২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৭:৪১/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৭:৪১ অপরাহ্ণ

সপ্তগঙ্গার তীরে সুনামগঞ্জে দু’আধ্যাত্বিক মহাসাধকের লাখো লাখো ভক্তদের মিলনমেলা কাল শুরু

     

হাবিব সরোয়ার আজাদ
ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের সীমান্তঘেষা জাদুকাঁটা নদীর সপ্তগঙ্গার তীরে সুনামগঞ্জে দু’আধ্যাত্বিক মহা সাধকের লাখো লাখো ভক্তের তিনদিন ব্যাপী মিলনমেলা (আজ) শনিবার (আজ) থেকে শুরু হচ্ছে।’
জানা গেছে, সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ.) ’র ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সঙ্গী হযরত শাহ আরেফিন (রহ.)’র তাহিরপুরের লাউড়েরগড় সীমান্তের আস্থানায় প্রতি বছরের ন্যায় ১১ চৈত্র ১৪২৩ বাংলা ,২৫ মার্চ ২০১৭ বাদ আছর ওলি আউলিয়াদের জীবন দর্শনের উপর আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে বার্ষিক তিন ব্যাপী ওরস মোবারক আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হবে। ওরস চলবে ১১,১২,১৩ চৈত্র -২৫, ২৬ ও ২৭ মার্চ সোমবার ফজর পর্য্যন্ত।
অপরদিকে প্রাচীন লাউড় রাজ্যের হাবেলীর দেওয়ান রাজা ওরফে বিজয় সিংহের রাজদরবারের পুরোহিত শ্রী অদ্বৈত্য আচার্য মহাপ্রভুর নবগ্রাাম খ্যাত রাজাগাঁওস্থ আঁখড়া বাড়ির সংলগ্ন সীমান্তনদী ২৩ কি.মি দৈর্ঘের জাদুকাঁটা পণতীর্থের দু’তীরে ১১ চৈত্র -২৫ মার্চ শনিবার থেকে তিন দিন ব্যাপী মহাবারুণী মেলাও শুরু হচ্ছে। বারুণী মেলা চলবে ১১,১২,১৩ চৈত্র- ২৫, ২৬ ,২৭ মার্চ এবং ২৭ মার্চ ভোর বেলা মঙ্গল আরতির মাধ্যমে বারুণী মেলার সমাপ্ত হবে।
এদিকে দু’ধর্মের দু’আধ্যাত্বিক মহাসাধকের ভক্তবৃন্ধের মিলনমেলাকে কেন্দ্র করে সিলেট বিভাগের সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ সহ ৪ জেলা এবং উপজেলা গুলোতে গত এক সপ্তাহ ধরেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বৃহক্তর সিলেট বিভাগের মধ্যে সুদুর ৭৫০ বছর পুর্ব কাল থেকে সপ্তগঙ্গার মিলনকেন্দ্র সব তীর্থের এক তীর্থ ২৩ কি.মি দৈর্ঘ্যরে পণতীর্থ ও হযরত শাহ আরেফিন (রহ.)’র আস্থানায় সবচেয়ে বড় উৎসব ও ওরস মোবারক হয়ে আসছে।’ এ ওরস মোবারক ও ¯œানযাত্রায় যোগ দিতে শুধু সিলেট নয় রাাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশ থেকে এমনকি ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ভক্ত ও আশেকানগণ এসে থাকেন।
শ্রী অদ্বৈত্য মহাপ্রভুর আখড়াবাড়ী ও জন্মধাম সংরক্ষন সংস্কার কমিটির সভাপতি করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল ও গড়কাটি ইসকন মন্দিদের পরিচালক ভক্তপ্রিয় শুক্রবার জানান, এ বছর স্নানযাত্রার মুখ্য সময় নিধারিত হয়েছে মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী শতবিশা নক্ষত্রে ১১ চৈত্র – ২৫শে মার্চ শনিবার রাত ১২টা ৮মিনিট ২৬ সেকেন্ড গতে ও ¯œানযাত্রা সমাপ্ত হবে পরদিন রবিবার বেলা ১১টা ১৩মিনিট ৫১ সেকেন্ড’র মধ্যে। গঙ্গাস্নান যাত্রাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ গড়কাটি ইসকন মন্দিরে তিন দিনের বারুণী মেলায় কমপক্ষে ৩ লাখ মানুষের মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে।’
সিলেট চাতল পুর্বপাড়ার হযরত শাহ্ আরেফিন (রহ.)’র আস্থানার মোতওয়াল্লী আনোয়ার শাহ্ মাইভান্ডারী ও খাদেম শাহ্ মো. আজাদ শুক্রবার জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও হযরত শাহ্জালাল (রহ.)’র মাজার শরীফ প্রাঙ্গন থেকে শনিবার সকাল ১০টার দিকে হযরত শাহ্ আরেফিন (রহ.)’র লাউড়েরগড় আস্থানা অভিমুখে কয়েক হাজার ভক্তের সমন্বয়ে একটি কাফেলা যাত্রা করবে।’
ওরস উদযাপন কমিটির সভাপতি তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম, সহ সভাপতি বাদাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ও কোষাধক্ষ নুরুল আমিন চিশতী জানিয়েছেন,হযরত শাহ আরেফিন (রহ.)’র আস্থানায় মুসলিম ও সনাতন, বৈদ্য খ্রীষ্টান সহ সব ধর্মের ভক্ত সহ এ বছর কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে। তারা আরো বলেন ১১ চৈত্র, ২৫শে মার্চ শনিবার বাদ আছর ওরস শুরু হয়ে শুরু হয়ে ১৩ চৈত্র ২৭ মার্চ রবিবার বাদ ফজর দেশের সুখ সমৃদ্ধি কামনা করে আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে বার্ষিক ওরস সমাপ্ত হবে।
ইতিামধ্যে দেশের সমগ্র অঞ্চল থেকে হাজার হাজার কাফেলাধারী পাগল ফকির, ভক্ত, সাধক ও দর্শনার্থীরা ওরস এবং ¯œানযাত্রা মহোৎসবে যোগ দিতে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো ও আখড়াবাড়ীর আশে পাশের গ্রামে এসে পৌছেছেন। এদিকে সিলেট গণদাবী পরিষদের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার আহবায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য বিশ্ষ্টি আইনজীবী আবুল আজাদ রুমান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য আলহাজ¦ আবুল আবুল হোসেন ও গণদাবী পরিষদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সচিব হাবিব সরোয়ার আজাদ শুক্রবার যৌথ বিবৃতিতে, ওরস ও মেলা উপলক্ষে মদ, গাঁজা, ইয়াবা বিক্রয় ও সেবন কারীদের উপদ্রব দমন, ওরস ও বারুণী মেলায় জুয়ার আসর বসানোর অপচেষ্টা, চোর, পকেটমার , ছিনতাই রোধ ও মেলায় বসা দোকানপাঠ থেকে ইজারা ও অনুদান আদায়ের নামে দ্রব্যমুল্যের উর্ধŸগতি রোধ অহেতুক গণহয়রানী প্রতিরোধে আইশৃংখলা বাহিনীর বিশেষ সহায়হাতা কামনা করেছেন।’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রসাশক শেখ মো. রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশীদ, ২৮ -বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল নাসির উদ্দিন আহমেদ পিএসসি শুক্রবার পৃথক পৃথক ভাবে বলেন, ওরস  মহোৎসবে সার্বিক নিরাপত্তা দিতে এ বছর অন্যান্য বছরের ন্যায় আখড়াবাড়ী, পণতীর্থ ধামে গঙ্গাস্নান, গড়কাটি ইসকন মন্দির, বারুণী মেলা ও ওরশ মোবারক আস্থানায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর ৪টি অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়েছে, এছাড়াও ২জন নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ২টি ভ্রাম্যমান আদালতের পাশাপাশি, এনএসআই, ডিএসবি, ডিবি ,সাদা পোশাকধারী পুলিশ ও র‌্যাবের কয়েক শতাধিক সদস্য বিশেষ নজরধারী করা ছাড়াও ঝুঁকিপুর্ণ সড়কগুলোতে দিবারাত্রী যাতায়াতকারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়মিত টহল দেবে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply