২৩ এপ্রিল ২০২৪ / ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:০৪/ মঙ্গলবার
এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ২:০৪ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে স্মৃতিসৌধের দাবীতে সিআরইউর স্মারকলিপি

     

কাজী ইব্রাহিম সেলিম : চট্টগ্রামে স্মৃতিসৌধ নির্মানের দাবীতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংবাদিক বৃন্দরা। গতকাল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোঃ জিল্লুর রহমার চৌধুরী (সিআরইউ) সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। তিনি মানসম্মত শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে বলেন, সাংবাদিকদের লেখনীর মাধ্যমে যেন মানসম্মত শিক্ষার্জন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কারণ মানসম্মত শিক্ষা ব্যতীত জাতি অন্ধাকারে ডুবে থাকে। উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের দিকে অগ্রসর হতে পারে না। সেজন্য তিনি শিক্ষকদের ভূমিকা এবং সংশ্লিষ্টদের সুষ্ঠু পদক্ষেপের কথা ঊল্লেখ করেন। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর মাঝে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা নেই। নেই শিক্ষার্থীদের অগ্রগতিমূলক যথাযথ পদক্ষেপ, এই অভিযোগ সচেতন মহলের। সেখানে আছে দুর্ভোগ আর দুর্ভোগ। ত্রুটি না থাকলেও কম মেধাসম্পন্ন হিসেবে চিহিৃত করে শিক্ষার্থীদের ত্রুটিতে সমস্যার সৃষ্টি হয় ইস্যুতে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের আরও পিছিয়ে পড়ার মতো দুর্ভোগে নিক্ষিপ্তি করা হয়। ত্রুটিকে দূর করার মতো ও ভুলকে সংশোধন করে শিক্ষার্থীদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে মতো মেধা ও দক্ষতা নেই বললে চলে! এরকম অনেক ঘটনার মাঝে একটি হল গত ২০১৫ সালে এসএসসির চট্টগ্রামের প্রায় ৩৬৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার পর ফলাফলে অনুপস্থিত, ১১ বিষয়ের স্থলে ১৪ বিষয় পরীক্ষা দেওয়া দেখানো, ২০১৫ সালের স্থলে ২০১৪ সালের রেজাল্ট দেখানোসহ নানা সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ পাঠালে ৬ মাসেও উত্তর এসেছে অপরিবর্তিত। শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিচালক বদরুল হায়দার চৌধুরীর নিকট গেলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু প্রধান কার্যালয় থেকে অভিযোগের উত্তর এসে গেছে এখানে আর কিছু করার নেই।’ শিক্ষার্থীরা সাংবাদিককে অভিযোগ জানাবে বলিলে তিনি বলেন, ‘কোনো লাভ হবেনা।’ সেজন্য শিক্ষার্থীরা এক সাংবাদিকের সহযোগীতায় পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে বিষয়টি ব্যাপক প্রচার হয়। ২৮ এপ্রিল ২০১৬ শিক্ষার্থীরা আমাদের দাবি মানতে হবে-শিক্ষার্থী হয়রানি বন্ধ কর করতে হবে। দায়ী কর্মকর্তাদের বহিস্কার চাই সঠিক ফলাফল প্রকাশ চাই। এভাবে স্লোগান দিয়ে নগরীর ডিসি হিল, চেরাগী পাহাড় মোড় হয়ে এসে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচীর মাধ্যমে ১৫ দিনের মধ্যে সঠিক ফলাফল প্রকাশ না করলে কঠোর কর্মসূচী আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু ২৭ দিনের মধ্যেও সঠিক ফলাফল প্রকাশ না হওয়ায় সুচতুর শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারেন এক সাপ্তাহ পর এইচএচসিতে ভর্তি হওয়ার সময় শেষ হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের আর কিছুই করার থাকবে না। তাই তারা ২৫ মে ২০১৬ সকাল ১০ টা থেকে বিক্ষোভ করে এসে বাউবি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রধান ফটকে অনশন কর্মসূচি পালন করেন। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন পালনের কথা থাকলেও অনাহারে ও তীব্র তাপদাহে বিকাল ৪ টায় এক শিক্ষার্থী অচেতন হয়ে পড়লে কবি তসলিম খাঁ শিক্ষার্থীদের পানি পান করে অনশন ভাঙেন। কিন্তু দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি চলতে থাকবে বলে শিক্ষার্থীরা ঘোষনা দেন। সেইদিন রাত ১০ টায় আন্দলনকারী সব শিক্ষার্থী পাসের ফলাফল হাতে পেয়ে খুশিতে মেতে উঠেন। পরদিন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিচালক এককর্মকর্তাকে বলছেন, ‘সারা দেশে  ২ হাজারের মতো শিক্ষার্থী এরকম সমস্যায় পড়েছেন। চট্টগ্রামের আন্দোনকারী এই শিক্ষাথীদের পাসের সঠিক ফালাফল ছিনিয়ে আনা হয়েছে। অন্য এক শিক্ষার্থী প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে বাংলা পাসের রেজাল্ট হাতে পেল। পরের বছর অন্যান্য বিষয় পরীক্ষা দিলে বাংলায় অনুপস্থিতের রেজাল্ট এল। সেই অভিযোগ জানাতে গাজীপুরে গেলে যুগ্ম পরীক্ষ নিয়ন্ত্রক এএসএম নোমান আলমের নির্দেশে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নাজনীন নেগার বলেন, তুমি পাস করেছ। ৮/১১/১২ তে বিএ ভর্তি হওয়া শেষ তারিখ তাৎক্ষণিকভাবে পাসের ফলাফল হাতে পেলে শিক্ষার্থী বিএতে ভর্তি হওয়ার আগ্রহী জানালে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘পাসের রেজাল্ট শীট না আসার সমস্যাটা যখন হয়েই গেছে ৮/১১/১২ এর পর তোমার পাসের ফলাফল আমরা চট্টগ্রামে পাঠাব এর পরের বছর তুমি বিএতে ভর্তি হতে পারবে।’ সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এভাবে দুর্নীতি ফাঁদ সৃষ্টি কারার কারণে শিক্ষার্থী নিরুপায়। এই সুযোগে বিএতে ভর্তির সময় থাকাবস্থায় ৮/১১/১২ এর আগে ফলাফল পাঠানোর ব্যবস্থা করবে বলে ছোট এক কর্মচারী দুর্নীতি করেন। তবুও হয়রারি থেকে মুক্তি মিলেনি। ৪ বছর কষ্ট পাওয়ার পর শিক্ষার্থী ক্ষিপ্ত হয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আসাদুজ্জামান উকিলকে ফোনে বিষয়টা জানান। এরপর সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শিক্ষার্থীকে বলেন, ‘তুমি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের নিকট আর ফোন করো না তুমি যে বাংলায় পাস করেছ সেই রেজাল্টটা আমরা পাই নি, তুমি বাংলা পাসের রেজাল্টটা আবার পাঠার। বাংলা পাসের রেজাল্ট ইস্যুতে ৪ বছরে যেই সমস্যার সমধান হয়নি তা এর ৪ দিনের মধ্যেই সমাধান হল। শিক্ষার্থী পাসের ফলাফল হাতে পেল। বাউবির উপাচার্যের সামনে যুগ্ম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলে উঠলেন, ৪ বছর পর হলেও একটা সমস্যার সমধান করেছেন কিন্তু ৪ বছর পর যেই সমস্যা সমাধান করতে পেরেছেন সে সমস্যাটা ৪ সাপ্তাহের মধ্যে সমাধান করে শিক্ষার্থীকে মুক্তি দেননি কেন সেই কৈপিয়ত চায় নি উপাচার্য। এসব অনাকাঙ্কিত ও শিক্ষার্থীদের এত বড়বড় সর্বনাশ করার ঘটনা গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হওয়ার পর, ঊর্ধ্বতন মহল থেকে চাপও সৃষ্টি করেছেন। তার পরও এখনো পর্যন্ত তারা শিক্ষার্থীর ক্ষতি করতে তিল পরিমাণও ভয় করছে না। গত বছর যুগ্ম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এএসএম নোমান আলম শিক্ষার্থীকে বলেছিলেন ডিসেম্বরের ছুটিতে ছিলেন তাই সনদপত্র নাম সংশোধন করতে পারেনি। এরপর শিক্ষার্থীর কলে বলেছিলেন সংশোধন হবে। পরে আবার বলেন, সংশোধ হচ্ছে, ২৬ মে অক্টোবরের পর হবে। তথ্য প্রযুক্তির উন্নত ব্যবহারের ফলে নিজেদের অধিকার আদায়ে শিক্ষার্থী লেখালেখি করেছে বিধায় যুগ্ম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘তোমার হাতে কলম আছে আমার হাতেও কলম আছে।’ এইসব বলে ক্ষুদ্র একজন শিক্ষার্থীর সাথে যুগ্ম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মত একজন বড় কর্মকর্তার যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার সামীল। জেলা প্রশাসক অনেক প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, তা কার্যকর হচ্ছে কি? দিকনির্দেশনা মধ্যে আনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি হল শিক্ষা গ্রহণের কথা। বাউবিতে প্রতিনিয়তই যদি এমন হয় তাহলে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা কি অগ্রগতির দিকে অগ্রসর হতে পারবে?

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply