২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / রাত ২:০১/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ২:০১ পূর্বাহ্ণ

অামি হার মানার মানুষ নই

     

ইন্টারনেটের দাম কমানো, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজখবর, টেলিটকের পিছিয়ে থাকা, ফ্রিল্যান্সিংয়ের মহাপরিকল্পনাসহ দেশের টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ভেতর-বাহির নিয়ে টেকশহরডটকমে সাক্ষাতকারে এসেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। মুখোমুখি বসেছেন আল-আমীন দেওয়ান।

টেকশহর : ইন্টারনেটের দাম কমানো ও গতির বিষয়ে সোচ্চার আপনি। গ্রাহকের কাছে কম দামে ইন্টারনেট দিতে২০১৬ সালের শুরুতে এই কস্ট মডেল তৈরির উদ্যোগ নিলেও  তা হয়নি।

পরে ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির সভায় বিটিআরসি ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে এক মাস সময় দিয়ে এই মডেল তৈরি করতে বলা হয়েছিল।

ওই সভায় ছিলেন আপনি। এক বছর হতে চলল ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দেয়ার এই উদ্যোগের কি হল?

মোস্তাফা জব্বার : আমাদের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি ভয়েস কলের ক্ষেত্রে এই সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম বেধে দিয়েছে। কিন্তু ডেটার ক্ষেত্রে এ কাজটি তারা করতে পারেনি। তারা কনালটেন্সি করছে। আমাকে যতটুকু বোঝানো হয়েছে সেটুকু হচ্ছে, কনসালটেন্টদের রিপোর্ট পাওয়ার পরও তারা এই ডেটার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ দাম স্থির করে দেবে।

আমি মনে করি, ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। এরমধ্যে একটি বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে ইনফ্রাসটাকচার। এই ইনফ্রাসটাকচার যদি আমরা ঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারি, এর মূল্য যদি ঠিকভাবে ঠিক করা না থাকে তাহলে কিন্তু ইন্টারনেটের দাম রাতারাতি কমবে এমন কোনো কারণ দেখতে পাচ্ছি না। সরকারের দিক হতে সে ব্যবস্থা নেয়ার ছিল সেটি খুব ইতিবাচক রয়েছে। ব্যান্ডউইথের দাম কিন্তু চমৎকারভাবে কমে আসছে, ইনফ্যাক্ট এটি আরও কমার সম্ভাবনা আছে। ঠিক এই জায়াগায় আমাদের সমস্যাটি হয়ে গেছে ডিস্ট্রিবিউশনের। অর্থাৎ আমার ইন্টারনেট সাবমেরিন ক্যাবলে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে বিতরণ করি কিন্তু দেশের বাকি জায়গায় ইন্টারনেট পৌঁছাতে অবকাঠামো দরকার। এটি এতদিন ছিল না, এখনও হয়নি। এটি ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ মাত্র ৭৭২ টি ইউনিয়ন ছাড়া বাকি সবগুলো ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক ক্যাবল পৌঁছে যাবে। আমরা প্রত্যাশা করি এটি পৌঁছে যাওয়ার পরে যে জটিলতাগুলো প্রাইসিংয়ের ক্ষেত্রে, গতির ক্ষেত্রে আছে সেখানে আমরা সফলতা অর্জন করতে পারবো।

এছাড়া ইন্টারনেট বিতরণে টেলকো ও আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন দুই পক্ষের সঙ্গেই আমি কথা বলেছি যে, জনগণের অধিকার আছে তারা কোনো না কোনোভাবে ব্যান্ডউইথ কিনতে পারে। মোবাইল ফোনগুলো এখন কেবলমাত্র ডেটা বিক্রি করে ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে না। অন্তত ফেয়ার ইউজেস পলিসি দিয়ে হলেও ব্যান্ডউইথ বিক্রি করা হয় সেজন্য তাদের বলা হয়েছে। আমরা আশাকরি সহসাই এ ধরণের প্যাকেজগুলো আমরা দেখতে পাবো।

টেকশহর : ২০০৯ সালে প্রথম ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেন আপনি। এরপর ২০১৫ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়ায় অনুমোদন, ২০১৬ সালের জুলাইয়ে সংসদে এর বিল পাস হয়। আমরা জানি, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন কমিটির সদস্যও আপনি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাই?

মোস্তাফা জব্বার : আমি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি ছিলাম। তখন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশকে জনপ্রিয় করতে কতগুলো জায়গাকে চিহ্নিত করেছিলাম। এরমধ্যে ছিল ডিজিটাল সরকার, ডিজিটাল শিক্ষা, ডিজিটাল জীবনধারা এবং ডিজিটাল অর্থনীতি। ট্রেড বডিগুলোতে অ্যাডভোকেসি ও লবিং করার একটা ভূমিকা থাকে। আমরা এ লক্ষ্যে প্রথম ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট করি। এই সামিট করা সময়েই আমাদের ভাবনায় আসে যে, শিক্ষা যদি বদলাতে হয় তাহলে শিক্ষার এমন একটি জায়গা দরকার যেটা বাকিরা অনুসরণ করতে পারে। সেক্ষত্রে হতে পারে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেটি ডিজিটাল হবে এবং সকল দিক হতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে যে বিশ্ববিদ্যালয় এমন হওয়া উচিত, তার পাঠক্রম এমন হওয়া উচিত, পাঠদান পদ্ধতি এমন হওয়া উচিত, গবেষণা এমন হওয়া উচিত।

এমনকি আমরা এটিই চিন্তা করেছিলাম যে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা করার কোনো জায়গা আসলে নেই। তাই ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও যেন গবেষণা করা হয়। এই প্রেক্ষিতে আমরা একটি কোরিয়ান তহবিলও পেয়েছিলাম। ১০০ মিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিকে দেয়া হয়েছিল। ওই ফান্ড দিয়ে আমরা চন্দ্রায় বন্ধ থাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজকে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের চেষ্টা করি।

আমার মনে আছে আমি, আকম মোজাম্মেল হক ও গাজীপুরের ডিসি প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম, এটার একটা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার জন্য। এটা করতে গিয়ে আমরা বিপদে পড়লাম যেটা হলো, তখনকার সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি মন্ত্রণালয় বলে দিলো না, পিপিপিতে বিশ্ববিদ্যালয় করার কোনো আইন নাই।

যেটা চেয়েছিলাম যে, জায়গাটা সরকার দেবে আর ফান্ডটা আমরা কোরিয়ান সরকার হতে নেবো। কোরিয়ান সরকারের শর্ত ছিল যে, এই ফান্ডের গ্যারান্টার হতে হবে সরকারকে। এই গ্যারান্টার নিতে গিয়ে আমরা দেখলাম পিপিপিতে বিশ্ববিদ্যালয় করার আইনগত কোনো ভিত্তি কাজ করে না।

এই অবস্থায় আমাদের চেষ্টা হলো যে, ঠিক আছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠুক। এরপর হতে এটিকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ যে অবস্থা সে বিষয়ে আমার মন্তব্য হচ্ছে হচ্ছে যে, আমার একটি ভয় কাজ করে এটা না আরেকটা সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। আমরা যে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় করতে চেয়েছিলাম এটি যদি সেই ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় না হয়ে আরেকটা সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় হয়, তাহলে আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, নেতৃত্ব দেয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে চেয়েছিলাম-এই জায়গাটা পূরণ নাও হতে পারে। এবং এটি যে গতিতে আগাচ্ছে তা আমার কাছে সন্তোষজনক মনে হচ্ছে না।

টেকশহর : সফটওয়্যার খাতের সংগঠন বেসিসের হিসাবে সফটওয়্যার রপ্তানি আয় ইতোমধ্যে ৮০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। অথচ ইপিবি বা বাংলাদেশে ব্যাংকের হিসাবে এই সংখ্যা অনেক কম। হিসাবের এই পার্থক্য অনেক দিনের।

যেহেতু সরকারের এ খাত  ২০১৮ সালে ১ বিলিয়ন এবং ২০২১ সালে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ও পদ্ধতিগত খাতটির সঠিক রপ্তানি আয় হিসাব গুরুত্বপূর্ণ।

এ বিষয়ে কোনো ভাবনা, কোনো উদ্যোগ?

মোস্তাফা জব্বার : এই বিষয়ে ইতোমধ্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এটি ক্ষেত্রে প্রধানতম সমস্যা হলো ব্যাংকগুলো এই তথ্যগুলো যথাযথভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠায় না। এবং বহুজন ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশে টাকাগুলো আনে না। এই দুটি সমস্যা সমাধানের ভালো হাতিয়ারের নাম হচ্ছে ক্যাশ ইনসেনটিভ। আমি রপ্তানি ক্ষেত্রে এখন নগদ সহায়তা প্রদান করছি। আর এর ফলে  মানুষ উৎসাহিত হচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকাটা নিয়ে আসার। ফলে যে গ্যাপটা এখন দেখতে পাচ্ছেন এটি খুব শিগগিরই মিটে যাবে। আর ব্যাংকে এখনও কিছু হয়রানি আছে, এগুলো দূর করার দরকার আছে। ব্যাংকের লোকজন এখনও পর্যন্ত ভুল বোঝাবুঝির মধ্যে আছে। তাদের সঠিক বিষয়গুলো বোঝার বিষয় আছে। অনেক সময় তারা রপ্তানি আয়ের উপরে কর আরোপ করে বসে থাকে। অথচ আমি বাজেট বক্তৃতার মাধ্যমে এ ধরনের করারোপ হতে অব্যাহতি পেয়ে আসছি। আশাকরছি, চলতি বছরেই এই হিসাবের বিষয়টি অনেকটা ঠিক হয়ে যাবে।

টেকশহর : ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার মানোন্নয়নে সরকারের একটি কর্মপরিকল্পনা করার কথা। ২০১৭ সালে টাস্কফোর্সের সভায় বিটিসিএলকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাধ্যমে এই কর্মকরিকল্পনার প্রস্তুত করতে বলা হয়েছিল।

আপনি টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে ওই সভায় ছিলেন। এক বছর হতে চলল, ওই কর্মপরিকল্পনার কতদূর?

মোস্তাফা জব্বার : ব্রডব্যান্ড পলিসি একটা ছিল। ওটা এখন আপডেট হচ্ছে। ইনফ্যাক্ট সেটা প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা টেলিযোগাযোগ এবং ব্রডব্যান্ড দুটিকেই শিগগির আপডেট হিসেবে পাবো।

ব্রডব্যান্ড সেবার মান আমাদের কাছে খুব সিরিয়াস কনসার্ন। শুধু এটি নয়, আমাদের ভয়েস কল এবং ডেটার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে আছে। ইতোমধ্যে টেলকোগুলো বলা হয়েছে যে, তারা যেন সেবার মান উন্নত করে। এবং ভোগান্তির বিষয়টা কমপক্ষে যেন একটা গ্রহণীয় মাত্রায় আসে, কলড্রপ যেন না থাকে। মানুষ যেন সেবা যে পর্যায়ে পাওয়া উচিত সেরকম সেবা পায়।

টেকশহর : পেশাদার খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং তা হতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ফ্রিল্যান্সিং-আউটসোর্সিংয়ের জন্য কর্মপরিকল্পনার তৈরি কথা বলেছিল টাস্কফোর্স।  যেখানে আউটসোর্সিংয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জের সঙ্গে সম্ভাবনাগুলো তুলে আনা, ফ্রিল্যান্সিংকে শৃঙ্খলায় আনা, পেশাদার ও দক্ষ জনবল তৈরি করা, প্রতিষ্ঠান তৈরির দিকনির্দেশনা থাকার কথা।

তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সহায়তায় এটি তৈরিতে দায়িত্ব দেয়া ছিল দেশের সফটওয়্যার খাতের শীর্ষ সংগঠন বেসিসকে।

এটি কি করা হয়েছে? হলে কোথায় কীভাবে আছে?

মোস্তাফা জব্বার : ওই সময়ে এটি দেয়া হয়েছিল। আমি দায়িত্ব নিয়ে যেটি পেয়েছি তা হচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং নামে একটি প্রকল্প। সুখের বিষয় এটির প্রথম পর্যায় শেষ হয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ের অনুমোদনও আমরা পেয়েছি। এটিকে আরও কার্যকরভাবে ও পুরো দেশব্যাপী বিস্তৃত করা, বিশেষ করে তৃণমূল পর্যন্ত এটি বিস্তৃত করার ব্যবস্থা আমরা করছি।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিষয়টি বহুপাক্ষিক। এখানে কেবলমাত্র প্রশিক্ষণ দিলে হবে না, আমার তাকে ইন্টারনেট দিতে হবে, সহনীয় মূল্যে দিতে হবে। তাই পুরো জায়গাটি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তাই লার্নিং অ্যান্ড আর্নিংয়ের দ্বিতীয় পর্যায় যখন বাস্তবায়িত হবে তখন বাংলাদেশ ফিল্যান্সিংয়ের সেরা জায়গায় পরিণত হবে।

আমরা যে ক্যাশ ইনসেনটিভটা দিচ্ছি তা ফ্রিল্যান্সারদের কাছে কেমন করে পৌঁছানো যেতে পারে-তা দেখা হচ্ছে। বিষয়টি এখনও খুব স্পষ্ট হয়ে আসেনি। আমরা চেষ্টা করবো যাতে এই বিষয়টিও স্পষ্ট করা যায় যে, কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠানগুলো না যারা ব্যক্তিগতভাবে ফ্রিল্যান্সিং করেন তারাও যাতে নগদ সহায়তাটা পেতে পারে।

এই ক্ষেত্রে নীতিগত যে ধরনের সহায়তা করা দরকার সে সহায়তা যেন আমরা করতে পারি তার সব চেষ্টা করা হচ্ছে।

টেকশহর : শিক্ষার ডিজিটাইজেশন নিয়ে আপনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা কোথায়?

মোস্তাফা জব্বার : শিক্ষা এখন আর কাগজনির্ভর নেই। এটি ডিজিটাল হয়ে গেছে, একে ডিজিটাল হতে দিতে হবে, একে ডিজিটাল করতে হবে। আর আমি সে কাজটি করছি। ১৯৯৯ সালে আমার প্রথম স্কুলের জন্ম হয় যেখানে আমি কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করি-যা আমি অব্যাহতি গতিতে করছি এবং এটি করতেই থাকবে। চলতি বছর সরকার দুটি পাইলট প্রজেক্ট করছে। একটি হচ্ছে ২০ টি প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস ওয়ান-টু এর বাচ্চাদের হাতে ট্যাব দেয়া এবং আরেকটি হচ্ছে ৫৯৩ টি স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করে তোলা। আমরা আশাকরি এ দুটি পাইলট প্রজেক্ট শেষ হওয়ার পরে সরকার বিশাল আকারে এই জায়গাটির মধ্যে হাত দেবে। আমরা একেবারে শিশুশ্রেণী হতে শুরু করেছি এবং আস্তে আস্তে উপরের দিকে যেতে চাই। এটা সময়ের প্রশ্ন।  আমার অসংখ্য সফল গল্প আছে। এমনও হয়েছে যে ডিজিটাল ব্যবস্থায় পুরো এক বছরের সিলেবাস বাচ্চারা এক মাসে শেষ করে দিয়েছে। শিক্ষাকে ডিজিটাল ব্যবস্থায় আনেত হলে সব ছাত্র-ছাত্রীর কাছে ডিজিটাল ডিভাইস দিতে হবে।

টেকশহর : সরকারের ল্যাপটপ উৎপাদনকারী টেলিফোন শিল্প সংস্থা বা টেশিসের স্টকে গত আট মাস ধরে কোনো ধরনের ডিভাইস নাই। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ইঞ্জিনিয়াররা ঘুরে বেড়িয়ে বেতন নিচ্ছেন।

সংস্থাটির এমন কর্মকাণ্ডে এই জানুয়ারি মাসে আমরা আপানার প্রকাশ্য বিস্ময় ও ক্ষোভ দেখেছি।  টেশিস নিয়ে কী করতে যাচ্ছেন?

মোস্তাফা জব্বার : আশাকরছি টেশিস ২০১৮ সালের মধ্যে অন্যতম লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। যারা বসে বসে বেতন নিয়েছে তাদের কাজ দেয়ার দায়িত্ব আমার। আমি এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি যে, টেশিসের দূর্বল জায়গা ছিলো ম্যানেজমেন্টে ও মার্কেটিং। খুব সহসাই টেশিসের উৎপাদন শুরু করা যাবে।

টেকশহর : টেলিটক পিছিয়ে থাকার কারণ কি?

মোস্তাফা জব্বার : টেলিটকে ইনভেস্টমেন্ট ছিল না। ভুল কৌশলের কারণে অনেক কিছু হয়েছে। বাজারে গ্রামীণ যে ইনভেস্টমেন্ট করছে তার ১০ ভাগের একভাগ টেলিটক করেনি। এটা নেটওয়ার্কের প্রশ্ন, নেটওয়ার্ক না থাকলে আপনি সম্প্রসারিত হতে পারবেন না। আমি এসে পলিসি বদলেসি। গ্রামীণের মনোপলি ভেঙ্গে যাবে। গ্রামীণ একটা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করছে কারণ তার টাকার শক্তি ছিল। এখন থার্ডপার্টি টাওয়ার বানিয়ে দেবে এবং যেকেউ তা শেয়ার করতে পারবে। এখন ১ কোটি টাকার টাওয়ার না বানিয়ে মাসে ১ লাখ টাকা ভাড়া দিয়ে টাওয়ার ব্যবহার করতে পারবো। এটি অ্যাডভানটেজ হবে। টেলিটকের বড় দূর্বলতা ছিল তার টাওয়ার।

টেকশহর : তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনের যে বাংলাদেশ অধ্যায়ের শুরু হয়েছে সেখানেও আপনার নাম থাকবে শুরুতে। এই হার্ডওয়্যার উৎপাদনের খাতকে পরিণত করতে কোনো লক্ষ্য রয়েছে?

মোস্তাফা জব্বার : আমি বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ড চাই, মেইড ইন বাংলাদেশ। আমার নিজের দেশের ব্র্যান্ড তো থাকবেই। আশি এক্সপেক্ট করছি ৬ মাসের মধ্যে স্যামসাং পাওয়া যাবে মেইড ইন বাংলাদেশ। আমি শুধু একটি নাম বললাম। বড় বড় খ্যাতনামা ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের হাইটেক পার্ক কিংবা দেশের কোথাও জমি নিয়ে কারখানা করবে। এখানে ফিচার ফোন হতে ডেক্সটপ সব উৎপাদন হবে।

( মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগে মোস্তাফা জব্বার বেসিসের সভাপতি ছিলেন। বিসিএসের চারবারের এই সভাপতি বেসিসের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ও পরিচালক ছিলেন।

কম্পিউটারে বাংলা লেখার সফটওয়্যারের উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন সাংবাদিক হিসেবে। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন আটাব (অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ)-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

তিনি ১৯৮৭ সালের ২৮শে এপ্রিল কম্পিউটার ব্যবসায়ে প্রবেশ করেন। সেই বছরের ১৬ মে কম্পিউটারে কম্পোজ করা বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা আনন্দপত্র প্রকাশ করেন। ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশ করেন বিজয় বাংলা কীবোর্ড ও সফটওয়্যার। সেটি প্রথমে মেকিন্টোস কম্পিউটার ও পরে ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্যও বিজয় বাংলা কিবোর্ড ও সফটওয়্যার প্রকাশ করেন।

মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল বাংলা নিউজ সার্ভিস আনন্দপত্র বাংলা সংবাদ বা আবাস এর চেয়ারম্যান ও সম্পাদক।

ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক অনেক কমিটিতে সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। কপিরাইট বোর্ড এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের কাউন্সিল সদস্যও ছিলেন এই তথ্যপ্রযুক্তিবিদ।

মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশ ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য ‘অ্যাসোসিও-র ৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর বিশেষ অবদান সম্মাননা’ পেয়েছেন। )সৌজন্য  টেকশহর

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply