দূর্নীতির কবলে আনোয়ারা উপকূলীয় বেড়িবাঁধ
- মুহাম্মদ আতিউল ইসলাম
নির্মাণ আর ধবংস মিলেই প্রকৃতি। কখনো কোমল কিংবা ভয়ংকর। ক্ষতি আর ধবংসের দৃশ্যটা হলো দূর্যোগ। প্রতি বছর দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ আঘাত হানে। নদীমাতৃক দেশে নদী ভাঙ্গন একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ। আনোয়ারা উপজেলার ত্রিমুখী সাগর বেষ্টিত উপকূলীয় প্রান্তিক জনপদ খ্যাত গহিরা। যেখানে নদী ভাঙ্গন একটি নিত্য ঘটনায় রুপ নিয়েছে। ১৯৫২,১৯৫৪, ১৯৬৮, ১৯৭৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৮, ২০০০ সালে সংঘটিত বন্যা ও জ্বলোচ্ছাসের কথা এখনো মানুষের হৃদয়ে বিভীষিকার স্মৃতি হয়ে আছে। তা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হারিকেন, নার্গিস, মহাসেন, রোয়ানুর মতো দূর্যোগে আক্রান্ত উপকূলীয় গহিরা। সর্বনাশা নদী ভাঙ্গনে তলিয়ে গেছে সরেঙ্গা নামক গ্রাম। অসংখ্যা স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ ও কবরস্থান। ভাসিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, ফসল, ভিটে বাড়ী, কোটি কোটি টাকার সহায় -সম্পদ। নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে মানুষ নি:স্ব গৃহহীন হয়ে উদ্বাস্ত্ব মানবেতর জীবন যাপন করছে। গহিরায় নদী ভাঙ্গন ও বন্যা যেমন নিত্য নতুন ঘটনার রুপ। অদেশপ্রেমিক কতিপয় অসাধু রাজনীতির নেতারাই নদী ভাঙ্গন ও বন্যায় এরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত ও লাভবান হচ্ছে। জনগণ বরাবরই ভূক্তভোগি ও অসহায় হয়ে থাকছে। ভাঙ্গন ও বন্যা জনজীবন যেমন বিপর্যস্ত করে তুলেছে তেমনি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ার নেপথ্যে দূর্নীতি ও ষড়যন্ত্র একমাত্র দায়ী।এই জনপথের নেতা মাননীয় মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ নিজেও চান সুষ্ঠু ও টেকসই বাঁধ। কিন্তু কতিপয় টাউট ও ঠিকাদারের দালাল এইখানে মন্ত্রী মহোদয়কে ভুল ধারণা দিয়ে নিজেরাই লাভবান এই ধারণা এলাকাবাসীর।
গহিরাকে বন্যা ও নদী ভাঙ্গন মুক্ত করতে বেড়িবাঁধ নির্মাণে এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ, বাজেট প্রদানে সরকারের কোন সংকীর্নতা নেই বললেই চলে। বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় নদী ভাঙ্গন ও বন্যায় স্বাভাবিক জীবন যাপন, নিরাপদ বসবাস জনমনে বিরাজ করে আতংক ও অতিষ্ঠ। বারে বারে যে বরাদ্দ ও বাজেট হয় তাতে দূর্নীতি ও ষড়যন্ত্রকারীরাই সর্বোচ্চ উপকৃত হচ্ছে। তবে টেকসই ও দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ হচ্ছেনা। বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও উন্নয়ন দূর্নীতি ও ষড়যন্ত্রমুক্ত না হওয়ায় সরকারের দেয়া অর্থ বরাদ্দ ও বাজেট সম্পূর্ণ বৃথা ছাড়া কিছু হচ্ছেনা। হচ্ছে শুধু দূর্নীতি ও ষড়যন্ত্রকারদের পকেট ভারি। অভিযোগের ভিত্তিতে সরকারি জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসন পরিদর্শনে গেলে দূর্নীতিবাজ ও ষড়যন্ত্রকারীরা বেশী শক্তিশালি হয়ে উঠে। নি:স্ব অসহায় মানুষের কথা কেউ শুনে না। শুনেনা জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসন। বেড়িবাঁধ নির্মাণে নি:স্ব অসহায় মানুষের হয়ে উঠে আরো নি:স্ব অসহায়। যেহেতু বেড়িবাঁধ নির্মাণে পার্শ্ববর্তী ফসলি জমিগুলো বিনা মূল্যে বিনা অনুমতিতে মাটি খনন করে তুলে নিয়ে যায়। তাদের কোন ন্যায্যা মূল্য দেওয়া হয়না। জমির ন্যায্যা মূল্য দাবি কিংবা জমি রক্ষায় এলাকাবাসি এগিয়ে আসলে তাদের বিরুদ্ধে ঝুলে দেওয়া হয় চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলার ভয় ও হামলা। দূর্নীতি, ষড়যন্ত্র ও চলচাতুরির সর্বোচ্চ শেল্টার হচ্ছে রাজনীতি। সরকার পালাবদল হয়, বাজেট বরাদ্দ হয় সবই হয়। থেমে নেই দূর্নীতি। বর্তমান মহাজোট সরকার আনোয়ারায় টেকসই পাথরের স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ১৭০ কোটি টাকার অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। পূর্বে দেওয়া হয়েছে রিংবাঁধের জন্য দিয়েছিল চার কোটি টাকা। টেকসই বেড়িবাঁধ, রিংবাঁধ কোনটিই টেকসই হচ্ছেনা। হচ্ছে বালুু ভর্তি বস্তার ভাঁজ। বেড়িবাঁধ ও উন্নয়নের অর্থ লুটপাটের সুযোগ নিতে কাজগুলো দেওয়া হয় স্থানিয় দলীয় পরিচয়ের রাজনীতির অসাধু লোকদের। টেন্ডারের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ হয় কিনা তাতে রয়েছে ঘোর সন্দেহ। কাজের ভাগ নিতে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষও ঘটছে। অনুরোধের প্রেক্ষিতে দূর্নীতি ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সরকারি জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন দায়সারা বক্তব্য ও পরিদর্শনে গিয়ে দায়াসারা বক্তব্য দিয়ে প্রতিবাদ জানালেও তাতে দূর্নীতি ও ষড়যন্ত্র থামেনা। বরং জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতারা হচ্ছে এসবের মূল উৎস আর রাজনীতি হচ্ছে শক্তি। রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়নের দূর্নীতির কারনে টেকসই বেড়িবাঁধ যেমন হচ্ছেনা তেমনি সর্বনাশা নদী ভাঙ্গনে দিনের পর দিন নদী গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে গহিরা।