২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৫:৪৭/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৫:৪৭ অপরাহ্ণ

পলাতক আব্দুস সালামকে গ্রেফতারের দাবী

     

অবশেষে একুশে টিভির সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহনক্রমে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেছেন সিলেটের আমল গ্রহনকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। সম্প্রতি সিলেট কোতয়ালী থানা পুলিশ প্রশাসন জালিয়াতি প্রতারনার মামলার একমাত্র আসামী সালামের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জসীট) দাখিল করলে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রটি গ্রহনের পর আদালত উক্ত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন। গত ১৭/১০/২০১৭ইং তারিখে বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৪০৬/৪২০/৫০৬ ধারায় সিলেট কোতয়ালী থানায় প্রতারক সালামের বিরুদ্ধে মামলা নং ২৫ (জিআর ৩৯১/২০১৭) দায়ের করেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ মাহবুবুল হক শেরিন। মামলাটি সিলেট কোতয়ালী থানার সাব ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) শেখ মোঃ ইয়াছিন ভূইয়া  এর কাছে দীর্ঘদিন তদন্তাধীন ছিল। তদন্তের পর তদন্ত কর্মকর্তা গত ৩১/১/২০১৮ইং তারিখে ২৯/২০১৭নং (চার্জসীট) অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন,আব্দুস সালাম একজন প্রতারক প্রকৃতির লোক। বিভিন্ন লোকজনের নিকট হতে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে টাকা পয়সা গ্রহনপূর্বক আত্মসাৎ করাই তার একমাত্র পেশা। তার বিরুদ্ধে দিরাই থানার মামলা নং ৩ (জিআর ৮৭/২০১৬) তাং ২/৬/২০১৬ইং ধারা ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/১১৪ পেনাল কোড, দিরাই থানার মামলা নং ১০ (জিআর ১১০/২০০৯) তাং ১৪/৯/২০০৯ইং ধারা ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/১১৪ পেনাল কোড, দিরাই থানার মামলা নং ৭ (জিআর-৬৮/২০০৬) তাং ২৭/৮/২০০৬ইং ধারা ১৪৩/৩২৩/৪৩৬/৪২৭/৩৪ পেনাল কোড রয়েছে। মামলার বাদী মোঃ মাহবুবুল হক শেরিন একজন লন্ডন প্রবাসী। তিনি লন্ডন অবস্থানসহ সিলেট শহরের আম্বরখানাস্থ আবাসন এসোসিয়েশন প্রাইভেট লিঃ ও ঠিকানা এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লি: কোম্পানীদ্বয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। উক্ত আবাসন ও বাদীর সহায় সম্পত্তি নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টসহ বিভিন্ন আদালতে কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মামলাগুলো হচ্ছে সিপি মোকদ্দমা নং ৬৬/২০০৬,সিভিল পিটিশন ৫৩/২০১২। সালাম নিজেকে হাইকোর্ট বিভাগের মোহরার পরিচয় দিয়ে তথায় বিভিন্ন আইনজীবিদের সাথে তার পরিচয় আছে বলে বাদীর সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। গত ১/১০/২০১৪ইং বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রতারক সালাম সিলেট আদালতের ক্যান্টিনে বসে বাদীর কাগজপত্রসহ মামলা মোকদ্দমার ফাইলপত্র নিজের হেফাজতে নেয় এবং নগদ ৫ হাজার টাকা গ্রহন করে। দ্বিতীয় দফায় গত ২১/১০/২০১৪ইং উক্ত আব্দুস সালাম,ঢাকা হতে বিজ্ঞ আইনজীবির সাথে পরামর্শ করে সিলেট জজকোর্টে এসেছে মর্মে বাদীকে জানালে এবং বাদীর প্রতিকূলে পরিচালিত দায়রা ১৪৫৭/২০১৩ ও দায়রা ২৮১৮/২০১৩ নং মামলার বিপরীতে বাদীর পক্ষে হাইকোর্টে কোয়াস ও রায় করিয়ে দেবে মর্মে প্রতিশ্রুতি দেয়। মোহরার পরিচয়ধারী প্রতারক সালামের কথায় সন্তুষ্ট হয়ে কয়েকটি আমোক্তারনামা,ওকালতনামায় স্বাক্ষর দেয়ার পাশাপাশি প্রতারকের হাতে নিজের ছবিসহ নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন বাদী মোঃ মাহবুবুল হক শেরিন। এই ঘটনার পর প্রতারক সালাম বাদীর কাছে মহামান্য হাইকোর্টে বাদীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করিতেছে মর্মে বিভিন্ন কাগজপত্র প্রেরণ করে বিশ্বাস স্থাপন করত: জোর তাগিদ দিয়ে দফায় দফায় বাদীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারক সালাম গত ৯/১১/২০১৪ইং তারিখে বাদীর পরিচালিত সাউথ ইস্ট বন্দর বাজার শাখার হিসাব হতে ৯৫,০০০ টাকা,১৬/১১/২০১৪ইং ৬,০০,০০০  টাকা,২১/১০/২০১৪ইং তারিখে ৫০,০০০ টাকা,২৮/১০/২০১৪ইং তারিখে ১,৫০,০০০ টাকা, ১১/১১/২০১৪ইং তারিখে ১,০০,০০০ টাকা, ১৭/১১/২০১৪ইং তারিখে ২,০০,০০০ টাকা, ২৫/১১/২০১৪ইং তারিখে ১,৫০,০০০ টাকা, ১৯/১১/২০১৪ইং তারিখে ১,৫০,০০০ টাকা, ২৬/১১/২০১৪ইং তারিখে ১,৩০,০০০ টাকা, ৮/১২/২০১৪ইং তারিখে ১,০০,০০০ টাকা, ১৫/১২/২০১৪ইং তারিখে ২,০০,০০০ টাকা, ১৭/১২/২০১৪ইং তারিখে ১,০০,০০০ টাকা, ৩/১/২০১৫ইং তারিখে ২,৫০,০০০ টাকা গ্রহন করে। বাদীর চাচাতো ভাই,মুহিতুর রহমানের ডাচবাংলা ব্যাংক লিঃ এ থাকা ২০৪১০১৫৩৭৮২ নং হিসাব হতে ৩/১১/২০১৫ইং তারিখে ৫০,০০০ টাকা,এস.এ পরিবহনের মাধ্যমে গত ১০/১১/২০১৫ইং তারিখে ৫০,০০০ টাকা, ২৯/১১/২০১৫ইং তারিখে ২০,০০০ টাকা, ২/২/২০১৬ইং তারিখে ২০,০০০ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক সালাম। এছাড়াও বাদীর আত্মীয় মোক্তাদির আহমদের কাছ থেকে ১/৫/২০১৫ইং তারিখে ১০০,০০০ টাকা, ৯/৫/২০১৫ইং তারিখে ৩,৫০,০০০ টাকা হাতিয়ে নেয়। অত:পর বাদী অনুসন্ধান করে জানতে পারেন প্রতারক সালামকে দায়িত্বসহ মোটা অঙ্কের টাকা দেয়ার পরও দুটি দায়রা মামলার রায় বাদীর বিপক্ষে চলে যায়। অন্যদিকে প্রতারক সালাম বাদী মাহবুবুল হক শেরিন,তার চাচাতো ভাই মুহিতুর রহমান ও আত্মীয় মোক্তাদির আহমদের কাছ থেকে প্রতারনামূলকভাবে আত্মসাৎ করে নেয় মোট ৩২,০৫,০০০ টাকা। ২৫/৯/২০১৭ইং বাদী প্রতারক সালামকে সিলেটের বন্দর বাজারে পেয়ে তার টাকা ফেরত চাইলে সে নিজেকে একুশে টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি,র‌্যাব ও পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে টাকা ফেরত চাইলে খুন করার হুমকী দেয়। নিরুপায় হয়ে বাদী থানায় মামলা দায়ের করলে প্রতারক সালাম কয়েকজন সাংবাদিক দালাল ও একজন গডফাদারকে দিয়ে বাদী আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ মাহবুবুল হক শেরিনকে খুন করার হুমকী দেয়। হুমকীর অংশ হিসেবে সুনামগঞ্জ শহরে কয়েকজন ভাড়াটে লোক দিয়ে মানববন্ধন করত: বাদীর বিরুদ্ধে বিষোদঘারসহ অপপ্রচার চালায়।
জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ মাহবুবুল হক শেরিন এর দায়েরকৃত মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে সিলেট কোতয়ালী থানার সাব ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) শেখ মোঃ ইয়াছিন ভূইয়া দীর্ঘ অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করেন,আমার তদন্তকালে,প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণে,জব্দকৃত আলামত পর্যালোচনায় এবং ঘটনার পারিপাশির্^কতায় প্রমাণিত হয়েছে আসামী সালাম বাদীর নিকট হতে দায়রা ১৪৫৭/২০১৩ ও ২৮১৮/২০১৩ নং মামলা পরিচালনাসহ ইহার রায় বাদীর পক্ষে আনিয়া দিবে মর্মে আশ^স্থ করে বিভিন্ন সময়ে বাদীর নিকট হতে ৩২,০৫,০০০ টাকা নিয়া বাদীর বর্ণিত মামলা পরিচালনা না করিয়া প্রতারনামূলকভাবে বিশ^াসভঙ্গ করত: উক্ত টাকা আত্মসাৎ এর মাধ্যমে বিশেষ ফায়দা হাছিলের পাশাপাশি বাদীকে প্রাণনাশের ভয়ভীতি ও হুমকী ধমকি প্রদর্শন করে যাচ্ছে। এজাহারনামীয় আসামী আব্দুস সালাম পিতা মোঃ ইরশাদ আলী,সাং হাতিয়া সুরিয়ারপাড়,ধীতপুর থানা দিরাই,জেলা সুনামগঞ্জ এর বিরুদ্ধে দন্ডবিধি আইনের ৪০৬/৪২০/৫০৬ ধারার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য বলিয়া প্রমাণিত হওয়ায় আসামী সালামের বিরুদ্ধে সিলেট কোতয়ালী মডেল থানার অভিযোগপত্র নং ২৯ তাং ৩১/১/২০১৮ইং বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করিলাম। বিশ^স্থ সূত্রে জানা যায়,মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট করানোর জন্য সুনামগঞ্জের এক টিভি সাংবাদিকের মাধ্যমে প্রতারক সালাম তদন্ত কর্মকর্তাকে নগদ ৫ লক্ষ টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সিলেটের ওসি গৌছুল হোসেন ও এসআই শেখ ইয়াসিন ভূইয়া বাদীর অপূরণীয় ক্ষতির বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় এনে সাংবাদিক জানার পরও সৎ সাহসিকতা সহকারে লোভ লালসার উর্ধে উঠে দীর্ঘ সময় নিয়ে মামলাটির তদন্তের পর সত্য অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন। সিলেট সদর কোর্টের জিআরও এসআই নিহার রঞ্জন দাস বলেন,আসামী সালাম দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেছেন। ওয়ারেন্টের কপি সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে প্রতারক সালাম জামিন পেয়েছে বলে পুলিশ প্রশাসনকে ধোকা দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সে যদি ঐ মামলায় জামিন পেত তাহলে সিলেটের আদালতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী হলো কেমনে। প্রতারিত বাদী আওয়ামীলীগ নেতা মাহবুবুল হক শেরিন অবিলম্বে প্রতারক আব্দুস সালামকে গ্রেফতারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply