২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ৩:৫০/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারে সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বাধ্য করা হয় পোপকে

     

মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে আকস্মিক বৈঠক করতে বাধ্য করা হয়েছে খ্রিস্টান ধর্মের রোমান ক্যাথলিক শাখার প্রধান ধর্ম গুরু পোপ ফ্রান্সিসকে। ভ্যাটিকানের সরকারি প্রকাশনা ক্রাক্সনাও এর এক প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে। ভ্যাটিকান প্রতিবেদকের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিয়ানমারের কার্ডিনাল চার্লস মং বো’র নির্দেশনা মেনেই পোপ শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে সফরের প্রথমদিন সোমবার আকস্মিকভাবে অনির্ধারিত বৈঠকে মিলিত হন। মিয়ানমারের কার্ডিনাল নিজেও এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এদিকে মিয়ানমারে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা নাম ও তাদের নির্যাতনের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন পোপ। তবে সার্বিকভাবে তিনি সকল সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার আহবান জানিয়েছেন। মিয়ানমার সফররত পোপ ফ্রান্সিস  মঙ্গলবার সেদেশের প্রেসিডেন্ট নি কিয়াও এবং স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি’র সঙ্গে বৈঠক করেন।

দীর্ঘ ভ্রমণের পর মিয়ানমার সফরের প্রথম দিন সোমবার বিশ্রামের জন্য পোপ ফ্রান্সিস কোনো কর্মসূচি রাখেননি। আর মিয়ানমারের সিনিয়র জেনারেল মিং-এর সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল সফরের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর। তবে প্রথমদিনই ইয়াঙ্গুনে আর্চ বিশপের বাসভবনে পোপের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন মিয়ানমারের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। জেনারেল মিং অনের অফিশিয়াল ফেসবুক পোস্ট এবং ভ্যাটিকান মুখপত্র ক্রাক্স-এর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, বিশেষ অভিযান ব্যুরোর তিনজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও ছিলেন ওই বৈঠকে। শীর্ষস্থানীয় এই সামরিক কর্মকর্তাদেরই রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন এবং ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে দেশছাড়া করার মূল হোতা বলে মনে করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়াঙ্গুনে পৌঁছানোর পর কার্ডিনাল চার্লস মং বো পোপকে শীর্ষ সেনা-কর্মকর্তা মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে দেখা করার নির্দেশনা দেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিয়ানমারের কার্ডিনাল পোপকে বৈঠকের তাগিদ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, পোপ এই নির্দেশনা না মানলে মিয়ানমারের খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতো।

গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে রোহিঙ্গা ইস্যু এড়িয়ে গেলেন পোপ

পোপ ফ্রান্সিস মিয়ানমারে দেওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংসতার ইস্যুটি এড়িয়ে গেছেন। তবে তিনি মিয়ানমারকে প্রত্যেক নৃগোষ্ঠীর প্রতি সম্মান দেখানোর আহবান জানিয়েছেন। বিবিসি’র এক খবরে বলা হয়েছে, গতকাল মিয়ানমারের কার্যত সরকার প্রধান অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন পোপ ফ্রান্সিস। এর পর তিনি বক্তব্যে বলেন, মিয়ানমারের ভবিষ্যত্ অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে। এই শান্তির ভিত্তি হবে সমাজের প্রতিটি মানুষের মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা, সকল জনগোষ্ঠী ও এর পরিচয়ের প্রতি শ্রদ্ধা, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা, যা কোনো ব্যক্তিকে বা গোষ্ঠীকে আলাদা করে দেয় না।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের বড় সম্পদ হলো দেশটির জনগণ। আর এ জনগণ প্রচণ্ড রকমের দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। দীর্ঘদিনের বিভাজন সৃষ্টিকারী অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং দ্বন্দ্বের কারণে তারা ধারাবাহিকভাবে ভোগান্তিতে আছে। শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য জাতি হিসেবে মিয়ানমারকে জনভোগান্তি নিরসনকে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক অগ্রাধিকার দেওয়ার আহবান জানান। তিনি আরো বলেন, ধর্মীয় ভিন্নতা বিভাজন ও অবিশ্বাসের কারণ নয়, বরং এটি ঐক্য, ক্ষমা, সহিষ্ণুতা এবং বুদ্ধিদীপ্ত জাতি গঠনের শক্তি।

মিয়ানমার সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সোচ্চার হতে পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি আহবান জানিয়েছিল মানবাধিকার সংগঠনগুলো। যদিও তার সফরের আগেই মিয়ানমারের খ্রিস্টান ক্যাথলিক গির্জা আহবান জানায় যে, তিনি যেন বক্তব্যে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার না করেন।

পোপের সঙ্গে থাকা মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর সু চিও তার বক্তব্যে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি। তবে তিনি বলেন, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইস্যুগুলো রাখাইনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আস্থা ও বোঝাপড়া, ঐক্য ও সহযোগিতার সম্পর্ককে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দিয়েছে।

সু চির সঙ্গে বৈঠকের আগে ইয়াঙ্গুনে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পোপ। এ সময় পোপ ফ্রান্সিস জোরালোভাবে বৈচিত্র্যকে সম্মিলনের হাতিয়ার করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। পোপ বলেন, ‘বৈচিত্র্যই মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে। প্রত্যেক ধর্মেরই যেমন নিজস্ব সমৃদ্ধি, ঐতিহ্য রয়েছে এবং সম্পদ ভাগাভাগি করার কথা বলা আছে; তেমনি প্রত্যেক ব্যক্তিরও ভিন্নতা, নিজস্ব মূল্যবোধ, নিজস্ব সম্পদ রয়েছে। এটি কেবল তখনই হতে পারে যখন আমরা শান্তিতে থাকব। আর ভিন্নতার ঐক্যতানের মধ্যেই এ শান্তির বীজ নিহিত। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আয়ে লোয়িন নামের এক মুসলিম নেতা।

সু চির সম্মান প্রত্যাহার করেছে অক্সফোর্ড

ব্রিটেনের অক্সফোর্ড শহরের নগর কাউন্সিল অং সান সু চিকে দেওয়া সম্মান প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অক্টোবরে তার এ খেতাব প্রত্যাহারের পক্ষে ভোট দেয় কাউন্সিল। নগর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মিয়ানমার রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি যে আচরণ করছে, তাতে সু চি আর ‘ফ্রিডম অব দি সিটি’ নামের ওই পুরস্কারের যোগ্য নন। বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, অক্সফোর্ড শহরের সাথে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চির নাম জড়িয়ে আছে, কারণ তিনি সেখানে পড়াশোনা করেছিলেন।সৌজন্য ইত্তেফাক

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply