২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৪:৩৬/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ

প্রশ্নফাঁসের জড়িত চট্রগ্রামে এক বাবাসহ গ্রেপ্তার ১৮

     

পরীক্ষা শুরুর আগে চট্টগ্রামে প্রশ্নপত্র পাওয়ায় তিনটি পরীক্ষা কেন্দ্রের ৩৩ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের ১৮ জনকে।

একটি বাসে চড়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিয়ে বহিস্কৃত হয়েছেন চট্টগ্রাম আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পটিয়া ক্যাম্পাসের বিজ্ঞানের ২৪ ছাত্র। তাদের মধ্যে নয় শিক্ষার্থী ও তাদের সঙ্গে থাকা শিক্ষিকাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়া পুলিশ লাইন্স ইনস্টিটিউট কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষার্থী দুই মেয়েকে মোবাইলে প্রশ্নোত্তর দেখিয়ে মামলার আসামি হয়েছেন তাদের বাবা। ওই দুই বোনকে বহিষ্কারের পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বাইরে পরীক্ষার আগে প্রশ্ন মেলায় ফটিকছড়ি উপজেলার হেঁয়াকো বনানী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে সাতজনকে বহিষ্কারের পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

মঙ্গলবার ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে নগরীর ওয়াসা মোড়ে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে করে নগরীর মহিলা সমিতি (বাওয়া) উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে আসা শিক্ষার্থীদের কাছে ফাঁস হওয়া পদার্থবিদ্যার প্রশ্ন পায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ওই বাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩০ জন ব্যবসায় শিক্ষা এবং ২৪ জন বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই শিক্ষিকা তাদের আনা নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন।

পরীক্ষা শুরুর আগে ওই বাসে থাকা পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাতটি মোবাইল ফোন ও দুটি খাতা জব্দ করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট মোরাদের দাবি, ওই সময় বাসের পরীক্ষার্থীরা তাদের মোবাইল ফোনে থাকা প্রশ্নের উত্তর ঠিক করছিল। পরীক্ষার আগে তাদের মোবাইলে প্রশ্ন পাওয়া গেলেও পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষা শেষে শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওই বাসে থাকা ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঘটনার লিখিত বিবরণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। শেষে যে নয়জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও খাতা পাওয়া গেছে, তাদের গ্রেপ্তার এবং অন্যদের বহিষ্কারের নির্দেশ দেন তিনি। পরে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, ওই বাসের শিক্ষার্থীদের কাছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র রয়েছে বলে খবরের ভিত্তিতে বাসটিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালান। জেলা প্রশাসক পরীক্ষার্থীদের বহিষ্কারের নির্দেশ দিলে সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরীক্ষার্থীদের কয়েকজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করলেও জেলা প্রশাসক নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন। এ সময় এক পরীক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বহিষ্কারের পক্ষে যুক্তি দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “বাস এসে ওই স্থানে অবস্থান করলেও পরীক্ষার্থীরা ওই বাস থেকে নামেননি। যারা ছিলেন তারা সবাই উত্তরগুলো গ্রহণ করেছেন এবং পরীক্ষায় উত্তর দিয়েছেন।” গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) হাবিবুর রহমান বলেন, নুরুল ইসলাম নামে এক পরীক্ষার্থী প্রশ্নগুলো সংগ্রহ করে ফেইসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে শেয়ার করে বলে জানিয়েছে।

গ্রেপ্তার দু্ই বোন, আসামি বাবাও
নগরীর পুলিশ লাইন্স ইনস্টিটিউট কেন্দ্রের দুই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কারের পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাওয়া স্কুলের এই দুই শিক্ষার্থী আপন বোন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোরাদ আলী জানান, দুই শিক্ষার্থীর পাশাপাশি তাদের বাবাকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই পরীক্ষার্থীর বাবা পরীক্ষা শুরুর আগে মোবাইল ফোন থেকে প্রশ্ন বের করে উত্তর মেলাচ্ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে অন্য অভিভাবকরা হৈ চৈ করলে তিনি মোবাইল রেখে পালিয়ে যান।

ফটিকছড়িতে গ্রেপ্তার ৭
ফটিকছড়িতে পরীক্ষার আধ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রের বাইরে থেকে প্রশ্নসহ আটক সাত শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফটিকছড়ির ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসনাত মো. শহীদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পরীক্ষা শুরুর আগে তাদের কাছে যে প্রশ্ন পাওয়া গেছে, সেই প্রশ্নের সাথে পরীক্ষার প্রশ্নের মিল পাওয়া গেছে। “পরীক্ষার পর সাতজনকেই বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মামলা হবে। তাদের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।” শহীদুল হক বলেন, আটক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে ফেইসবুকে পরিচয়ের সূত্র থেকে প্রশ্ন পেয়েছেন তারা। “ফেইসবুকেই তাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিশ্বাস স্থাপনের পর বিকাশ নম্বর দেয়। এ বিষয়ে কিছু ক্লু পেয়েছি। তা পুলিশকে জানিয়েছি।”

প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, “প্রতিদিনই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা গ্রেপ্তার করে জানিয়ে দিচ্ছি। “প্রশ্ন ফাঁস হল কি না, সেটা শিক্ষামন্ত্রী জানেন। প্রশ্ন ফাঁসের যারা চেষ্টা করছে, পয়সা লেনদেন করছে তাদের চিহ্নিত করছি।”

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply