২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৫:২৭/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৫:২৭ অপরাহ্ণ

ব্যাংকের ঋন পরিশোধ করতে গিয়ে বন্ধকী জমি বেহাতের আশংকায় ঋনগ্রহীতা

     

 

এক সময় কাবুলিওয়ারা ঋনের কিস্তি পরিশোধে অপারগ হলে ঋন গ্রহিতার সহায় সম্বল কেড়ে নিতো, বর্তমান সভ্য সমাজে কাবুলিওয়ালারা নিপাত গেলেও কিছু কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কাবুলিওয়াদেরকে হার মানাচ্ছে। ঘটনার বিবরনে জানা যায় ককসবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজিজুল হক চকরিয়া পৌর সভা সদরে সুপার মার্কেটে একটি জুতার দোকান পরিচালনা করতেন। পুঁিজর সংকট হবার কারনে বিগত ২০১৩ইং সনে জানুয়ারীতে ঢাকা ব্যাংক চকরিয়া শাখা থেকে ১৫ লক্ষ টাকা সিসি ঋন গ্রহন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সিসি ঋনটি মার্চ ২০১৫ইংতে এসএমই টার্ম ঋনে পরিবর্তন করে দেন। ইত্যবশরে ঋনগ্রহীতার স্ত্রী মরনব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। আবার এর কয়েক মাস পরে তার পিতাও লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। নিজের অতি পরম আত্মীয়কে হারিয়ে সে নিজেও শারিরীক ও মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এভাবে দুইজন প্রিয় মানুষকে হারিয়ে দিন দিন চিন্তায় মানসিক ও শারিরীক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এক পর্যায়ে ২০১৬ইংতে চট্টগ্রামে সার্জিস্কোপ হাসপাতালে পিত্ততলি অপারেশন করান। আত্মীয়স্বজন ও নিজের চিকিৎসা খরচ চালাতে গিয়ে চরমভাবে আর্থিক সংকটে পড়েন। স্ত্রী ও পিতার চিকিৎসার খরচ যোগাড় করা এবং নিজের চিকিৎসার খরচ যোগাড় করতে গিয়ে আর্থিক ভাবে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। অন্যদিকে নিজে ব্যবসায় সময় দিতে না পেরে ও ব্যবসার পুঁিজ হারিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও লোকসানের মুখে পড়েন। এক পর্যায়ে চরমভাবে পুঁিজর সংকট মারাত্মক হবার কারনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন।

ব্যাংকের দেনা পরিশোধে উপায় খুঁজতে ও কিভাবে এই ঋনের চক্র থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং ব্যাংকের ঋন পরিশোধে আর কোন উপায়ান্তর না দেখে স্থানীয় ব্যবস্থাপকের পরামর্শে ব্যাংকের কাছে বন্ধকীকৃত মায়ের নামে সর্বশেষ সম্বল জমির একটি অংশ বিক্রি করে ১ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋন পরিশোধের জন্য তার নিজ নামে ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। যার ফলে তার গৃহিত ১৫ লক্ষ টাকা ঋন থেকে ১২ লক্ষ পঁয়ষট্টি হাজার পরিশোধ হয়ে যায়। ঋনের সুদ মওকুপ করে বাদবাকি আসল টাকা ঢাকা ব্যাংকের কাছে বন্ধকীকৃত জমি বিক্রি করে ঋন হিসাবটি বন্ধ করার জন্য ব্যাংকের চকরিয়া শাখার ব্যবস্থাপক ও পরবর্তীতে ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধান বরাবরে আবেদন করলেও তারা বকেয়া মুল টাকা গ্রহন করে ঋনের দায়-দেনা থেকে ঋনগ্রহীতা অব্যাহতি প্রদানের পরিবর্তে বন্ধকী জমি বিক্রি করে তার ঋন আদায়ে নানা ফন্দি ফিকির করতে থাকেন। বিষয়টি ঋন গ্রহীতা বিগত ৮ ডিসেম্বর ২০১৭ইং ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে অবহিত করেন। ক্যাব চট্টগ্রাম অফিস বিষয়টি মানববিক বিবেচনায় দ্রæত সুরাহা করার জন্য ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করেন। ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিগত ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ইং পত্রমুলে ঋনগ্রহীতাকে মুল বকেয়া পরিশোধ করার জন্য নির্দেশানা প্রদান করেন। কিন্তু স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থাপক মুল বকেয়া পরিশোধ করে ঋন হিসাবটি বন্ধ করার পরিবর্তে বন্ধকীকৃত জমিটি নিলামে তুলতে নানা ভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রর্দশন করে যাচ্ছেন।

ক্যাব বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টোমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট জানালেও তারাও নিরব। এদিকে ঋনের বন্ধকীদাতা ঋনগ্রহীতা আজিজুল হকের মা’ও মৃত্যবরণ করেন। এ অবস্থায় নিজের ব্যবসা বানিজ্য, পরম আত্মীয়স্বজনকে হারিয়ে নিঃশ্ব প্রায় একজন ঋন গ্রহীতাকে ঋনের আসল বকেয়া পরিশোধ করে ঋনের দায়-দেনা থেকে মুক্তি দানের পরিবর্তে তাকে আরো ঋনের জালে আবদ্ধ করে মায়ের নামে বন্ধকীকৃত জমিটি বেহাত করার পাঁয়তারা করার নানা হুমকি ও ফন্দি ফিকিরে ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন ঢাকা ব্যাংকের মতো নতুন প্রজন্মের আধুনিক ধারার ব্যাংক কৃর্তপক্ষ কর্তৃক অপেশাদার, কাবুলিওয়ালা ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ধরনের আচরন থেকে বের হয়ে আসার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি আহবান জানান। একই সাথে গ্রাহকদের ভোগান্তি নিরসনে ব্যাংকগুলির উদাসীনতা এবং নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের শৈতল্যে ব্যাংকগুলি সাধারন গ্রাহকদের পকেট কাটছে। যার কারনে সাধারন মানুষ ব্যাংকগুলি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সাধারন ভোক্তাদের আস্থা ও বিশ্বাস হারালে এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলির পরিনাম ভয়াবহ হবে। তিনি আরো বলেন ব্যাংকগুলিতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রচন্ড ঘাটতি থাকায় একশ্রেণীর কিছু রাগব বোয়াল ব্যাংক লুটপাটে ব্যস্ত, সেজায়গায় ব্যাংকের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক গ্রাহকরা ঋনের টাকা পরিশোধ করতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ণা দিলেও ঋনের জাল থেকে মুক্তি মিলছে না, যা খুবই দুঃখজনক ও অনাকাংখিত। যা পুরো ব্যাংক ও আর্থিক সেক্টরে একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্ঠি করতে পারে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply