২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১:৩৯/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ১:৩৯ অপরাহ্ণ

রামগঞ্জে বিধি লঙ্গন করে ২৩টি ফসলি জমিতে ইটভাটা

     

রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
রামগঞ্জ পৌরসভার মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনেসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমিতে ২৩টি ইটভাটায় সরকারী বিধি লঙ্গন ও প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ইট পোড়ানোর ধূম পড়েছে। এ যেন দেখার কেউ নেই।
সরজমিনে গিয়ে দেখা ও জানা গেছে, রামগঞ্জ পৌরসভার মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে মেসার্স পাটওয়ারী (এমপিবি) ব্রিকর্স মালিক কয়েক বছর যাবৎ সরকারী বিধি লঙ্গন করে বীরদর্পে ইট পোড়ানোর মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। এ ইট ভাটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পড়া লেখা মারাত্বক ব্যাঘাত ঘটছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছে। ইট ভাটার কালো ধুয়া ও উত্তাপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় একাধিক বার সচিত্র প্রতিবেদন সংবাদ প্রকাশ করলেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ও স্থানীয় জেলা-উপজেলা প্রসাশন রহস্যজনক ভাবে নিরব ভুমিকা পালন করে আসছে।
পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি কৃষি জমিতে ২৫টি ইটভাটার মালিকরা সরকারী বিধি লঙ্গন করে ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ, টায়ার, তেলের গাদ, বোতামের গুড়া, রাসায়নিক বর্জ্য ও ফ্যালাস্টিক দিয়ে ইট পোড়াচ্ছে। কয়েকটি ভাটায় ১০থেকে ১২ বছরের শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূন্য কাজ করাচ্ছে। প্রতিটি ইটভাটা লক্ষ লক্ষ ঘনফুট টপ সয়েলের স্তুব দেখা গেছে। যা বিভিন্ন আবাদি জমিন থেকে বড় চাকার ট্রলি দিয়ে মাটি সংগ্রহ করে। বড় চাকার ট্রলি দিয়ে মাটি বহন করায় কাঁচা-পাকা রাস্তাগুলো প্রায় স্থানে বিশাল গর্ত হয়ে চলাচলের প্রতিবন্ধাকতার সৃষ্টি করছে। ইটভাটার পাশে বসবাসকারীরা জানান,ইট পোড়ানোর সময় দুর্গন্ধ ও বাতাসে ধূলো কণা ছড়ানোর ফলে বিভিন্ন রোগে লোকজন আক্রান্ত হচ্ছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী বছরে একাধিক কৃষিপণ্য উৎপাদন হয় এমন জমি, বন বিভাগের ২ কিলোমিটার দূরত্বের ভেতরে, গ্রামীণ সড়কের অর্ধ কি.মি. দূরত্বের ভেতরে ও আবাসিক এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না বলে আইন থাকলেও এ উপজেলায় আইনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সবই চলছে। উপজেলার নাগ রাজারামপুর গ্রামের কেথুড়ী বাজার এলাকায় ইট ভাটার সভাপতির হাজী মো. সানাউল্যা পাটওয়ারীর, মেসার্স ছানা উল্যা ব্রিক্স ম্যানুফ্যাকচার, উত্তর শৈরশৈই গ্রামের মেসার্স মোরশেদ ব্রিক্স, মেঘনা ব্রিকর্স এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং, সুধারাম এবিএম ব্রিকর্স, আকারতমা ফাহাদ ব্রিক্স ম্যানুফ্যাকচার, এসবিএম ব্রিকর্স, এফবিএম ব্রিকর্স, কাটাখালী এইচটিসি ব্রিকর্স, ভাটরা রামসিং পুর এমএসবি ব্রিকর্স, লক্ষীধর পাড়া মোতালেব ব্রিকর্স, হাজীরপাড়া এমডিএ ব্রিকর্স,দেহলা মদিনা ব্রিকর্স, জে বি এম ব্রিকর্স,আজিমপুর পাটওয়ারী ব্রিকর্সসহ উপজেলায় ২৫টি ইট ভাটা রয়েছে ।
অভিযোগ উঠেছে, এসব ইট ভাটার মালিক সেন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্রেতাদেরকে কাছে উচ্চ মূল্যে ইট বিক্রি করছে। বিগত বছরের চেয়ে চলতি বছর প্রতি হাজার ইটের দাম ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। গত বছর ইটভাটা গুলো প্রতি হাজার ইটের দাম ৫ হাজার টাকা এবং কংক্রিট সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এবার বছরের শুরুতে প্রতি হাজার ইটের দাম নেয়া হচ্ছে ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৮হাজার টাকা এবং কংক্রিট ৯ হাজার থেকে সাড়ে ৯হাজার টাকা। এ অতিরিক্ত অর্থ আদায় ছাড়াও ভাটা মালিকরা বছরের পর বছর ছোট আকারের ইট তৈরি করে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন। নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ইট তৈরির জন্য বিএসটিআই নির্ধারিত নিয়মে প্রতিটি ইটের দৈর্ঘ্য ২৪ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ১১.৫০ সেন্টিমিটার ও উচ্চতা ৭ সেন্টিমিটার থাকার কথা। অথচ রামগঞ্জের বিভিন্ন ইট ভাটায় ইটের সাইজ বিভিন্ন রকমের। এ ইট বাড়ানো ও সাইজে ছোট ইট তৈরির ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই। এ কারণে দুই দিক দিয়ে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা। এসব অনিয়মের পরেও রামগঞ্জে ইট ভাটা গুলোতে নেই কোনো মনিটরিং সেল। ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে প্রশাসনের তৎপরতা না থাকা উপজেলাবাসী হতাশ হয়ে পড়েছে ।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply