২৮ মার্চ ২০২৪ / ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:৩২/ বৃহস্পতিবার
মার্চ ২৮, ২০২৪ ২:৩২ অপরাহ্ণ

প্রবীণদের শান্তি, ঠিকানা হউক পরিবার

     

মাহমুদুল হক আনসারী
প্রবীণদের শান্তির ঠিকানা হউক পরিবার। নবীন থেকে প্রবীণ হয়েছেন এ মানুষগুলো। তাঁদের অনেকগুলো অভিজ্ঞতা আছে। তাঁরা এক সময় শিশু ছিল। ছিল যুবক, কর্মক্ষম ছিলো, চাকরী আর কর্মজীবী ছিলো। পরিবার সমাজ রাষ্ট্রে তাঁদের পদচারণায় সমাজ নানাভাবে উপকৃত হয়েছে। দেশ জাতি সমাজ ও পরিবারকে অনেক কিছু দিয়েছে। তাঁরা পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য তাদের মেধা যোগ্যতা দিতে কোনো ধরনের কার্পণ্যতা দেখিয়েছে বলে মনে হয়না। ত্যাগ মেধা, শক্তি সব দিকে তাদের প্রবল শক্তি দিয়ে তাদের উপর দাঁড়িয়ে আছে সমাজ ও রাষ্ট্র। তাঁদের মধ্যে কেউ বিতরণ করেছে, শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান, শারিরীক শক্তি মেধা। অমূল্য জীবন যৌবন ত্যাগ করে পরিবার পরিজনের পিছনে সব কিছু বিলীন করে দিয়ে হয়ে যান বয়োবৃদ্ধ। হয়ে পড়েন শক্তিহীন, মেধাহীন। চলাচলে অক্ষম একজন মানুষ কানে, চোঁখে কম দেখেন ও কম শুনেন। শারিরীকভাবে হয়ে পড়েন নানাভাবে অসুস্থ। সমাজে এসব মানুষের সংখ্যা হিসেব করলে অনেক হবে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু মানুষকে দেখা যায়, লাঠি হাতে ভর করে পথে ঘাটে রাস্তায় মানুষের কাছে সাহায্য চায়। পেটের জন্য পরিবারের জন্য তারা কোনো কোনো সময় এভাবে পথে নামছে। হয়তো বা তাঁদের মধ্যে কারো বয়স্ক স্ত্রী আছে। অন্য কোনো সমস্যা আছে। আর্থিক সংকট আছে। এমন অভাবের কারণে পেটের পীড়ায় আর যন্ত্রণায় রাস্তায় অফিস গাড়ীতে মানুষের নিকট হাত পাতে। বয়স্ক মহিলা-পুরুষ অনেককে চোঁখে পড়ে। তাদের চেহারা আর হাত পাতা দেখলে কোনো মানবদরদী মানুষ কিছু না দিয়ে পারেনা। দু-একটি পয়সা তাঁদের দিতেই হয়। এমনভাবে করুণা ভিক্ষা চায় তাদের চোঁখে মুখে দেখলে সমাজে তাদের অবস্থা ও পরিণতির হালচাল কেমন আছে তা নিয়ে ভাবতে কষ্ট হয়। তারা তাদের ছেলে সন্তান মেয়ে, স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন কারো সাথে ছিলো। আজকে হয়তো সে আত্মীয় স্বজন সন্তানাদী ঐ মানুষগুলোকে ফিরে দেখছেনা। তাদের এ বয়সে তাদের পাশে আসছেনা। ছেলে সন্তান অথবা পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের ছেড়ে অন্য কোথাও থাকছে। এ প্রবীণ বৃদ্ধ বয়স্ক মানুষগুলোকে বোঝা মনে করে বের করে দিয়েছে। মনোমালিন্যও হতে পারে। নানা ধরনের কারণ থাকতে পারে এ প্রবীণ মানুষগুলোকে নিয়ে। এমন ধরনের প্রবীণ অনেকগুলো মানুষ যারা নিত্যদিন পথে ঘাটে হাটে অন্য মানুষগুলোর নিকট হাত বাড়ায়, সংখ্যায় তাঁরা দিন দিন বাড়ছে। সঠিকভাবে কী কারণ এখানে আছে সেটা বের করা আমার পক্ষে সম্ভবনা। তবে এ সংখ্যা এখন উদ্বেগজনক। সমাজের নানা অস্থিরতা, পারিবারিক কলহ, অশান্তি এর অন্যতম কারণ বলে মনে হয়। যে কারণেই থাকুক না কেন তাঁরা এ সমাজেরই অংশ। তারা আমাদের সমাজের প্রবীণ মানুষ। তাঁরা এক সময় সমাজ পরিবার রাষ্ট্রকে তাদের জীবন যৌবন জ্ঞান বিদ্যা দিতে দিতে তাদের সব কিছুই শেষ করে দিয়েছেন। আজকের সমাজের সামনে তাঁরা অসহায়, ভিক্ষুক ছিন্নমূল, অভাবী ও মিসকিন। এ দৃশ্য কোনো উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সম্মানজনক নয়। তাদের ঘোরাঘোরী হাত পাতা অসহায়ত্বকে কোনো মানবতাবাদী অন্তর সহ্য করতে পারেনা। যে সকল পরিবার সমাজ হতে তাদের প্রতি অবহেলা দুর্ব্যবহার তাদের প্রতি ঘৃণা জানানোর ভাষা নেই। এ প্রবীণ মানুষ গুলোর জন্য সমাজের মানবতাবাদী মানুষ গুলোকে ভাবতে হবে। রাষ্ট্রকে প্রবীণ মানুষের সমস্যা কী কী করণীয় তা খোঁজে বের করে আনতে হবে। তার সঠিকভাবে সমাধান ও তাদের সম্মান আশ্রয় জীবনের চিন্তা করতে হবে। ঠিক কী সমস্ত কারণে তারা পরিবার পরিজন হতে বিচ্ছিন্ন সেটা খোঁজে বের করে সমাধান খুঁজতে হবে। ওই প্রবীণ মানুষগুলো সমাজের জন্য বোঝা নয়। তাঁরা আমাদের পথপ্রদর্শক, পথনির্দেশক। সমাজ, রাষ্ট্র উন্নয়নের অংশীদার। তাদের প্রতি পরিবার ও সমাজের অবহেলা কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়। এ সংখ্যার মানুষগুলোকে সম্মান ও সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে রাষ্ট্র ও সমাজের জ্ঞানী গুণী বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রের উচিৎ তাদের মূল সমস্যার জায়গা চিহ্নিত করা। সমাধান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। তাহলে সমাজ রাষ্ট্র জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে আরো সমৃদ্ধশালী ও কদর প্রাপ্ত হবে। ওই মানুষগুলো যখন রাস্তায় হাত পাতে দেশে আগত বিদেশীদের নজরে পড়ে সেক্ষেত্রে দেশের সম্মান ক্ষুন্ন হতে থাকে। নিতান্ত পেট ও পিঠের জন্য তাদের যদি এ ভিক্ষাবৃতি হয় তাহলে সেক্ষেত্রে এ শিক্ষিত অশিক্ষিত প্রবীণ মানুষগুলোর বিষয় রাষ্ট্রকে গভীরভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। না হয় সমাজ তাদের এ আর্তনাদে একদিন অভিশপ্তের তালিকায় পড়ে যাবে। প্রবীণ মানুষগুলোকে সব ধরনের সুযোগ আর সুবিধায় রাখা সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাদের প্রতি অবহেলা আর যন্ত্রণা মেনেনেয়া যায়না। তাঁদেরকে পথে ঘাটে হাত পাতা থেকে বন্ধ করা হউক। তাদের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা দেখানো হউক। পরিবার ও সমাজে তারা যেখানেই তাদের বসবাস সেখানেই যেনো তাদের প্রতি যত্ন ও সম্মান পায় সে ব্যবস্থা রাখা হউক। ছেলে সন্তান যাদের আছে তারা যেনো সঠিকভাবে ওই মানুষগুলোর প্রতি পারিবারিক দায়িত্ব পালন করেন। আসুন ভালোবাসা আদর, যত্ন সম্মান দিয়ে মানবিক দায়িত্ব পালন করি। তাদেরকে বোঝা হিসেবে না ভেবে সম্মান ও কল্যাণ প্রাপ্তীর উদ্দেশ্যে তাদের পাশে থাকি। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রবীণ মানুষদের সুরক্ষায় কর্মসূচী ও বাস্তবায়ন চাই।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply