১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৪:৩৩/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

মহাসংঘনায়ক বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরোর’র ১০৮তম জন্ম বার্ষিকী আজ

     


 উজ্জ্বল কান্তি বড়ুয়া
আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি বাঙালী বৌদ্ধদের অবিসংবাদিত নেতা বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসভার ২৪তম মহাসংঘনায়ক শ্রীসদ্ধর্মভাণক বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো’র ১০৮তম জন্ম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ ঢাকা ধর্মরাজিক মহাবিহারে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী গ্রহন করেছে।
এছাড়া মহাসংঘনায়ক ভান্তের পবিত্র জন্মজনপদ হোয়ারাপাড়া গ্রামে ভন্তের পবিত্র শ্মশান ভেদিতে পুষ্পমাল্য প্রদানসহ ধর্মীয় ও বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে মহা সমারোহে পালন করা হবে ।
মহাসংঘনায়ক বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো ২৩ ফেব্রুয়ারী ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলাধীন পূর্বগুজরা হোয়ারাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গৃহী নাম ছিল শশাঙ্ক বড়ুয়া । ১৯২৫ সালে তিনি শ্রামণ্যধর্মে দীক্ষিত হন এবং ১৯৩০ সালে সঙ্ঘনায়ক অগ্রসার মহাস্থবিরের নিকট উপসম্পদা গ্রহণ করেন। ১৯৩৪ সালে বিশুদ্ধানন্দ বৌদ্ধধর্মে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য শ্রীলঙ্কার বিদ্যালঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে তিন বছর অধ্যয়নের পর ১৯৩৭ সালে তিনি ‘শ্রীসদ্ধর্মভাণক’ অভিধায় ভূষিত হন। পরে দেশে ফিরে বিবিধ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও শিক্ষামূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত হন। তিনি বেশ কয়েকটি বিহার ও পালি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় বেণীমাধব বড়ুয়া, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী এবং অন্যান্য বিদগ্ধজনের সহায়তায় একটি ত্রাণ কমিটি গঠন করে মহাসংঘনায়ক বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো আর্ত মানবতার সেবায় এগিয়ে আসেন। পরবর্তীকালে দরিদ্র বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর কল্যাণার্থে তিনি নিজ গ্রামের সুদর্শন বিহারে ‘অগ্রসার অনাথালয়’ নামে একটি অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৪৯ সালে তিনি ‘পূর্ব পাকিস্তান বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ নামে পরিচিত।
মহাসংঘনায়ক বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কমিটিতে মর্যাদাপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ১৯৬১ সালে ঢাকায় রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সংবর্ধনা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিভিন্ন সময়ে শ্রীলঙ্কা, বার্মা, কাঠমন্ডু, ভারত, জাপান, আমেরিকা প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন এবং বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে মূল্যবান বক্তৃতা দেন। ১৯৬৬ সালে তিনি শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত বিশ্বধর্ম সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং বিশ্বধর্ম সংস্থার অন্যতম কর্মী হিসেবে বাংলাদেশে এর একটি শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি জাপানে অনুষ্ঠিত বিশ্বধর্ম সম্মেলন এবং হংকং-এ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ সেমিনারে যোগদান করেন এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তি সংগ্রামের সময় নির্যাতিত মানুষকে রক্ষার জন্য তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে বেড়ান এবং বৌদ্ধদের জন্য বিশেষ পরিচয়পত্র প্রবর্তন করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি ‘মহাসংঘনায়ক’ পদে অধিষ্ঠিত হন।
মহাসংঘনায়ক বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো তাঁর বহুমাত্রিক কর্মকান্ডের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার উপাধি ও সম্মানে ভূষিত বিশ্বে শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এশিয়ান বুদ্ধিস্ট কনফারেন্স ফর পীস তাঁকে স্বর্ণপদক (১৯৯০) এবং নরওয়ের মহাত্মা গান্ধী ফাউন্ডেশন ‘এম.কে গান্ধী পীস প্রাইজ’ (১৯৯৩) প্রদান করে। সমাজ সেবায় বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৫ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মরণোত্তর “২১ শে পদকে” ভূষিত হয়।
১৯৯৪ সালের ২ মার্চ বিশ্ব বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে শোক সাগরে ভাসিয়ে চট্টগ্রামের হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মহাসংঘনায়ক শ্রীসদ্ধর্মভাণক বিশুদ্ধানন্দ মহাথের মহাপ্রয়াণ লাভ করেন। এক বছর পর ১৯৯৫ সালের ১১-১৩ জানুয়ারি তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply