২৪ এপ্রিল ২০২৪ / ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ১০:৪০/ বুধবার
এপ্রিল ২৪, ২০২৪ ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

রাজারহাটে কর্মসৃজন কর্মসূচীতে অতি দরিদ্রদের তালিকায় ওরা কারা?

     

সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম

রাজারহাটে অতিদরিদ্রদের কর্মসৃজন কর্মসূচীর প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অধিকাংশ প্রকল্পে সচ্ছলদের নাম তালিকাভূক্ত করায় কর্মসূচীর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত দরিদ্ররা। ফলে সরকারের মূল উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,অতিদরিদ্র মানুষের আপদ কালীন (কর্মহীন) সময়ে কর্মসৃষ্টির উদ্দেশ্যে সরকার এই কর্মসূচী চালু করে। চলতি বছর জানুয়ারীর শেষ সপ্তাহ থেকে প্রথম পর্যায়ে রাজারহাট উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৬৩টি প্রকল্পে ৩হাজার ১১০ জন শ্রমিকের মাধ্যমে ২কোটি ৬৫লাখ টাকার বিপরীতে এই কর্মসূচীর আওয়াতায় কাঁচা রাস্তা রক্ষানাবেক্ষন কাজ শুরু হয়। তবে অধিকাংশ প্রকল্প চেয়ারম্যানরা সরকারী নীতিমালা অনুসরন না করে ব্যক্তি স্বার্থে সচ্ছল ব্যাক্তিদের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করায় কর্মসূচীর সুফল বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত হতদরিদ্ররা। এছাড়া তালিকায় উল্লেখিত শ্রমিকের তুলনায় কাজে কম শ্রমিক ব্যবহার করেও অনেক প্রকল্পে সরকারী অর্থ আতœসাত করার অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন উপজেলার ঘড়িয়াল ডাঁঙ্গা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খিতাবখাঁ মৌজায় অতিদরিদ্রদের চলমান কর্মসৃজন কর্মসূচীর কাজে দেখা যায়, কাগজে কলমে ১শ জন শ্রমিকের নাম লিপিবদ্ধ থাকলেও কাজ করছেন ৮৮জন। এতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য আবুবক্করের পুত্র নুরজামাল,লালন ও ভাতিজা আঃ মান্নান সহ নিজ পরিবারের ৮/১০জনের নাম তালিকায় অন্তভূক্ত দেখানো হয়েছে। তবে সাংবাদিকের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তিনি আশপাশের আরো ৪জনকে ডেকে এনে তাদেরকেও কর্মসৃজন কর্মসূচীর অন্তর্ভূক্ত শ্রমিক হিসেবে দাবী করেন। এরমধ্যে আবার আজিজার,ফজলুল হক,আঃরব ও আলেয়া খাতুন নামের ৪জন অনুপস্থিত শ্রমিকের পরিবর্তে বদলি শ্রমিক হিসেবে বিপদ,নবীজ,আনোয়ার ও বিউটি নামের ৪জনকে দেখানো হয়।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন,তালিকাভূক্ত শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেকেই সচ্ছল। এছাড়া অধিকাংশদের রেশনিং সহ সরকারীভাবে অন্যান্য সুবিধাভূগীর তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত রয়েছে বলে জানান। এরমধ্যে আজিজল,মজিবর রহমান,আব্দুর রাজ্জাক,দুলাল,মান্নান,প্রকাশ ও প্রভাত চন্দ্র সহ অনেকের পাকা বিল্ডিং বাড়ী রয়েছে। প্রকল্পের পার্শ্বে কামার পাড়া গ্রামের শ্বদাধরের স্ত্রী ভুদো বালা ও অশান্ত রায়ের স্ত্রী গীতা রানী জানান,তারা নিতান্ত গরিব ও অসহায় হওয়ার পরও টাকা দিতে না পারায় কর্মসৃজনের তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভূক্ত হয়নি। এমনকি এই প্রকল্পের আওতায় অজ্ঞাত কারনে নির্ধারিত প্রকল্পের বাইরে পাঁকা রাস্তার দু’ধারে মাটির কাজ করতে দেখা গেছে। একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সুলতান বাহাদুর মৌজায় দেখা যায়, কাগজে কলমে মহিলা শ্রমিক ৩১জনের পরিবর্তে ২৪জন ও পুরুষ শ্রমিক ১০জনের পরিবর্তে ৭জন কাজ করছেন। তবে এসময় ইউপি সদস্য এন্তাল আলী আশপাশ এলাকার আরো ৬জনকে দেখিয়ে বদলী শ্রমিক হিসেবে কাজ করার দাবী করেন। তালিকায় অনেক সচ্ছল ব্যাক্তির নাম থাকার কথা জানান এলাকাবাসী। সরেজমিনে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ইউনিয়নের চতুরা,রামহরি,সুকদেব ও পাড়ামৌলা মৌজার চলমান প্রকল্পেও একই ধরনের অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। এসব প্রকল্পে কাজে অনিয়মের ব্যাপারে নানা অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যথাযথ তদারকি ও দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করেন সচেতন মহল।
নিজের পরিবারের সদস্যদের কর্মসৃজনের তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে খিতাবখাঁ মৌজার ইউপি সদস্য আবু-বক্কর জানান,আমার ২ছেলে ও ভাতিজাদের কর্মেই দিনমজুরী। দ্বিতীয় পর্যায়ের তালিকায় সচ্ছল ব্যাক্তিদের নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম অন্তর্ভূক্ত করা হবে বলে জানান। ইউপি সদস্য এন্তাল আলী জানান, বাড়তি ব্যয় মেটানোর জন্য কিছু অনিয়ম করতে হয়।
ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রবীন্দ্র নাথ কর্মকার জানান,তালিকায় অনিয়মের বিষয়ে আমি নিজেই কাল থেকে তদারকি করব,সচ্ছল ব্যাক্তির নাম থাকলে বাতিল করা হবে। শ্রমিক কম থাকার বিষয়ে জানা ছিল না।
উক্ত ইউনিয়নের কাজ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত (ট্যাগ অফিসার) উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান,নিজের অফিসের কাজের পর এসব নিয়মিত তদারিকী সম্ভব হয় না। তবে উদ্ধোধনের সময় কাজ তদারকি করেছি।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তদারকি কর্মকর্তা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা প্রশিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম জানান,এবারে কখন কাজ শুরু হয়েছে জানা ছিল না, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে অবগত করেননি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম জানান, এসব বিষয়ে আমার কাছে কেউ আবেদন করেনি,আমার জানা নেই।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply