২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৫:৩৬/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৫:৩৬ অপরাহ্ণ

গাইবান্ধায় প্রচারণা তুঙ্গে লড়াই লাঙ্গল নৌকায়

     

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি

১৩ মার্চ গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ উপ-নির্বাচন। উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামীলীগ এবং পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন জাতীয় পার্টি। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতা কর্মীরা উপ-নিবাচনকে ঘিরে দলীয় ও সামাজিক নানা কর্মসূচি থেকে নৌকা এবং লাঙ্গল মার্কার প্রচার প্রচারণায় মেতে উঠেছেন। উপ-নির্বাচন নিয়ে এখানকার রাজনীতির মাঠ এখন সরগরম। উপ-নির্বাচনে এই আসনে মূলত: আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যেই ভোট যুদ্ধ সীমাবদ্ধ থাকবে বলে রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের ধারণা। রাতের ঘুমকে হারাম করে উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে চলছেন প্রার্থীরা। পথসভাসহ ভোটারেরদের দ্বারে-দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। প্রচারণা তুঙ্গে উঠছে। চারজন প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও আ’লী প্রার্থী আফরুজা বারীর পদচারনা গোটা উপজেলাকে সজাগ করে তুলেছে। উভয় প্রার্থী এলাকার রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, নদী ভাঙ্গণ রোধ, বেকারত্ব দুরিকরনসহ বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে যাচ্ছেন। সাধরণ ভোটারদের দাবি লড়াই হবে লাঙ্গল ও নৌকার মধ্যে। তবে এখন পর্যন্ত লাঙ্গল এগিয়ে রয়েছে। আবার অনেক ভোটার সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শংকায় রয়েছে। অপর দুই প্রার্থী এনপিপির জিয়া জামান খান এবং গণফ্রন্টের শরিফুল ইসলামকে এখন পর্যন্ত মাঠে দেখা য়ায়নি এমনকি তাদের পোষ্টার পর্যন্ত দেখা যায়নি।
সুন্দরগঞ্জকে গৌরবের ধারাবাহিকতায় ফেরাতে ভূমিকা রাখতে চান তরুণ আইনজীবি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। দলীয় ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে গিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে শিক্ষা, স্বাস্থসেবা, ক্রীড়া’র উন্নয়ন ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির ব্যাপারেই তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা, ভোট প্রর্থানা ও সমর্থন প্রত্যাশা করছেন । অসুন্দরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে সুন্দরগঞ্জ- তাঁর এই ব্যতিক্রমি শ্লোগান সকলের ভাল লাগার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তিনি নির্বাচিত হলে সকলকে সাথে নিয়ে আলোকিত সুন্দরগঞ্জ গড়বেন।
স্বাধীনতার পর পাঁচবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৭ সালে শামীম হায়দার এরশাদের উপদেষ্টা হিসেবে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হন। ২০১৩ সালে দলের মনোনয়ন পেলেও দলের নির্দেশে প্রত্যাহার করে নেন। বিরোধী দল জাতীয় পাটির প্রার্থী হিসেবে ২০১৭ সালের ২২ মার্চ উপ-নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পান ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চেয়ারম্যান, জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আইন ও বিচার বিষয়ক উপদেষ্টা এবং উপজেলা জাপা সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি প্রায় ৬২ হাজার ভোট পান তিনি। ব্যারিস্টার শামীম বলেন, গত উপ-নির্বাচনটি ছিল একটি প্রশ্নবিদ্ধ নিবার্চন। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাঁর বিজয় নিশ্চিত ছিল। কারণ এই অঞ্চলটি জাতীয় পার্টির দূর্গ হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, সাংগঠনিকভাবে জাতীয় পার্টি এখন অনেক এগিয়ে।
২০০৭ সাল থেকেই সুন্দরগঞ্জে জাতীয় পার্টিকে সংগঠিত করে দল পরিচালনা করে আসছেন এই আইনজীবী ও শিক্ষানুরাগী। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টকশোগুলোতে জাতীয় পার্টির মুখপাত্র হিসেবে তারঁ যুক্তিনির্ভর ও তথ্যবহুল বক্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ব্যারিস্টার শামীমের বক্তব্য দলমত নির্বশেষে সকলের কাছে তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। পাশাপাশি নানামুখী সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তাকে ভিন্ন পরিচয়ে চিহ্নিত করেছে- যার প্রভাব আগামী উপ-নির্বাচনে পড়বে।
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ১৯৮১ সালে সুন্দরগঞ্জে উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মনিরাম ফলগাছা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা সুন্দরগঞ্জের কৃতি সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির প্রতিষ্ঠা মরহুম ড.এবিএম মুফিজুল ইসলাম পাটোয়ারী। মা এ্যাডভোকেট মরহুম রোকেয়া বেগম। শামীম ১৯৯৬ সালে ঢাকা উদয়ন বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০৯৮ সালে নটেরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ২০০২ সালে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি থেকে এলএলবি আর্নাস ডিগ্রী অর্জন করে। এরপর ইংল্যান্ডে চলে যান। মাত্র ২৪ বছর বয়সে ইউনির্ভাসিটি অব লন্ডন থেকে ২০০৫ সালে বার এ্যাটল ডিগ্রী অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন। এখন তিনি তিনি সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে কর্মরত। পারিবারিক ভাবে ঢাকা, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধায় শামীম হায়দার পাটোয়ারীর রয়েছে ৩০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেগুলো শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করছে।
ব্যারিস্টার পাটোয়ারী বলেন, বিভিন্ন অসুন্দর এবং সমালোচিত ঘটনার কারণে ৫০ বছর পিছিয়ে গেছে সুন্দরগঞ্জ। সেই সুন্দরগঞ্জকে আলোকিত করে গড়ে তুলতে প্রয়োজন তরুণ নেতৃত্বের। তিনি বলেন, অহেতুক প্রতিশ্রুতির ফুলঝড়ি নয়। আমি নির্বাচিত হলে সুন্দরগঞ্জে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, চরাঞ্চরে স্যাটেলাইট ক্লিনিক এবং আইটি ভিলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেব। ভাঙ্গণ প্রতিরোধে নদী শাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে তরুণদের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত উপ-নির্বাচনের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আসন্ন উপ-নির্বাচনে কাজ করতে চান ব্যারিষ্টার শামীম। জয়ের ব্যাপারে তিনি এবারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, তিস্তা পাড়ের এই জনপদের সাধারণ মানুষের ভালবাসা তার সব শক্তির উৎস। আজীবন তাদের পাশে থাকতে চান।
স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিকে দমিয়ে সুন্দরগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতিকে শক্তহাতে ধরে রেখেছিলেন প্রয়াত সাংসদ লিটন। লিটন নিহত হওয়ার ওই পরিবার থেকে হাল ধরতে চান তাঁর বড় বোন আফরোজা বারী। চলতি বছরের ২২ মার্চের উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে ছিলেন তিনি। পারিবারিকভাবে লিটনের বোন আফরোজা বারী একজন আওয়ামীলীগ কর্মী। তিনি এলাকার উন্নয়নে এবং ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজ এবং স্বপ্ন পুরনে করতে চান । ২০১৬ সালে তার ছোট ভাই এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে হত্যার পর আ’লীগের রাজনীতিতে তিনি ভূমিকা পালন করে আসছেন। আনন্দ বিল্ডার্স লিমিটেড, আনন্দ শিপইয়ার্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেড ও জেরিনা কম্পোজিট টেক্সটাইল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডসহ ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তার। ২০১৭ সালের ২২ মার্চের সংসদ উপ-নির্বাচনে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন আফরোজা বারী। তিনি বলেন আমার পিতৃ পরিবার আ’লীগ পরিবার। ছোট ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের হাল ধরে দলকে সু-সংগঠিত করেছেন। তিনি আরো বলেন ছোট ভাই এমপি লিটনের মৃত্যুর পর আমি আ’লীগের হাল ধরে এলাকার উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের উন্নয়ন ঘটাতে চাই। জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
একটি পৌরসভা ও ১৫ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ২৯ গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসন। এর মধ্যে ৭টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে তিস্তা নদী বহমান। এই আসনটিতে রয়েছে দু’টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুল, দু’টি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, একটি থানা ও একটি নবঘোষিত সরকারী ডিগ্রী কলেজের পাশাপাশি রয়েছে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দু’টি রেল স্টেশন। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সরকার দলীয় প্রয়াত এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন নিহত হওয়ার পর ২০১৭ সালের ২২ মার্চ উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপ-নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহমেদ জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় গোলাম মোস্তফা আহমেদ মৃত্যুবরণ করলে আসনটি ফের শুন্য হয়।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply