২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ভোর ৫:১১/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

মালদ্বীপ সংকট: সেনাবাহিনীর শপথ গ্রহণ, গ্রেফতার ২ এমপি

     

 দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া এক আদেশের জেরে গভীর রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে। রবিবার সকালের দিকে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করতে সুপ্রিম কোর্টে চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ আনার পর এ সঙ্কট আরো মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

মালদ্বীপ সরকারের আশঙ্কা, সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনকে গ্রেপ্তার বা অভিশংসনের নির্দেশ দিতে পারেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মোহামেদ অনিল বলেন, প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করা বা গ্রেপ্তারের যে কোনো উদ্যোগ বেআইনি হবে।

বিবিসি জানায়, অনিল প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল শিয়াম ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লা নওয়াজকে নিয়ে রবিবার একটি সংবাদ সম্মেলন করেন।

সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আমরা এমন কিছু ঘটনা ঘটার ইঙ্গিত পেয়েছি, যা জাতীয় নিরাপত্তাকে সঙ্কটের মুখে ফেলে দেবে। ওই তথ্যানুযায়ী, খুব সম্ভবত সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার বা অভিশংসনের নির্দেশ দিতে পারেন।

“যা অসাংবিধানিক হবে এবং সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ধরণের ঘটনা কিছুতেই ঘটতে দেবে না।”

রবিবার দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজধানী মালেতে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবন সিলগালা করার পর দখলে নিয়েছে।  এদিন টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বিরল ভাষণে অ্যাটর্নি জেনারেল যখন এসব অভিযোগের কথা বলছিলেন তখন তার দুই পাশে ছিলেন দেশটির সেনাবাহিনী ও পুলিশের দুই প্রধান।

প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা ইয়ামিনকে অভিশংসনের চেষ্টা নিরাপত্তাবাহিনী সফল হতে দেবে না বলেও ঘোষণা দেন তিনি। তার এ ঘোষণার পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা পার্লামেন্ট ভবন সিলগালা করে দিয়েছে।

টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা একটি অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের তাদের প্রাণের বিনিময়ে হলেও সরকার রক্ষার শপথ নিতে দেখা যায় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

রাজধানী মালেতে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আহমেদ শিয়াম সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের শপথ পড়িয়েছেন। দুই বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছেন, বৈধ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত আছেন তারা।

মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির মুখপাত্র হামিদ আব্দুল গফুর বলেন, পুলিশ শনিবার রাতভর প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ দুই বিচারককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করেছে।

“তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে। সরকার অন্যায়ভাবে বিচার বিভাগের দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে।”

এদিকে সুপ্রিম কোর্টে খালাস পাওয়ার পর স্বেচ্ছা নির্বাসন ছেড়ে দেশে ফেরা মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির দুই নেতাকে রবিবার বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিদেশ থেকে মালদ্বীপে ফেরার পরপরই রাজধানী মালের বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন দুই সংসদ সদস্য আব্দুল্লা সিনান ও ইহাম আহমেদ।

পুলিশ বলছে, আদালতের নির্দেশেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ফারিশ মামুন ঘুষ কেলেঙ্কারি মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ সিনান ও ইলহাম আহমেদের বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদের বিচার করাকে হাই কোর্টে শুক্রবার অবৈধ ঘোষণা এবং বিরোধী ১২ এমপিকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দিলে সরকারও পাল্টা পদক্ষেপে পার্লামেন্টের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।

সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনকে গ্রেপ্তারে আদালতের যে কোনো পদক্ষেপ ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে তৎপর করেছে সরকার।

বিরোধী দল মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির ১২ এমপিকে মুক্তি দেওয়ায় এখন তারাই পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল।

ওই ১২ জনের মধ্যে নয়জন দেশে কারাবন্দি আছেন। বাকিরা স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান।

এদিকে, স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ অনিল ও প্রধান প্রসিকিউটরের ওপর আস্থা নেই বলে তাদের পদত্যাগের দাবিতে সংসদ সচিবালয়ে পিটিশন দিয়েছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা। দেশটির বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল্লা শহীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রসঙ্গত, সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে ২০১৫ সালে নাশিদকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গন ওই রায়ের তীব্র সমালোচনা করে এবং যুক্তরাজ্য নাশিদকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশ না মানা ‘অভ্যুত্থানের শামিল’ বর্ণনা করে নাশিদ বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের এখনই পদত্যাগ করা উচিত।

তিনি মালদ্বীপের নিরাপত্তা বাহিনীকে সংবিধান সমুন্নত রাখার আহ্বানও জানান।

গত বৃহস্পতিবার মালদ্বীপের সুপ্রিম কোর্ট নাশিদ ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের বিচার ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও অসাংবিধানিক’ বর্ণনা করে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিয়ে নিজ নিজ পদ পুনঃপ্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেয়।

বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে আছেন মালদ্বীপে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট নাশিদ। এবিনিউজ থেকে নেয়া

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply