২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৪:১৫/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৪:১৫ অপরাহ্ণ

মুক্তিযোদ্ধা বাছাই করবে রাজাকার! বিশ্বম্ভরপুরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিতে রাজাকারকে অন্তর্ভূক্ত করায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উত্তেজনা

     

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা 
জানা যায়,বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের প্রতিনিধি সৈয়দ মোঃ আব্দুল লতিফ কে সভাপতি,উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সদস্য-সচিব,মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সাবেক কমান্ডার আব্দুল হেকিম হাশিম (যোদ্ধাহত), জামুকার প্রতিনিধি মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম,জেলা ইউনিট কমান্ডের প্রতিনিধি মুজিবুর রহমান হাসনু,বশীর আহমদ অরুন ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত কমান্ডার আপ্তাব উদ্দিনকে সদস্য করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির অন্যতম সদস্য আপ্তাব উদ্দিন ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের একজন সক্রিয় রাজাকার। তথাকথিত যাচাই-বাছাই কমিটি থেকে তাকে বাদ দেয়ার জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কমান্ডের সাংগঠনিক কমান্ডার মনির উদ্দিন এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়া ২০১২ইং সনে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু প্রকাশিত “রক্তাক্ত ৭১ সুনামগঞ্জ”বইটির ১৮৯ পৃষ্টায় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রাজাকার তালিকায় ৬নং ক্রমিকে রাজাকার হিসেবে আপ্তাব উদ্দিনের নাম রয়েছে। উক্ত আপ্তাব উদ্দিন উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের লতারগাও গ্রামের আব্দুল মন্নানের পুত্র। ২০১১ সালে স্যাটেলাইট টেলিভিশন আরটিভিতে প্রচারিত “ক্রাইম ফোকাস”এ রাজাকার আপ্তাব উদ্দিনের স্বীকারোক্তিসহ সরেজমিন প্রতিবেদন সম্প্রচার করা হয়। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ছাতারকোনা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলী সুরহা,মুক্তিযোদ্ধা নানু মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা গুঞ্জর আলী,মতিউর রহমান ও সোনাতলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক (পুলিশ) সহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বলেন,আপ্তাব উদ্দিন গত ২৩/১০/২০০৯ইং তারিখে জেলা বিএনপির সভাপতি অনুমোদিত থানা বিএনপির কার্যকরী কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ উক্ত আফতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন আদালতে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের জন্য মামলার অভিযোগ দায়ের করেছে। ৭১ এর ১৫ আগস্ট সুবেদার গনী হাওলাদার এর নেতৃত্বাধীন এ কোম্পানীর কোয়ার্টার গার্ডে আটককৃত পরাজিত পাক বাহিনীর সৈনিক আফজালকে নিয়ে পলায়ন করে। পলায়নকালে এ কোম্পানীর মুক্তিযোদ্ধাদের সকল রেকর্ডপত্র নিয়ে সে পাক বাহিনীর কাছে স্থানীয় পিটিআই ক্যাম্পে সারেন্ডার করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পাকবাহিনীর দোসর হিসেবে কাজ করে। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হলে সে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধৃত হয়ে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি ভোগ করে। সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে অন্যান্য দেশীয় রাজাকার সহকারে তাকে কান ধরে উঠবস করানো,পানিতে চুবানো এবং ঘাস খাওয়ানোসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে পাঠানো হয় সুনামগঞ্জ কারাগারে। সেখানে কারারুদ্ধ থাকার একপর্যায়ে সাধারন ক্ষমার আওতায় সে রেহাই পায়। পরে সাবেক এক জেলা ইউনিট কমান্ডারকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করে। জানতে চাইলে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া সুলতানা বলেন,আমি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করিনি। কমিটি অনুমোদন করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। কমিটি থেকে কাউকে রাখা না রাখার দায়িত্ব আমার নয়। কোন অভিযোগ থাকলে মুক্তিযোদ্ধারা জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করতে পারেন। জেলা প্রশাসক কমিটি বাতিল বা যেকোন মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধিকে বাতিল করার আদেশ দিলে আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দেয়া যেকোন সিদ্বান্ত অনুযায়ী কাজ করবো। টেকেরঘাট সাবসেক্টরের কোম্পানী কমান্ডার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট আলী আমজাদ বলেন,মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই করবে একজন রাজাকার। এটি যে আমাদের জন্য কত লজ্জার ও অপমানের তা কাউকে বলে বুঝানোর প্রয়োজন নেই। আমি অনতিবিলম্বে রাজাকার আপ্তাব উদ্দিনকে বাধ দিয়ে যুদ্ধকালীন কোম্পানী কমান্ডারের দ্বারা গ্রহনযোগ্য কমিটি গঠন করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কার্যক্রম সুচারুরপে সম্পন্ন করার জন্য জেলা প্রশাসকের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আফতাব উদ্দিন বলেন,আজ যেসব মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে রাজাকার বলে গালি দিচ্ছেন তারাই আমাকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্তিসহ আমাকে ভোট দিয়ে থানা কমান্ডার নির্বাচিত করেছেন। মন্ত্রণালয় বা জামুকা কমান্ডার হিসেবেই আমাকে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়োগ করেছেন। তাই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল আমার কিছুই করতে পারবেনা। জেলা ইউনিট কমান্ডার হাজী নুরুল মোমেন আপ্তাব উদ্দিনকে একজন রাজাকার বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন,দু:খজনক হলেও সত্য একজন অভিযুক্ত রাজাকারের নাম শুধু মুক্তিযোদ্ধা তালিকাতেই আসেনি। আমাদের বিপথগামী কিছু মুক্তিযোদ্ধারা তাকে ভোট দিয়ে কমান্ডার নির্বাচিত করেছে। এ সুযোগে রাজাকার জানার পরও আমরা তাকে কমিটি থেকে বাধ দিতে পারছিনা। তবে মন্ত্রণালয় ইচ্ছে করলে যেকোন সময় তার যাবতীয় সনদ,পদ ও বাছাই কমিটি থেকে তাকে বাতিল করার পাশাপাশি আরো বড় ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার আপ্তাব উদ্দিনকে অবিলম্বে আটক করার জোর দাবী জানিয়েছেন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply