২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:১৯/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ২:১৯ অপরাহ্ণ

নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথায় পুলিশের সহায়তায় পরিবহনে কোটি টাকার চাঁদাবাজি

     

 

নজরুল ইসলাম
নগরীর চান্দগাও থানাধিন কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় অটো সিএনজি টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়র নামের একটি সংগঠন পুলিশের সহায়তা মাসে কোটি টাকার চাঁদাবাজির করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নগরীর কাপ্তাই সড়কের রাস্তার মাথায় বোয়ালখালী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, রাঙ্গামাটিসহ বিভিন্ন এলাকার গাড়িগুলো শহরে প্রবেশ করলে চাঁদা দিতে হয় সমিতির মাধ্যমে পুলিশকে। সড়ক পথে যে কোনো ছোটখাট পরিবহণ নগরীতে প্রবেশ করলেই পুলিশের উপস্থিতেই চাঁদাবাজি। চাঁদা দিয়ে শহরে প্রবেশ। চাঁদা না পেলেই পুলিশ মামলা দেয়ার জন্য প্রস্তুত। কাপ্তাই এলাকার সড়কের সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সমিতিকে চাঁদা না দিলে পুলিশ দিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানী করা হয় বলেও অনেকে শ্রমিক অভিযোগ করেছেন। সমিতি ২০০৯ সার থেকে কার্যক্রম শুরু হলেও সমিতির ফান্ডে এক টাকাও নেই। সব নেতাদের পকেটে।
জানা গেছে, চান্দগাঁও থানাধিন কাপ্তাই সড়কের মাথায় অটো টেম্পু সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন নামের বিএনপি-জামায়াতের একটি চক্র গণহারে মাসে কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে আসছে। এ চাঁদাবাজির ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। সমিতির অধিনে প্রায় ১৫০০ জন সদস্য রয়েছে। সমিতির নামে দৈনিক কোনো চাঁদা নেয়ার বিধান না থাকলেও প্রতিদিন জোর পূর্বক ১০/২০ টাকা করে গাড়ি প্রতি চাঁদা দিতে হচ্ছে। প্রতিমাসে সমিতির লোকজন দিয়ে সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মানিক ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে জোর পুর্বক প্রতি মাসে ১০/১২ লক্ষ টাকা চাঁদা তুলে সমিতির নামে শুধু মাত্র ২/৩ হাজার টাকা দেখানো হলেও চাঁদা তুলার কাজে যারা কাজ করে তাদের বেতন ভাতা বলে সম্পুর্ণ টাকা তারা হাতিয়ে নেয় বলে সাধরণ সদস্যদের অভিযোগ। দৈনিক চাঁদার পাশাপাশি মাসিক প্রতি সিএনজিকে ৫০০/৪০০ টাকা করে টোকেন নিতে হয়। মাসিক টোকেনে দুই হাজার সিএনজি টেক্সী প্রায় ১০ লক্ষ টাকা টোকন বাণিজ্যও অভিযোগ সমিতির নেতা ও পুলিশের পকেটে এসব টাকা ভাগাভাগির করা হয় বলে সমিতির সদস্যরা জানিয়েছেন। সমিতির সদস্য আবদুল করিম নামের এক সিএনজি চালক জানান, আমাদের দৈনিক চাঁদা টাকা ছাড়াও পুলিশের মাসিক টোকেন বাবদ ৫০০ টাকা, বিভিন্ন সময় বিএনপি জামায়াতের কর্মসূচিতে সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হয়। আমাদের চাঁদার টাকায় পুলিশ ও নেতারা চলেন। সাধারণ সদস্যরা হিসাব চাইলে তাদের মারধর করেন।
সমিতির এক সদস্য জানিয়েছেন সমিতির নামে টাকাগুলো তুলে কাপ্তাই পুলিশের বিট ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম ও ট্রাফিক পুলিশের টিআই তোফাজ্জল হোসেনসহ সবাই মিলে প্রতিদিন হিসেবে করি। সমিতির নেতারা একটি অংশ থানা পুলিশের একটি অংশ, ট্রাফিক পুলিশের একটি অংশসহ বিভিন্ন অনুপাতে টাকাগুলো ভাগ করা হয়। চাঁদাবাজির ঘটনায় এলাকার প্রায় সময় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। চাঁদাবাজির স্পটটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জন নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। পরিবহণ শ্রমিকদের জিম্মি করে সমিতির নামে চাঁদাবাজির ঘটনায় প্রতিবাদ করতে গিয়ে মিথ্যা মামলা ফাঁসিয়ে জেলে ঢুকিয়ে চান্দগাও থানা আওয়ামী মোটর চালক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আজাদকে।
এ চাঁদাবাজির বিষয়ে কাপ্তাই সিএনজি অটো টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ মানিক চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করে বলেন, চাঁদাগুলো সমিতির নামে তুলা হচ্ছে। টাকাগুলো যারা তুলে তারা বেতন ভাতা বাবদ কেটে নিয়ে আর বেশী থাকে না। পুলিশসহ বিভিন্ন জায়গা টাকার ভাগ দিতে হয় ফলে তেমন কিছু থাকে না। সমিতির ফান্ডে কথা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে চান্দগাও থানা আওয়ামী মোটর চালকলীগের সাধারণ সম্পাদক আলা উদ্দীন বলেন, চাঁদাবাজির ঘটনায় কিছুদিন আগেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এখনো অনেকে মেডিকেলে চিকিৎসাধিন রয়েছে। আমার প্রতিবাদ করতে চাইলে বিভিন্ন মামলা হামলা দিয়ে আমাদের হয়রানী করা হয়। চাঁদাবজির টাকা দিয়ে বিএনপি জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। রাঙ্গুনিয়া থেকে বিএনপি জামায়াতের কয়েকজন ক্যাডার এখনো চাঁদাবাজির কাজে নিয়োজিত রয়েছে। পুলিশ চাঁদাবাজিতে তাদের সহায়তা করছেন। এসব বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে পুলিশও চাঁদাবাজদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিভিন্নভাবে সাধারণ শ্রমিকদের হয়রানী করে থাকেন।
চাঁদাবাজির বিষয়ে কাপ্তাই পুলিশ বিটের ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পরিবহণে চাঁদাবাজির বিষয়ে কোনো শ্রমিক আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। তবে যারা চাঁদা নিচ্ছে তাদের সমিতির নামে সরকারী নিবন্ধন রয়েছে। পুলিশের নামে চাঁদা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা চাঁদা নেয়ার সময় পুলিশের নাম ব্যবহার করে থাকেন কিনা সেটা আমি বলতে পারব না। সমিতির মধ্যে দলীয় গ্রুপিং রয়েছে তাদের গ্রুপিং এর কারণে অনেক সময় অনেক হামলার ঘটনাও প্রায় সময় ঘটেছে বলে তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে মোহরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দীন বলেন, আমার এলাকায় পরিবহন শ্রমিকদের কাছ থেকে জোর পুর্বক চাঁদাবাজির বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিরোধ করার জন্য রাজনৈতিকভাবেও একাধিকবার আলোচনা করেছি। যারা চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে তারা সবাই বিএনপি জামায়াতের ক্যাডার তাদের অধিকাংশদের বাড়ি নগরীর বাইরের লোকজন। পুলিশ চাঁদাবাজির টাকা থেকে ভাগ পাওয়া আমরা দলীয়ভাবে বাঁধা দেয়ার চেষ্ঠা করলেও পুলিশের অসহযোগিতার কাররণে চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না। চাঁদাবাজির নিয়ে প্রতিদিন চাঁদাবাজদের সাথে পুলিশের উপস্থিতিতে পরিবহন শ্রমিক ও সমিতির নেতাদের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। চাঁদা না দিলে সমিতির নেতারা পুলিশকে মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন সাধারণ শ্রমিকদের। কাপ্তাই রাস্তার মাথায় চাঁদাবাজির বিষয়টি পুলিশ কমিশনার ও মেয়র মহোদয়কে আমরা জানিয়েছি।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply