১৬ এপ্রিল ২০২৪ / ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৯:১৯/ মঙ্গলবার
এপ্রিল ১৬, ২০২৪ ৯:১৯ অপরাহ্ণ

আর কত রাজীবের প্রাণ দিতে হবে?

     

আজহার মাহমুদ
ঢাকা সরকারী তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবের পরপারে চলে যাওয়া নিয়ে অনেকেই লিখেছে। গত ১৭ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চিরতরে বিদায় নেয় এই কষ্টের ফেরীওয়ালা। গত ৩ এপ্রিল কাওরান বাজার মোড়ে বিআরটিসি বাসে দাড়ানো অবস্থায় বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য একটি গাড়ির প্রচন্ড চাপে রাজীবের ডান হাত কষে পড়ে তার শরীর থেকে। রাজীব সম্পর্কে এর চেয়ে আরো বেশী হয়তো অনেকেই জানে। কিন্তু আমাদের হয়তো জানা নেই প্রতিদিন এরকম কত রাজীব প্রাণ হারাচ্ছে এসব গাড়ী চালকের কারণে। এভাবে নিত্যনতুন আমাদের সামনে ঘটে যাচ্ছে সড়ক দূর্ঘটনার ভয়বহ চিত্র। আমরা রাজীবকে নিয়ে হয়তো পরে গবেষণা করতে পারবো, কিন্তু আর যেনো কোনো রাজীবের প্রাণ হারাতে না হয় সে ব্যপারে কিছু কর্মসূচী এবং পদক্ষেপ এখনি নিতে হবে আমাদের। আজ রাজীবকে নিয়ে কিছু বলে সমবেদনা জানিয়ে শেষ করে দিলে হবে না। এভাবে  যদি শেষ করে দিতে থাকি তবে কাল হয়তো আমাকে নিয়েও এভাবে লিখতে হবে কারো না কারো। এভাবে আর কতো সমবেদনা আর শোকহত হবো। আর কত পরিবার নিশ্ব হবে। তাই আমাদের যেতে হবে এর মূলে। আসল কথা হচ্ছে সড়ক দূর্ঘটনা রোধ করা। আর এর জন্য সর্ব প্রথম ঠিক হতে হবে গাড়ির ড্রাইভারদের। ড্রাইভারদের খামখেয়ালী গাড়ি চালানোই হচ্ছে সড়ক দূর্ঘটনার প্রথম কারণ। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে একটি গাড়ির সাথে অন্য একটি গাড়ির প্রতিযোগীতা মূলক গাড়ি চালানো। কীভাবে কার আগে কে ষ্টেশনে পৌঁছাবে সেটাই থাকে ড্রাইভারদের মাথায়। এছাড়াও আরো নানান কারণ রয়েছে যা আমাদের সকলেরই কম বেশী জানা রয়েছে। মোবাইলে কথা বলে গাড়ী চালানো, নেশা যাতীয় দ্রব্য খেয়ে করে গাড়ী চালানো, অনভিজ্ঞ এবং অল্প বয়স্ক ড্রাইভার দিয়ে গাড়ি চালানো, রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করা সহ আরো নানান কারণ রয়েছে। এসকল কারণে সড়ক দূর্ঘটনা হয়ে থাকে বর্তমানে। এসকল দূর্ঘটনা কিন্তু আসলেই দূর্ঘটনা নয়। এগুলো আমরা জেনেশুনেই করে থাকি। যে গাড়ি চালাবে তার অবশ্যই জানা থাকবে কিভাবে গাড়ি চালালে দূর্ঘটনা হবে না। কিন্তু এরা জেনেশুনেই এসব করছে। তাই এগুলোকে নিছক দূর্ঘটনা বলাটাও ভুল হবে। কিছু কিছু গাড়ির ড্রাইভার রয়েছে যারা লাগামহীন গাড়ির গতি দিয়ে ডানে বামে না দেখে গাড়ি চালায়। কিন্তু এসব অপরাধের বিরোদ্ধে আমাদের কোনো সোচ্চার নেই। নেই কোনো আন্দোলন। নিরাপদ সড়কের আন্দোলন করা তো অন্যায় কিছু নয়। রাস্তায় ট্রাপিক থাকা সত্বেও এসকল গাড়ির ড্রাইভারগন আইনকে কোনো তোয়াক্কাও করে না। ট্রাপিক ব্যবস্থার এমন বেহাল অবস্থাও আমাদের কাছে নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে অবাক লাগে একটি উন্নয়নশীল দেশের এমন অবস্থা দেখে। এই বুঝি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার রুপ, যে দেশে ট্রাপিক আইনের নেই কোনো নিয়ম আর শৃংখলা। দেশ আধুনিক হলেও এই সেক্টর এখনো পরে আছে এক যুগ পেছনে। এই সেক্টরের নেই কোনো দায়িত্ব এবং কর্তব্য। যদি দায়িত্ব থাকতো তবে এভাবে প্রতিদিন সড়ক দূর্ঘটনা ঘটতো না। দূর্ঘটনা প্রতিদিন ঘটে না। দূর্ঘটনা হয় হঠাৎ। কিন্তু এখন আমাদের দেশে প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে সড়ক দূর্ঘটনা হচ্ছেই। তাই সচেতন হতে হবে জনগনকে। জনগন পারে এই অনিয়মকে নিয়মে আনতে। এসকল দূর্ঘটনার নামে মৃত্যুর মিছিল থামাতে হবে জনসচেতনতার মাধ্যমে। চাই শুধু সচেতনতা। জনসচেতনতাই পারে সকল সমস্যার সমাধান দিতে। গাড়ির ড্রাইভার বেপরোয়া গাড়ি চালালে সর্বপ্রথমে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। অল্প বয়স্ক ড্রাইভারের গাড়ি আমাদের বর্জন করতে হবে। অন্য গাড়ির সাথে প্রতিযোগিতা মূলক গাড়ি চালালে আমাদের থামাতে হবে এই মরণ খেলা্র প্রতিযোগিতা। প্রয়োজনে আইনের সহয়তা নিতে হবে আমাদের। সরকারের কাছে দাবী এই সড়ক দূর্ঘটনা রোধে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এই সড়ক দূর্ঘটনার প্রভাব অনেকটাই বেশী। তাই এই দূর্ঘটনা রোধ করা সরকারের জন্য বড় একটি চ্যলেন্জ হিসেবে কাজ করবে। পরিশেষে বলতে চাই, সড়কে যেনো আর কোনো রাজীবের প্রাণ দিতে না হয় সেই ব্যবস্থা বাস্তবায়ন হোক বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply