২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১০:১৫/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ১০:১৫ অপরাহ্ণ

চার চিকিৎসকের রক্তে বাঁচল প্রসূতি মায়ের প্রাণ

     

 

বারী উদ্দিন আহমেদ বাবর
গ্রামের অপ্রশিক্ষিত দাইয়ের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসবের পর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে গিয়েছিলেন লহ্মীপুরের রামগঞ্জের শিরিন আক্তার। প্রসবকালে ওই দাই শিরিনের শরীরে অক্সিটোসিন স্যালাইন (ডেলিভারি করানোর ওষুধ) দিয়েছিলেন। কিন্তু ডেলিভারির পর শুরু হয় প্রচুর রক্তক্ষরণ। অবস্থার অবনতি হলে তাকে লক্ষীপুরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে ডাক্তাররা পরীক্ষা করে দেখেন, এবড়ো-থেবড়োভাবে ছিড়ে গেছে রোগীর জরায়ুপথ। ডেলিভারির সময় সেলাই করা হয়েছে সেই ক্ষতস্থান। এতে রোগীর জীবন আরো সংকটময় হয়ে উঠে। শেষ ভরসা হিসেবে শিরিনা আক্তারকে আনা হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চার চিকিৎসকের দেওয়া রক্তে এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ফিরে আসেন প্রসূতি মা শিরিন আক্তার।
শনিবার রাতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকার জানান, শিরিন আক্তারের অবস্থা এখন আশঙ্কাকামুক্ত। তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে গাইনি বিভাগ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ১৭ এপ্রিল লহ্মীপুরের রামগঞ্জের ছাদিকুল ইসলামের স্ত্রী শিরিনা আক্তারকে কুমেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করা হয়। এর আগের দিন অপ্রশিক্ষিত এক দাইয়ের মাধ্যমে তার একটি পুত্র সন্তান প্রসব হয়। প্রসবের সময় অক্সিটোসিন স্যালাইন প্রয়োগ করা হয় বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু ডেলিভারির পর শিরিনা আক্তারের প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয় বিকেল সাড়ে ৪টায়। এত রক্তক্ষণের পরও ওই সময় পর্যন্ত রোগীকে রক্ত দেওয়া হয়নি। সেসময়ে তার চার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন পড়ে। রক্তের অভাবে রোগীর অবস্থার আরো অবনতি ঘটতে থাকে। গায়ের বর্ণ ফ্যাকাশে হয়ে যায়, শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। এই অবস্থায় রক্ত ছাড়া রোগীর জীবন বাঁচানো প্রায় অসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ডা. করুনা রানী কর্মকার আরো বলেন, এরই মধ্যে গাইনি ওয়ার্ডের ডাক্তাররা রোগীকে পরীক্ষা করে দেখেন, জরায়ু ফেটে পেটের ভেতরে রক্তক্ষরণ চলছে। তাৎক্ষণিক গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আমার সাথে পরামর্শ করে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এ সময় অপারেশন ছাড়া রোগীকে বাঁচানোর ভিন্ন কোনো উপায় ছিল না। তাৎক্ষণিকভাবে অপারেশন করেন গাইনি ইউনিট-১ এর কর্তব্যরত ডাক্তার ডা. নাসরিন আকতার পপি, ডা. জানিবুল হক, ডা. আয়েশা, ডা. ফারহানা। আর ওই রোগীর জন্য ৪ ব্যাগ রক্ত দরকার হলে ইন্টার্ন ডাক্তার আদনান চৌধুরী, আয়েশা, ফারহানা, নওশিন রক্ত দিয়ে রোগীর জীবন বাঁচাতে সহায়তা করেন।
রোগীর স্বামী ছাদিকুল ইসলাম জানান, ডাক্তাররা রক্ত দেয়ার পাশাপাশি হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান করুনা রানী কর্মকার এবং অন্যান্য ডাক্তাররা আন্তরিকতার সাথে আমার মৃত্যু পথযাত্রী স্ত্রীকে চিকিৎসা না দিলে হয়তো তাকে বাঁচানো যেতো না।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply