২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১২:৪৫/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

লামায় যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে আগুনে পুড়ে দিল পাষন্ড স্বামী

     

মো. ফরিদ উদ্দিন, লামা প্রতিনিধি
বান্দরবানের লামা উপজেলায় যৌতুক না দেওয়ায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের সোলেমান বাজার পাড়ায়। একই সময় এছাড়া এক বছর তিন মাস বয়সী কোলের শিশুটিকেও মায়ের কাছ থেকে কেড়ে নেয় পাষন্ড স্বামী। বর্তমানে চিকিৎসার অভাবে পিত্রালয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন হতভাগিনী গৃহবধু বিবি আয়েশা (২১)। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় রাতভর শারিরীক নির্যাতন শেষে সকালে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় পাষন্ড স্বামী মো. রাসেল (৩০)। বিবি আয়েশার বাবার নাম মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়ার বাসিন্দা। স্থানীয় একটি চা দোকানে দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালান তিনি। স্বামী রাসেল সোলেমান বাজার পাড়ার বাসিন্দা মো. শাহাজাহান পিসি’র ছেলে।
সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষার তিন মাস পর বিবি আয়েশার সঙ্গে রাসেলের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের ৩-৪ মাস দাম্পত্য জীবন সুখেই কাটে তাদের। এরপর থেকে তাকে যৌতুকের জন্য আস্তে আস্তে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে স্বামী রাসেল। বিয়ের দেড় বছর পর তাদের কোলজুড়ে আশেকুল ইসলাম আয়ান নামের এক ফুটফুটে সন্তানেরও জন্ম হয়। ভবিষ্যত চিন্তা করে সাধ্যানুযায়ী বাবার বাড়ি থেকে স্বামীকে টাকা এনে দিতেন বিবি আয়েশা। এতেও স্বামী সন্তুষ্ট না হয়ে আরও বেশি টাকা এনে দেওয়ার জোর চাপ শুরু করে। বাবা একজন দিন মজুর, তাই আর টাকা এনে দিতে পারবেনা বলে বিবি আয়েশা জবাব দিলে ক্ষিপ্ত হয় স্বামী রাসেল। শুরু করে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে গত ১৪ আগস্ট দিনগত রাতভর আয়েশার ওপর শারিরীক নির্যাতন চালায় রাসেল। পরদিন সকালে স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে লাথি মেরে রান্না ঘরের জলন্ত চুলার মধ্যে ফেলে দিয়ে কোলের শিশুকে কেড়ে নেয় স্বামী রাসেল। এতে তার শরীরের গলা থেকে নাভি পর্যন্ত আগুনে পুড়ে যায়। পরে আয়েশাকে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিনের সহায়তায় উদ্ধার করে প্রথমে লোহাগাড়া হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তার অবস্থার অবনতি দেখে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। এ ঘটনায় বিবি আয়েশার দরিদ্র পরিবার প্রতিকার চেয়ে আইনের আশ্রয় নেননি। এর কারণ হিসেবে জানান, আইনের আশ্রয় নিতে গেলে টাকা লাগবে। টাকা কোথায় পাবে, এমন দুর্চিন্তা গ্রস্থ আয়েশার অভিভাবক থানা পুলিশ করেননি।
আয়েশার দাদি সিরাজ খাতুন, ফুফু কুলসুমা বেগম ও ছোট ভাই মোবারক হোসেনের জানান এসএসসি পরীক্ষার দেওয়ার এক বছর আগে আয়েশার মা মারা যান। গরীব বাবার পক্ষে পড়ালেখা ও সংসার চালানো কষ্ঠ সাধ্য হয়ে পড়ে। এ কারনে মেয়ের ভবিষ্যত চিন্তা করে আনুষ্ঠানিকভাবে রাসেলের সঙ্গে আয়েশার বিয়ে দেন তারা। মা রোশনা বেগম ২০১৩ সালে মারা যান। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে আয়েশা দ্বিতীয়। কিন্তু রাসেল তাকে প্রতিনিয়ত যৌতুক দাবী করে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিল। শেষের দাবীকৃত ৫০ হাজার টাকা দিতে না পারায় আয়েশাকে আগুনে পুড়ে মারার চেষ্টা করেছে সে। তারা আরও জানায়, ঘঁনার পর আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের আর্থিক সহায়তায় বিবি আয়েশাকে তাৎক্ষনিক চমেক বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। প্রতিদিন চিকিৎসা বাবদ ৩ হাজার টাকার প্রয়োজন। তাই খরচের অভাবে আশংকাজনক অবস্থাতেও তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে বাড়িতেই চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন বিবি আয়েশা। স্বামী কিংবা শ^শুর পক্ষীয়রা এ পর্যন্ত কোন খোঁজ খবর নেয়নি তার বরং শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বললে, তারা বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এদিকে, অভিযুক্ত স্বামী রাসেলের মুঠোফোনে একাধিকবার রিং করেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন কোম্পানী বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক। প্রাথমিকভাবে বিবি আয়েশাকে সহযোগিতা করে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। বর্তমানে অর্থভাবে দ্বগ্ধ আয়েশার চিকিৎসা চালাতে পারছেন না তাঁর দরিদ্র পরিবার। তাকে চিকিৎসা সহায়তার জন্য সমাজের বিত্তশালীদের সহায়তা কামনা করছি। আায়েশার জন্য সাহায্য পাঠানোর বিকাশ নং- ০১৮৫৮৩৪৮২৯২ (বড় ভাই নবী হোসেন), একই সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট আইনি সাহার্য্য কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় পাষন্ড স্বামী রাসেলের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply