১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ১১:২৪/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ

রোহিঙ্গা শরনার্থীদের প্রয়োজনে

     

মাহমুদুল হক আনসারী
রোহিঙ্গা শরনার্থী সমস্যা বাংলাদেশের জন্য নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রায় ৩ দশকের পুরনো এ সমস্যা এখন নতুন করে ঝামেলায় ফেলছে বাংলাদেশকে। রোহিঙ্গারা বার্মার বৈধ নাগরিক। শত শত বছর তারা সে দেশে বসবাস করে আসছে। তাদের ভোটার আইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধন তার প্রমাণ বহণ করে। তারা সে দেশের জাতিগত ভাবে নির্যাতনের শিকার। ধর্মীয় সংখ্যালঘু হওয়াটা অন্যতম কারণ। ফলে সে দেশে তাদের প্রতি এত নিষ্টুরতা। এ কথা আজকে সারা দুনিয়ার শান্তিকামী মানুষ মনে করছে। রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন হলেই তারা বাংলাদেশে ডুকে পড়ে। সে দেশে রোহিঙ্গারা তাদের জীবন রক্ষায় আত্বরক্ষা মূলক কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলার মতো সংবাদ দেখছিনা। সে দেশের সেনাবাহিনী দমন নিপিড়ন করলেই বাড়িঘর সহায় সম্পত্তি ফেলে জীবন বাচাঁতে বাংলাদেশের ভূ খন্ডে প্রবেশ করে। এতে বার্মার সরকার খুব আনন্দ পায়। বার্মা চায় সব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে চলে আসুক। তারা ইদানিং বলেই ফেলেছে রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামের তথা বাংলাদেশের নাগরিক। এ দুঃসাহস দেখাবার সুযোগ হয়েছে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ থাকার কারণে। সে যাই হোক রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে করতে এখন তাদের সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অস্থায়ীভাবে তাদের পূনর্বাসন করে রাখার মতো বাংলাদেশ সরকারের সক্ষমতা নেই। পর্যাপ্ত ভূমি, আবাসন, ক্যাম্পের অভাব রয়েছে। এখন নতুন করে পাহাড়ভূমি সমতল করে আবাসনের জন্য ক্যাম্প তৈরী করছে বাংলাদেশ সরকার। যারাই বিভিন্ন সময় প্রবেশ করেছিল তারা র্বামায় ফেরত যেতে অনাগ্রহী। নানা ভাবে তারা বাংলাদেশের সমাজের শ্রুতে মিশে যাচ্ছে। সারা দেশে বিশেষ করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় তারা এ দেশের মানুষের সাথে মিশে ভোটার আইডিকার্ড, পাসর্পোট পর্যন্ত পেয়ে যাচ্ছে। পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ব্যবহার করে বিদেশের মাটিতে এদেশের ভাবমূর্তির ক্ষুন্ন করছে। সে দেশে বাংলাদেশের ইমেইজ নষ্ট হচ্ছে। তারা সন্ত্রাস, মাদক পাচার সহ নানা অনিয়ম অপরাধে জড়ীয়ে পড়ছে। টেকনাফ বার্মার বর্ডারে নিত্যদিন মাদক পারাপারের রুট হিসেবে পরিচিত। তাদের মাধ্যমে মাদক পাচারের তিব্রতা বাড়ছে বলে অনেকেই বলছে। বিশাল উদ্বাস্ত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় রাখার মতো অবস্থা নেই। তাদেরকে তাদের জন্মভূমি রোহিঙ্গায় ফেরৎ যাওয়ার কুটনৈতিক উদ্দোগ জোরদার করতে হবে। বাংলাদেশের পার্শ¦বর্তী দেশের সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ সফল হতে পারে। আর্ন্তজাতিক সংস্থা সমূহে এ বিষয়টি গুরুতে¦র সাথে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে হবে। তাদের নিয়ে কেউ কী, কোন রাজনীতি খেলছে সেটাও বাংলাদেশ সরকারকে মাথায় রাখতে হবে। বার্মার মতো অন্য কোন দেশ যদি তার দেশের মুসলমানদের বাংলাদেশের নাগরিক বলে পুশব্যাক করে তখনও কী বাংলাদেশ চুিপচাপে তাদের আশ্রয় দেবে ? এমন ধরনের ইস্যু যেন মাথা ছাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেটায় এখন ভাববার সময়। এখন সময় তাদেরকে কীভাবে কুটনৈতিক ও দ্বি-পাক্ষিক আলাপ আলোচনায় ফেরত পাঠানো যায় সেটায় বাংলাদেশের অন্যতম কাজ। আর যারা এখন উদ্বাস্ত হয়েছে তাদের অন্য জেলায় প্রবেশ ঠেকাতে হবে। তাদের জন্য নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে তাদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উদ্বাস্ত শিশু মহিলাদের বয়স অনুসারে শিক্ষার ব্যাবস্থা করতে হবে। ধর্মীয় ও প্রচলিত শিক্ষার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন খুবই জরুরী। আগত জনশ্রুতের ৮০ ভাগ শিশু ও মহিলা। শিক্ষা স্বাস্থ্য আবাসনে তাদের বিশেষভাবে নজর রাখা দরকার। এনজিওদের তৎপরতা নজরদারী রাখতে হবে। কেউ যেন তাদেরকে রাষ্ট সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডে ব্যবহার করতে না পারে। উদ্বাস্তদের বেড়ে উঠার সাথে সাথে কর্মে শিক্ষায় উপযুক্ত করে তুলতে হবে। ক্যম্প ও আশ পাশের পরিবেশ স্বাস্থ্য সম্মত রাখতে হবে। খাদ্য, পানি, চিকিৎসায় সতর্ক হতে হবে। অপরিস্কার অপরিচ্ছন্নতায় যেন রোগ ব্যধীর জন্ম না হয়। এনজিওদের এসব বিষয় মাথায় রেখে সমন্বিত ভাবে কাজ করতে হবে। কোনো অবস্থায় তাদের ব্যবহার করে দেশের শান্তি শৃংখলা ভঙ্গ করার মতো ষড়যন্ত্র নজরদরীতে রাখতে হবে। তাদের জন্য অর্থ ও ঠিকানার দরকার। এ মূহুর্তে তাদের হিতাহিত জ্ঞান নেই বল্লেই চলে। তাদেরকে শৃংখলা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা শিখাতে হবে। তাদের চলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। ছোট্ট বাংলাদেশের জনসংখ্যার চাপ এমনিতেই বেশি। ঘনবসতিপূর্ণ এ দেশে জনগনের খাদ্যে, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসস্থানের সমস্যা পূরণ করতে সরকার নিয়মিত ভাবে হিমসিম খাচ্ছে। সেখানে বিশাল এ রোহিংঙ্গা উদ্বাস্তদের প্রতি মানবিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সরকার নতুন করে চাপে পড়ছে। দেশ মাটি মানুষ সমাজের জন্য এটা বড় ধরনের চাপ। এ চাপ বাংলাদেশকে দীর্ঘ সময় বহণ করা সম্ভব নয়। দ্রুততার সাথে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগের কোন বিকল্প নেয়। গত ৯ সেপ্টম্বরের বিবিসির সংবাদে বলেছে রোহিঙ্গাদের এ মূহুর্তে নুন্যতম পুর্নবাসন করতে এজিওদের দাবী ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ অর্থ আসতে ও পেতে কতো সময় লাগবে সেটা বলা মুশকিল। অর্থ পাওয়া সাপেক্ষে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় পুনর্বাসন দীর্ঘ মেয়াদী প্রজেক্ট। তাহলে রোহিঙ্গাদের থাকা খাওয়া, আশ্রয় দেখা শুনা সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সরকার এখন এক অস্থিরতার মধ্যে আছে। এখন যা করতে হচ্ছে তার জন্য কোটি কোটি অর্থের দরকার। দীর্ঘ সময় উদ্বাস্ত পালন করার সক্ষমতা বাংলাদেশ সরকারের নেই। বছরে কয়েক দফা বন্যা খরা সাইক্লোনে বাংলাদেশের অর্ধেক অঞ্চল পানিতে ডুবে থাকে। উত্তর বঙ্গের বন্যার্থ মানুষ এখনো মাথা গুজাবার ঠাই করতে পারেনি। নষ্ট হওয়া ফসল জমি থেকে উঠাতে পারেনি। তাদের বাড়ী ঘর রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত। দেশে সে পরিস্তিতির সাথে বাংলাদেশ সরকার মানবিক দৃষ্টি কোনে রোহিঙ্গাদের যে আথিতিয়তা দেখাচ্ছে বিশ্বে তার নজির বিরল। আর রোহিঙ্গারা তার দেশে একটু টুসটাস শব্দ হলেই তারা কোনো প্রতিরোধ না করে স্বাধীন বাংলাদেশের ভূ খন্ডে ঢুকে পড়বে সেটাও মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। এভাবে তারা যদি আসতেই থাকে, আর বাংলাদেশ তাদের ঢুকতেই দেয়, বার্মায় একজন মুসলমান ও থাকবেনা। সবাই বাংলাদেশে চলে আসবে। আর এখানে আশ্রয় নিরাপত্তা বাসস্থান চিকিৎসা দাবী করবে। রাষ্টকে তা দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের সেবা দিতে একটু দেরি হলে তখন দুনিয়ার মিড়িয়া সেটা ফলাও করে প্রচার হবে। রোহিঙ্গারা মানবিক বির্পযয়ে আছে। সে জন্য দরকার বাংলাদেশের পার্শ¦বর্তী দেশকে বুঝাতে সক্ষম হতে হবে। তাদের প্রয়োজনে আমরা এগিয়ে থাকি। আর আমাদের যখন প্রয়োজন তারা তখন খেলা দেখবে এমন সুযোগ কাউকেই দিতে নিতে দেশবাসী রাজী নয়। যার যার অধিকার খরায় গন্ডায় উসুল করতে হবে। বাংলাদেশকে তালাবিহীন ভাবলে চলবেনা। সরকারকে শক্তভাবে রাষ্টের দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগনের নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তায় কোন দুর্বলতা জাতি মেনে নেবেনা। ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত, সে হাত গর্জে উঠলে কোন অপশক্তি রেহাই পাবেনা। এ জাতি চোখ রাঙ্গানোর পরোয়া করেনা। একজন বঙ্গবন্ধু না থাকলে কী হবে, লক্ষ বঙ্গবন্ধুর জন্ম এ মাটিতে। বীরের মতো রক্তদিয়ে দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটির সুরক্ষায় তাদের হাত তৈরী হয়ে আছে। ইন্শাআল্লাহ যখন সময় হবে তখন বীরের হাত গর্জে উঠবে। বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ অধিকার রক্ষায় যা যা দরকার সময় মতো বাস্তবায়ন করার দাবী জানাচ্ছি সরকারকে। জনগনের মতামত ও চিন্তা বুদ্ধি নিয়ে সরকারকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সব ক্ষমতার উৎস জনগন। জনগন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়া আর নামাবার কারো শক্তি নেই। জনগনের প্রতি আস্থা বিশ্বাস, আন্তরিকতা রাখতে হবে। তাদের সুবিদায় অসুবিদায় রাষ্টকে বেশী গুরুত্ত দিতে হবে। বিদেশীদের প্রতি অতি বিশ্বাস কখনো কারো জন্য মঙ্গলজনক নয়। আমার দেশের মাটি মানুষ, কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতি নিয়ে বাচঁতে হবে আমাকে। জনগনের মনজয় করে ক্ষমতায় যাওয়া আসার চিন্তা করতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক দেশ ও আর্ন্তজাতিক সংস্থাদর সাথে কুটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে। অবশ্যই তাদের কে তাদের ভিটাবড়ীতে ফেরত পাঠাতে হবে। পূর্ন নাগরিকত্বের দাবী পুরুণ করেই তাদের ফেরত পাঠানো নিশ্চত করতে হবে। এ প্রচেষ্টা এখন বাংলাদেশের জন্য বড় পরিক্ষা। আশাকরি বর্তমান সরকার অন্য সব সমস্যার মত এ সংকট কে আন্তর্জাতিক ভাবে সর্মথন আদায় করে সংকট মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply