২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ৪:১২/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৪:১২ পূর্বাহ্ণ

ঠাকুরগাঁওয়ে নদীর গর্ভে প্রকল্পের টাকা!

     

 

হিমেল তালুকদার, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

নদী ভাংগন প্রতিরোধ দেখিয়ে প্রতিবছর প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। অর্থও গচ্ছা যাচ্ছে। কিন্তু নদীর ভাংগন ঠেকাতে স্থায়ীবাঁধ নির্মান না হওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি নদীর ভাঙ্গনে হুমকীর মুখে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। বর্ষায় ভাঙ্গন ঠেকাতে জরুরী প্রকল্প দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে বালুর বস্তা ফেলে পানিউন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু তা কোন কাজেই আসেনি, নদীতেই ভেসে গেছে প্রকল্পের টাকা এমন অভিযোগ এলাকাবাসীসহ জনপ্রতিনিধির।

তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, নদীর ভাঙ্গনঠেকাতে সাময়িক ব্যবস্থা নেয়া হয়, আর স্থায়ী বাঁধ নির্মানে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে সংশি¬ষ্ট বিভাগে।

পাউবো সুত্রে জানা গেছে, চার মাস আগে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সেনুয়া নদীর ভাংগন প্রতিরোধে চেরাডাঙ্গী ও বাসীয়া দেবী গ্রামের ঘরবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, কবর স্থান, রাস্তা-ঘাট সহ বিভিন্ন অব-কাঠামো ভাংগন প্রতিরক্ষায় প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁশ ও বালির বাঁধ দেয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই বস্তাফেটে বালি নদীতে ভেসে যায়।

ঐ এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, বাঁশ বালির বাঁধ দিয়ে শুধু টাকা লোপাট করা হচ্ছে। কিন্তু কোন কাজে আসছে না। একই সুরে অভিযোগ করে বলেন, স্কুল শিক্ষক দীনেশ চন্দ্র রায় স্থায়ী বাঁধ নির্মান না করা হলে সরকারের টাকা এভাবে হরিলুট হবেই।

প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কুশলডাঙ্গী, কিসমত পলাশ বাড়ী ও খকসা গ্রাম তীরনই নদীর ভাংগনের কবল থেকে বাঁশ বালির বাঁধ দেয়া হয়। কিন্তু এই বাঁধ কোন কাজে আসে নি বলে অভিযোগ করেন স্থাণীয় (বড় পলাশবাড়ী) ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, যেন তেন কাজ করে প্রকল্পের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। এলাকার বাচ্চারাণী আক্ষেপ করে বলেন, টাকা লুট করে খাক! কিন্তু কাজটি ভাল করলে হামরা(আমরা) নদী ভাংগন থেকে রেহাই পেতাম।

অপর দিকে পীরগঞ্জ উপজেলার কোষারাণীগঞ্জের বাজারদেহা গ্রামটি টাংগন নদীর ভাংগন থেকে সাময়িক রক্ষার জন্য গেল বর্ষা মৌসুমে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁশ বালির বাঁধ দেয়া হয়। কিন্তু সেটিও নদীর জলে ভেসে গেছে। ঐ গ্রামের আসাদুল ইসলামের অভিযোগ বালির বস্তা দেয়ার কিছুদিন পরেই পানিতে ধুয়ে গেছে। তিনি বলেন, আগামী বর্ষা মৌসুমের ঐ গ্রামে স্থায়ী বাঁধ নির্মান করা না হলে কৃষি জমি সহ ঘরবাড়ি,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে।

অন্যদিকে টাংগন নদীর ভাংগনে সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের খড়িবাড়ি গ্রামের কবর স্থান সহ নানা অবকাঠামো রক্ষায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে বালি ও বাঁশের বাঁধ দেয়া হয়। কিন্তু যেন তেন কাজ করা হয় বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আবু সামাদ দুঃখ করে বলেন, ভোট এলেই প্রতিশ্রুতি দেয়। ভোট চলে গেলে পরে তা মনে রাখে না এমপি মশাই রা। তিনি বাজার দেহা গ্রামটি রক্ষায় সরকারের কাছে দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পে কোন অনিয়ম হয়নি। ভাঙ্গণ ঠেকাতে জরুরী ভাবে বালির বস্তা ফেলে সাময়িক ভাবে বাঁধ করা হয়েছে। তিনি জানান, স্থায়ী বাঁধ নির্মানে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সংশি¬ষ্ট দপ্তরে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply