২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১:০১/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ১:০১ পূর্বাহ্ণ

সীমান্তে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সৈন্য, বাংকার খনন

     

সীমান্তের ওপাশে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ, নতুন করে বাংকার খনন, রাতে ফাঁকা গুলিবর্ষণের ঘটনায় শূন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার সকালে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মীরা শূন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের আশ্বাস দিয়ে তাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বললেও এসব রোহিঙ্গারা যেকোন মুহূর্তে শূন্যরেখা থেকে চলে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান একে জাহাঙ্গীর আজিজ। তিনি আরো জানান, সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার সেনারা যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তাতে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা।
শূন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ (৪০) সাংবাদিকদের জানান, গত কয়েকদিন ধরে সীমান্তের ওপারে কাঁটাতারের বেড়া সংলগ্ন এলাকা তমুব্রু, তুমব্রু উত্তরপাড়া, টেকিবুনিয়া, কোয়াংচিবন, ফকিরাবাজার, কুমিরখালী, কাদিরবিলসহ বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকাজুড়ে মিয়ানমার সেনারা নতুন করে বাংকার খনন করছে। সেখানে মিয়ানমার সেনারা অবস্থান নিয়েছে। তারা রাতের আঁধারে সীমান্তের শূন্যরেখায় এসে মুহুর্মুহু ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। যে কারণে এখানে থাকা মোটেই নিরাপদ নয় বলে ওই রোহিঙ্গা নেতা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় ইউপি মহিলা সদস্য খালেদা বেগম জানান, ইউনিয়ন পরিষদের যাওয়ার সময় এপার থেকে তিনি দেখেছেন ওপারে শূন্যরেখায় এসে মিয়ানমার সেনারা বাংকার খনন করছে। সেখানে বৈদ্যুতিক তার সংযোগ দিচ্ছে। এ নিয়ে তুমব্রু ও ঘুমধুম এলাকায় বসবাসরত মানুষের মাঝে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে।
কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ জানান, সীমান্তজুড়ে মিয়ানমার সেনাদের বাংকার খনন ও অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। বিজিবিকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গারা আসছেই
সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা এপারে আসছে। শুক্রবার ভোর রাতে ২৮৩ জন রোহিঙ্গাসহ গত ৪ দিনে আট শতাধিক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের বুচিডং থেকে নাফনদী পার হয়ে এপারে চলে এসেছে। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি এসব রোহিঙ্গাদের সাময়িকভাবে ট্রানজিট ক্যাম্পে আশ্রয় দিয়েছে। নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর ৮ শতাধিক রোহিঙ্গাকে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাদ্য ও নিরাপত্তা সংকট এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় অবশিষ্ট রোহিঙ্গারাও এদেশে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছে। সেখানে দোকান-পাট বলতে কিছুই নেই। মিয়ানমার সেনারা বাজারে যেতে বাধা দিচ্ছে। পুকুরে জাল ফেলতে দিচ্ছে না। এমনকি খাবার পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে মিয়ানমার সেনাদের কাছে শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গা মহিলারা।
বিবিসিও একই কথা বলছে
গতকাল বিবিসির প্রতিবেদনেও একই ধরনের তথ্য দেয়া হয়েছে। সদ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করা সানোয়ারা বিবিসিকে জানান, বাড়ির পুরুষেরা সহিংসতার কারণে নিখোঁজ ও নিহত হবার পরও গত ছ’মাস ধরে তারা মিয়ানমারে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন।
কুতুপালংয়ে ইউএনএইচসিআর পরিচালিত একটি অন্তর্বর্তীকালীন আশ্রয় শিবিরের অফিসঘরের পেছনে বসে থাকা সানোয়ারা আরো বলেন, ‘কাজ করতে পারি না। খেতে পাই না। সেনাবাহিনী সন্ধেবেলায় ঘরে আলো জ্বালতে দেয় না। জঙ্গলে কাঠ কাটতে দেয় না। কাজ নেই। খাব কি? মিয়ানমারের বুচিডংয়ের সিন্নিপ্রাং গ্রামের বাসিন্দা এই সানোয়ারা।
কিন্তু গত বছর নভেম্বর মাসের শেষভাগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেবার ব্যাপারে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামের একটি চুক্তি হবার পরেও কেন আসতে হচ্ছে সানোয়ারাদের?
তার বক্তব্যে অবশ্য উঠে আসছে বাধাবিঘ্নের কথা। দেখা যাচ্ছে চুক্তি হবার পরও এখন পর্যন্ত অন্তত দশ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র ক্যারোলিন গ্লাক বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহে অনেক বেশি সংখ্যায় এসেছে তারা’। ‘তারা বলছে, তারা এখনো ভীত। তারা চলাফেরার স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হবার কথা বলছে। কাজের অভাবের কথা বলছে। দৈনন্দিন কাজ করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হবার কথা বলছে। সেনাবাহিনী আতঙ্কও এখনো রয়ে গেছে তাদের মধ্যে’।
অথচ ওদিকে দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবার জন্যও কর্মতত্পরতা শুরু করেছে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে বিবিসি বার্মিজ বিভাগের সংবাদদাতার পাঠানো ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বুলডোজার ব্যবহার করে মাটি সমান করার কাজ হচ্ছে। চলছে টিন ও কাঠ দিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজও।সৌজন্য ইত্তেফাক

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply