বিশ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি দেশের সর্ববৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র।
ঢাকার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন একঝাঁক শ্রীপুর অনলাইন প্রেসক্লাবের সংবাদকর্মীরা। শ্রীপুর অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মোতাহার খান, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ১৪জন সংবাদকর্মী সমুদ্র নগরীতে সময় কাটাচ্ছেন। সংবাদকর্মী হিসেবে নয়, পর্যটক হয়ে আনন্দে মাতছে সমুদ্রের লোনাজলে। তারা কক্সবাজারের সব কিছু দেখে সন্তুষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে ট্যুরিস্ট পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

দিগন্তজোড়া বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা, মেঘ কালো সারি সারি ঝাউবন, সৈকতের বুকে আছড়ে পড়া একেকটি ঢেউ, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে জেলেদের কর্মচাঞ্চল্য, ভোরের আকাশে পূব পাহাড়ের পেছন থেকে কাঁসার থালার মতো বেরিয়ে আসা সূর্য, আবার সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের মায়াবী রূপ এই সমস্ত সৌন্দর্যের আয়োজন নিয়েই দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে রচিত হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। দেশের ভিতরে কোথাও ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে দেখা যায় প্রথমে অবশ্যই কক্সবাজারের নাম এসে যায়। কেবল মাত্র দেশীয় পর্যটকই নয়, বিদেশ থেকেও প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসে। দেখা যায় যথাযথ তথ্যের স্বল্পতা এবং সুন্দর একটি ভ্রমণ পরিকল্পনার অভাবে আমাদের অনেকেরই কক্সবাজার ভ্রমণ শতভাগ সার্থক হয়ে ওঠে না। সেই দিকটা ভেবে ঈদকে সামনে রেখে আমাদের এই পর্বে কিভাবে একটি সার্থক  কক্সবাজার ভ্রমণ করা যায় তার বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম শহর থেকে দক্ষিণে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫২ কিমি এবং ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ৪১৪ কিমি। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক এবং বিমানপথে কক্সবাজার যাওয়া। সৈকতের মেরিনড্রাইভ একটি অসাধারণ রাস্তা। এই রাস্তা ধরে যত দূরে যাবেন পুরো জায়গাই আপনাকে মুগ্ধ করবে। একপাশে পাহাড় আর একপাশে সমুদ্র দেখে হবেন বিমোহিত। কক্সবাজার গেলে একটিবার দর্শন দেবার জন্য যেসব দর্শনীয় স্থান আপনাকে হাতছানি দিবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে :

সুগন্ধা বীচে গাজীপুরের একঝাঁক কলম সৈনিক..

কলাতলী ও লাবনী সৈকত : জেলা শহর থেকে নিকটে হওয়ার কারণে কলাতলী এবং লাবনী সৈকত পর্যটকদের নিকট প্রধান আকর্ষণ বলে গণ্য হয়ে থাকে। সৈকতের এই দুইটি পয়েন্টের মাঝের দূরত্ব মাত্র পনের মিনিট। লাবণী পয়েন্টে পাওয়া যায় ঝিনুক মার্কেট এ ছাড়া ছোট-বড় অনেক দোকান যেখানে নানারকম জিনিসের পসরা সাজিয়েছে দোকানিরা পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করে। আর কলাতলী সৈকতে আছে বেশকিছু রেস্টুরেন্ট, যেখানে বসে এক মগ কফি পান করতে করতে মনোরম সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়।

হিমছড়ি

হিমছড়ি কক্সবাজারের ১৮ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। ভঙ্গুর পাহাড় আর ঝর্ণা এখানকার প্রধান আকর্ষণ। কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি যাওয়ার পথে বামদিকে সবুজঘেরা পাহাড় আর ডানদিকে সমুদ্রের নীল জলরাশি মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি করে। বর্ষার সময়ে হিমছড়ির ঝর্ণাকে অনেক বেশি জীবন্ত ও প্রাণবন্ত বলে মনে হয়। হিমছড়িতে পাহাড়ের চূড়ায় একটি রিসোর্ট আছে যেখান থেকে সাগরের দৃশ্য অপার্থিব মনে হয়। হিমছড়ির প্রধান আকর্ষণ এখানকার ক্রিসমাস ট্রি। সম্প্রতি হিমছড়িতে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র ও পিকনিক স্পট।

আনন্দের মুহুর্তে সংবাদকর্মীদের একাংশ

ইনানী সমুদ্র সৈকত

দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজারে সৈকত সংলগ্ন আরও অনেক দর্শনীয় এলাকা রয়েছে যা পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষণের বিষয়। সৈকত সংলগ্ন আকর্ষণীয় এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছ, ইনানী সমুদ্র সৈকত যা কক্সবাজার থেকে ৩৫ কি.মি দক্ষিণে অবস্থিত। অভাবনীয় সৌন্দর্যে ভরপুর এই সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজার থেকে রাস্তায় মাত্র আধঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। পরিষ্কার পানির জন্য জায়গাটি পর্যটকদের কাছে সমুদ্রস্নানের জন্য উৎকৃষ্ট বলে বিবেচিত।

হিমছড়িতে শ্রীপুর অনলাইন প্রেসক্লাবের সংবাদকর্মীরা..

কক্সবাজারে ইনানী সৈকতের কাছে প্যাঁচার দ্বীপ এলাকায় মারমেড ইকো রিসোর্ট ও বিচ রিসোর্টের ভাড়া ৭ হাজার থেকে ৮৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। রিসোর্টের মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, তাদের রিসোর্ট এখন প্রায় পূর্ণ। ভাড়া দেয়ার মতো খালি নেই। এ অবস্থা থাকবে অন্তত এক সপ্তাহ। ধারণা হোটেল ব্যবসায়ীদের।
ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন টুয়াকের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস.এম কিবরিয়া খান বলেন, কক্সবাজারের সামগ্রীক পরিবেশ ভাল। আইন শৃঙ্খলাও উন্নত হয়েছে। এর উপরে যোগ হয়েছে টানা ছুটি। কক্সবাজারের আগত পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছি।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রথমত কক্সবাজার যাওয়ার আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে যাওয়া। দ্বিতীয়ত, প্রতি বছর সমুদ্রের পানিতে গোসল করতে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটে মূলত সতর্কতা ও সচেতনতার অভাবে। লাবনী পয়েন্ট থেকে কলাতলী সৈকত পর্যন্ত বেশকিছু গুপ্ত খাল রয়েছে। অসাবধানতার কারণে বেশীর ভাগ পর্যটক ভাটার সময় নেমে এই খালে পরে প্রাণ হারায়। সুতরাং, ভাটার সময় সৈকতে গোসল করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। সেক্ষেত্রে  নিরাপত্তা চৌকির সংকেত অনুসরণ করে সৈকতে গোসলে নামলে বিপদ থেকে দূরে থাকা যায়। চৌকি থেকে ভাটা ও জোয়ারের সময় অনুযায়ি  লাল ও সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয়। সবুজ পতাকার সময় গোসল করা নিরাপদ। প্রয়োজনে সাথে লাইফ জ্যাকেট রাখা যেতে পারে। প্রবাল সাধারণত ধারাল হয়ে থাকে। সুতরাং, ইনানি ও সেন্টমার্টিনের সৈকতে প্রবালের ওপর হাঁটার সময় সাবধানে হাটতে হবে। সৈকতের পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে এবং জীববৈচিত্র্যকে নিরাপদ রাখার খাতিরে কোনো প্রকার আবর্জনা এবং অপচনশীল দ্রব্য যেমন, পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদি ফেলা থেকে বিরত থাকা প্রত্যেকের দায়িত্ব।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply