২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৪:৩০/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৪:৩০ অপরাহ্ণ

চমেক হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় পঙ্গু হওয়া ওয়াহেদার দায়িত্ব নিলেন পূর্বদেশ সম্পাদক মুজিবুর রহমান সিআইপি

     

বাঁশখালী থানার ১নং পুকুরিয়া ইউনিয়নের চাঁন্দপুর গ্রামের মনগাজি বাড়ির মোজাহের আলীর মেয়ে ওয়াহেদাকে চমেক হাসপাতালে পায়ের চিকিৎসা করাতে এনে কেটে ফেলা হয়েছিল হাতটিও। অবশেষে সে বাম পা ও বাম হাত হারিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছে। ওয়াহেদা বর্তমানে বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নে চাঁন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। মায়ের কোলে করে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসায় একমাত্র তার ভরসা। বিশিষ্ট সমাজ সেবক, স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান সিআইপি বাঁশখালীতে স্কুলে যাওয়া অবস্থায় স্বচক্ষে ওয়াহেদা বেগমের এই করুণ দৃশ্য দেখে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং তিনি আজ ৪ নভেম্বর, ২০১৭ থেকে মেয়েটির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান সিআইপি প্রাথমিকভাবে ওয়াহেদাকে ৫০,০০০/- টাকার চেক প্রদান করেন।
আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান সিআইপি বলেন, দরিদ্র পরিবারের পঙ্গু মেয়েটি অসহায় অবস্থায় স্কুলে যাচ্ছে; যা বিবেককে নাড়া দেয়। তাই মেয়েটির দায়িত্ব নিয়েছি। মেয়েটিকে উন্নতমানের কৃত্রিম হাত-পা বানিয়ে দেয়া হবে এবং প্রতিমাসে লেখাপড়ার খরচ দেওয়া হবে। যাতে মেয়েটি অসহায়ত্ববোধ না করে অন্যান্য স্কুল ছাত্রীর মতো বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জাতিকে কিছু দিতে পারে।
মেয়ের বাবা দিনমজুর হত দরিদ্র মানুষ। নাম মোজাহের আলী। তিনি বলেন, চমেক হাসপাতালে ২৪ আগস্ট, ২০১৫ তারিখে মেয়েকে পায়ের চিকিৎসা করাতে এনে তিন চিকিৎসক ও এক ওয়ার্ড বয়ের ভুলের কারণে মেয়ের বাম পায়ের সাথে হাতটিও হারাতে হয়েছে। আমি গরিব বলে ন্যায়বিচার পাইনি। আমার মেয়েটির দায়িত্বভার আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান সিআইপি নিয়েছেন বিধায় আমি তাঁর কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ।
ওয়াহেদা বেগমের স্বজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চবি প্রগতিশীল হলুদ দলের সদস্য ড.আ.ম.কাজী মুহাম্মদ হারুন উর রশীদ বলেন, ডাক্তারগণের ভুল চিকিৎসায় মেয়েটি আজ পঙ্গুত্ববরণ করেছে। আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান সিআইপি এই অসহায় ও হতভাগ্য পঙ্গু মেয়েটির দিকে নজর দিয়েছেন বলে মেয়েটি এখন কৃত্রিম পায়ে হেঁটে স্কুলে যাওয়া-আসা লেখা-পড়া করতে পারবে এবং স্বাভাবিক কাজ করতে পারবে।
উল্লেখ্য, ৫ বছরের মেয়ে ওয়াহেদা বেগম ১নং পুকুরিয়া ইউনিয়নের চাঁন্দপুর গ্রামের মনগাজী বাড়ির সামনে ২৪ আগস্ট, ২০১৫ তারিখ বাড়ি থেকে রাস্তায় উঠে গেলে পিকআপের চাকায় পা থেঁতলে যায়। এক্সিডেন্টের পর ২৪ আগস্ট, ২০১৫ তারিখ চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৬ নং ওয়ার্ডে ৮৮ নং বেডে দুপুরে ভর্তি করা হয়। ঐ দিন রাত ১১.০০ টায় অপারেশন করে বাম পায়ের নিচ অংশ কেটে ফেলা হয়। এর ৩ দিন পর অপারেশন করা ঐ পায়ের অংশে পুঁজ বের হতে থাকে। এরপর মেয়েটির আবার হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলে। পায়ের অংশটি দু’বার অপারেশন করেন ২৬ নং ওয়ার্ডের সহকারী রেজিষ্ট্রার ডা. রাজীব বড়–য়া। পায়ের এ অপারেশনের পর ইনজেকশন দেয়ার জন্য বাম হাতে একটি ক্যানোলা দেন ওয়ার্ডবয় নুরুল হুদা। ক্যানোলাটি দেয়ার সময় রগের সাথে মাংসপেশীতে চলে যায়। এতে দু’টি ইনজেকশনের ঔষধ মাংসপেশীতে ছড়িয়ে পড়লে হাতটি ধীরে ধীরে ফুলে যায় এবং সংক্রমন শুরু হয়। হাত ফুলায় মেয়ের পিতা ২৬ নং ওয়ার্ডের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসাইন ও ডা. রাজীব বড়–য়াকে জানালে ভালো হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দেন। ঔষধ মাংসপেশীতে সংক্রমিত হওয়ার কারণে হাতটি ইনফেকশন হয়ে যায়। তখন এ ওয়ার্ডের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসাইন ২৬নং ওয়ার্ডে ডিপ্লে¬ামা অধ্যয়নরত ছাত্র ডা. মামুনকে নির্দেশ দেন হাতটি থেকে অপারেশন করে পানি বের করার জন্য। এরপর ডা. মামুন হাতটিতে অস্ত্রোপচার করে। অস্ত্রোপচারে ভুল হওয়ায় কোষগুলো মরে যাওয়ার কারণে ২দিন পর থেকে হাতটি নিষতেজ হয়ে যায় এবং কালো হয়ে পঁচন শুরু হয়। রোগীর হাতটি কালো হয়ে যাওয়ার পর ২৬ নং ওয়ার্ডের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসাইনের নির্দেশে একই বিভাগে অর্থোপেডিক ডিপ্লে¬ামা অধ্যয়নরত ছাত্র ডা. মামুন একমাস পর ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ তারিখ রাত ৮.০০ টায় মেয়েটির পিতার অনুমতি ছাড়া এবং পিতার জাল স্বাক্ষর দিয়ে নতুন ফাইল বানিয়ে হাতটি কেটে ফেলেন। অবশেষে তিন মাস ওয়ার্ডের বেডে মেয়েটি হাত-পা কাটার যন্ত্রণায় ছটফট করে ২৩ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে পঙ্গুত্ব নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply