১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১:৩১/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ১:৩১ অপরাহ্ণ

প্রশ্নফাঁসে দায়ী কারা?

     

আজহার মাহমুদ
বাংলাদেশে এখন প্রশ্নফাঁস একটি জাতিয় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। বিগত কয়েক বছর থেকে এই সমস্যাটা অতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন যেকোনো পরীক্ষায় শুনাযায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। প্রশ্নফাঁস এখন সাধরণ বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে জনগনের নিকট। বেশী কিছু না বলে আমরা বর্তমান এস এস সি পরীক্ষার কথা নিয়ে ভাবলেই তার উত্তর পাবো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে অপরাধী কারা? আবার প্রশ্নটা অন্যভাবে বললে বলা যায়, অপরাধী যেই হোক না কেনো এই অপরাধ থামছেনা কেনো? প্রশাসন কি ব্যার্থ? শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মনে এই বিষয়টি এখন পরিষ্কার। যদি তা না হয়, তবে চলতি এস এস সি পরীক্ষায় বাংলা থেকে শুরু করে গনিত, পদার্থ বিজ্ঞানের মতো প্রশ্নও ফাঁস হয় কীভাবে। এ বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যন বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপর দোষ না চাপিয়ে সকলের সচেতন হতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে কারা? সাধারণ মানুষ কিংবা অভিভাবকদেরতো আর প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয় নাই। যাদের এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের আগে সচেতন হওয়াটায় জরুরী। এদের ভেতর থেকেইতো এসব হচ্ছে। চট্টগ্রামের বাওয়া স্কুলের অধ্যক্ষের মতে, প্রশ্নে ফাঁসে দায়ী অভিভাবকের উচ্চাকাঙ্ক্ষা। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি টাকা না পায় কিংবা প্রশ্নপত্র নেওয়ার মতো সুযোগ না পায় তবে তাঁরা কখনোই এই পথে আসবে না। তাঁরা এখনো শিশু, তাদের যেদিকে প্রলোভিত করা হবে সেদিকেই তাঁরা যাবে। চট্টগ্রাম বোর্ড সূত্রে জানাযায়, গত ১৩ ফেব্রুয়ারী পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় চট্টগ্রামের শিক্ষকসহ ১৯ জনকে আটক করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আটক কিংবা গ্রেপ্তারই এ সমস্যার সমাধান নয়। এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করতে পারাই এই সমস্যার সমাধান। কিন্তু এতে ব্যার্থ প্রশাসন। এসকল শিক্ষার্থীদের থেকে শুধু জানা যাবে তাঁরা ফেসবুক এবং হোয়াটসএপ থেকে প্রশ্ন কিনে নিয়েছে এবং পড়ে সেটা সবাইকে ছড়িয়ে দিয়েছে। আসলে এটা একটা ব্যবসা। পরীক্ষা আসলেই এই ব্যবসায় মেতে উঠে কিছু অসাধু প্রশাসনের ব্যাক্তি। টাকা দিয়ে এখন নিজের পেশাকেও বিক্রি করে দিতে পারে মানুষ। টাকার কাছে হার মানে না এমন কী আছে তা আমার জানা নেই। নিজের সম্মান, সততা এবং মনুষ্যত্বকেও এখন টাকায় বেঁচাকেনা করা যায়। কিছু কিছু বিত্তবানরা এই সুযোগ কজে লাগায়। তারাই তাদের সন্তানদের রাতারাতি ভালো ফলাফলের জন্য এভাবে টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র কিনে দিচ্ছে। বলাযায় আগ্রহ সৃষ্টির মূলে অভিভাবক। টাকা না পেলে প্রশ্ন কীভাবে পাবে? মূল অপরাধেতো তারাই। আর এর জন্য দূর্ভোগ পোহতে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের। যাদের এই দিকে কোনো চিন্তা নেই তারাও এখন এই সমস্যার সাথে আটকে যাচ্ছে। তাদের ভেজালহীন খাতা গুলো এখন ভেজালযুক্ত খাতার সাথে মিশে পড়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই প্রশ্নফাঁসের কারণে পরীক্ষার খাতার মূল্যায়ণ কীভাবে করা হবে। সধারণ শিক্ষার্থীদের মনে এখন এই বিষয় নিয়ে আতংক। আমি নিজেও একটি গোপন অনুসন্ধান চালিয়ে খবর নিলাম একটি এম.সি.কিউ প্রশ্ন ৩০০ টাকা বিনিময়ে আমাকে একজন ব্যাক্তি বিক্রি করবে। ফেসবুকে একটি গ্রুফে তার প্রকাশ্য পোষ্ট পাওয়ার পর তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম এবং তার সাথে কথা বলে জানলাম সে প্রশ্ন বিক্রি করে। তার আইডির নাম ইংরেজীতে “এম ডি আকাশ”। প্রকাশ্যে সে পোষ্ট করে বলছে তার কাছে থেকে প্রশ্ন কিনতে পারবে। এভাবে যদি প্রকাশ্যে প্রশ্ন বিক্রি করা হতে পারে তবে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে কতটুকু উন্নত বলা যাবে সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। তবে প্রশ্ন ফাঁস কখনো ফেসবুক কিংবা ইন্টারনেট বন্ধ করে রোধ করা যাবেনা। এর মূল হোতাদের ধরতে হবে। প্রশ্নপত্রের যারা নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে তাদের ভেতরেও তদন্ত করতে হবে। মোবাইলে ছবি তুলে নিলেইতো কাজ শেষ। এরপর হাজার নিরাপত্তা দিলেও কোনো কাজ হবেনা। এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করে এক বিবৃতি প্রদান করেছেন বাংলাদেশ শিক্ষা পযবেক্ষণ কাউন্সিল’র সভাপতি কলামিষ্ট মাহমুদুল হক আনসারী। তিনি বলেন প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র রাষ্ট্রকে চ্যালেন্জ ছুড়ে দিয়েছে। প্রশাসনের এতোগুলো চোঁখকে ফাঁকি দিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার মতো দুঃসাহস কি করে পায়? তিনি আরো বলেন, সবগুলো পরিক্ষার পূর্বে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও সংষ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারীর কথা বলা হয়, কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হয়নাই। এভাবে বিভিন্ন জনের মতামত আর বিশ্লেষনের পরেও এর সঠিক কোনো পদক্ষেপ এখনো দেখা যাচ্ছেনা। এটি আমাদের দেশের শিক্ষার্থী এবং প্রজন্মের জন্য বড় একটি অভিশাপ বলে মনে হচ্ছে আমার। চলতি এস এস সি পরীক্ষা নিয়ে বর্তমান সময়ে অধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রণালয়। পরিক্ষার আগে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়া, ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া, পরিক্ষার কেন্দ্র থেকে ২০০ মিটারের মধ্যে মোবাইল থাকলে গ্রেপ্তার সহ নানান ধরনের পদক্ষেপ থাকার পরেও এর কোনো সুফল পাচ্ছেনা কেউ। অব্যাহত রয়েছে প্রশ্নফাঁস। প্রতিদিন গনমাধ্যম সহ সকল পত্র-পত্রিকায় শিরোনাম থাকে প্রশ্নফাঁস নিয়ে। প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে আটক এবং গ্রেপ্তার করা হচ্ছে শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের সহ বিভিন্ন জনকে। কিন্তু এর পরেও প্রশ্নফাঁস রোধ করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের শিক্ষাখাত একদিন নিশ্চিত ভাবে অন্ধকার পথে চলে যাবে। ভাষার মাসে দেশের এমন এক বির্পযয় দেখে কখনো একজন দেশপ্রেমিক বসে থাকতে পারে না। দেশকে ভালোবাসলে এই সমস্যার সমাধানে সকলের এক হয়ে কাজ করতে হবে। অভিভাবকদের হতে হবে সচেতন। সন্তানদের এই পথ থকে সরিয়ে আনতে পারবেন তারাই। সন্তান এই অপরাধের সাথে জড়িত আছে কিনা সেটা অভিভাবকদের জানার কথা। তাই অভিভাবকরা সচেতন হলে এই সমস্যার কিছুটা উন্নতি হবে। এছাড়া মূল দায়িত্ব কিন্তু শিক্ষমন্ত্রণালয়ের। মূল কান্ডারী কিন্তু সেখান থেকে। প্রশ্ন ফাঁসকারীরা যখন চ্যলেন্জ ছুড়ে দিয়ে কাজ করছে তখন মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা স্বিকার করতে হবেই। এই ব্যর্থতাকে কাটানোর জন্য তদন্ত করতে হবে উচ্চ কর্মকর্তাদের উপর। যাদের হাতে প্রশ্নের দায়িত্ব থাকে নজর রাখতে হবে তাদের। নজর রাখতে হবে প্রশ্নের নিরাপত্তাদান কারিদের। তারাই নিরাপত্তা না দিয়ে  তার অবমূল্যায়ণ করতে পারে। এই চক্রের সাথে জড়িত থাকতে পরে বড় কোনো প্রভাবশালী ব্যাক্তি। তা না হলে এই চক্রকে বের করতে এত সময় নেওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।  এই জাতিয় সমস্যা নিয়ে এখন দেশের প্রতিটি মানুষ উদ্বিঘ্ন। সকলের ভেতর এখন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন। এই প্রশ্ন দূর করার দায়িত্ব সরকারের, মন্ত্রণালয়ের, প্রশাসনের। তাই সরকারের কাছে প্রত্যাশা রইলো প্রশ্নফাঁসের মতো ভয়ংকর সমস্যা থেকে দেশের সকল শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেওয়া।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply