২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ভোর ৫:৫৩/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

পুুলিশের একাল সেকাল

     

মাহমুদুল হক আনসারী
পুলিশ জনতার জনতা পুলিশের। পুলিশ এদেশের নাগরিক, দেশের মানুষের আইন শৃংখলা রক্ষায় রাষ্টের বেতনধারী কর্মচারী। সর্বস্তরের মানুষের আইন শৃংখলা রক্ষা করা তাদের কাজ ও উদ্দেশ্যে। পুলিশ বাহীনি ছাড়া একটা সমাজ সু-শৃংখল ভাবে চলতে পারেনা। দুনিয়ায় মানুষ বাড়ছে। বাড়ছে কর্ম। বাড়ছে সন্ত্রাস, হত্যা, রাহাজানী, খুন খারাবী, হাইজ্যাক, অপহরণ, গুম, ধর্ষনের মতো জগন্য অপরাধ। এ সব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রেখে মানুষকে অপরাধ মুক্ত রাখার চেষ্টাও পুলিশের কাজ। পুলিশ মানুষের পরম বন্ধু। সমাজে যে হারে সন্ত্রাস ও অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে পুলিশ ছাড়া মানুষ ও সমাজ নিরাপদ মনে করতে পারছেনা। দুনিয়াব্যাপী জঙ্গীবাদ আর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের মাতৃভূমিতে ও নিত্য নতুন ভাবে সন্ত্রাস জঙ্গীপনা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠছে। এসব অপরাধের নিয়ন্ত্রণে পুলিশী ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। পুলিশ সমাজের একটা বিরাট অংশ। তারা সমাজের কারো না কারো আত্মীয়। সমাজের আলো বাতাস শিক্ষায় জ্ঞানে গুণে তাদের বেড়ে উঠা। আমাদেরই একটা অংশ আমাদের জান মাল ইজ্জতের নিরাপত্তার দায়িত্ত পালন করছে। পুলিশ সমাজ ও জনগণ সকলেই মিলে মিশে দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে হবে। পুলিশের একার পক্ষে সমাজের আইন শৃংখলা ঠিক রাখা সম্ভব না। সর্বস্তরের নাগরিকের সহযোগীতার মাধ্যমেই দেশের আইন শৃংখলা ঠিক রাখা সম্ভব। এ বাহীনির প্রারম্ভিক অবস্থা আর আজকের অবস্থার মধ্যে বিশাল তফাৎ। সে সময় আর আজকের সময়ের পুলিশের কর্মকান্ড চিন্তা করলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবাক হতে হয়। পুলিশ বাহীনি রাষ্টের নির্দেশ পালনের মাধ্যমে সমাজকে শান্তি ও শৃংখলায় রাখবে। যেখানেই তাদের দায়িত্ব দেয়া হবে সেখানেই তারা সততা, নিষ্ট, আন্তরিকতা, ভালোবাসা দিয়ে রাষ্টীয় দায়িত্ব পালন করবে। সেটায় তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। এ বাহীনির শুরু থেকেই এমন ধরনের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে সচেতন জনগণ মনে করে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এ বাহীনির কর্মকান্ডে দেশের মানুষ কোনো কোনো সময় আস্থা হারিয়ে ফেলছে। আমার জানা মতে পুলিশ বাহীনির কর্ম উদ্দেশ্য হলো মানুষকে শান্তি শৃংখলায় রাখা। সমাজের অব্যাহত সুখময় পরিস্থিতি ধরে রাখা। সব ধরনের অসামাজিক কর্মকান্ড থেকে মানুষ ও সমাজকে নিভৃত্ব করা। আমরা দেখছি এ বাহীনির শুরু লগ্নে এমন ধরনের কর্ম কান্ডই নজরে বেশী পড়েছিল। তখন এ বাহীনির প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেখা গেছে বেশী। তখনকার দিনে সমাজের নিকট এ বাহীনি সম্পর্কে অনেকটা ইতিবাচক মনোভাব ছিল। আর এখন পর্যায়ক্রমে পুলিশের সে সব গৌরবময় ইতিহাস নেই বল্লেই চলে। পুলিশের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ভক্তি কমে যাচ্ছে। এ বাহীনির প্রতি জনগনের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। আস্থার যায়গা উদ্দার করতে হবে। তাহলে কেন এমন হচ্ছে? এ বাহিনীর কী সমস্যা। তাদের কী বা চাওয়া পাওয়া আছে। তা কি সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের জন্য পূরণ করতে পারেনা, অবশ্যই পারে। তাহলে পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা এতো প্রকারের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পরও অপরাধ ও ঘুষ বাণিজ্যে লিপ্ত কেন? তারা কতো অর্থ বিত্ত চায়। কতো টাকা পর্যন্ত তাদের বেতন ভাতা সুবিধা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে তাদের যাবতীয় বেতন ভাতা ও আনুসঙ্গিক খরচ রাষ্ট্রকে বহণ করতে হয়। দেশের মানুষ দু-বেলা না খেয়ে থাকলেও তাদের বেতনভাতা বন্ধ নেই। রাষ্ট্র তাদের সব ধরনের সুবিধা দেয়ার পরও তাদের অর্থবিত্তের লোভের সীমা থাকেনা। আরো চাই আরো প্রয়োজন। প্রয়োজনের শেষ নেই তাদের। তাদের কতিপয় কর্মকর্তা যখন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, তখন মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায়। যখন দেখা যায় মাদকের মতো মরণব্যাধী কর্মকান্ডে কতিপয় পুলিশ জড়িয়ে পড়ে তখন নীতি ও আদর্শ হারিয়ে যায়। কারণ নীতি নৈতিকতা না থাকার কারণে তাদের এমন আচরণ। লোভ-হিংসা দুর্নীতির উর্ধ্বে উঠে যখন তাদের সেবা দেয়ার কথা ছিল, সে যায়গায় তারাই অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত। এ ধরনের নানা ঘটনায় সমাজ ও মানুষের কাছ থেকে তাদের ভক্তি শ্রদ্ধা উঠে যাচ্ছে। লোভ ও লালসার একটা সীমা থাকা চাই। রাস্তায় যখন দেখি ট্রাফিক পুলিশ বাস ট্রাক থামিয়ে চাঁদাবাজী করে। তখন যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রকাশ্যে চাঁদা দাবী করেন। নগরীর বাহির ও প্রবেশ মূখে আরো কতিপয় স্পটে এসব দৃশ্য প্রতিদিন চোঁখে পড়ে। তখন নিজের কাছেও লজ্জা হয়। কারণ আমাদের দেশের পুলিশ আমাদেরই অংশ। আবার তার দেশের নাগরিককে তিনি হয়রানী করে অর্থ আদায় করছে। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিচ্ছে। অহেতুকভাবে হয়রানী করছে। মাত্র অল্প টাকার জন্য। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়,মাদক দ্রব্য মানুষের পকেটে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়ে মামলা দেয়া হয়। এসবের কোনো যৌক্তিক কারণ আছে বলে আমি বিশ্বাস করিনা। তাদের যদি আরো টাকা আরো সম্পদের প্রয়োজন হয় তাহলে রাষ্ট্র সেটা চিন্তা করুক। কিন্তু যেখানে তারা অপরাধ নির্মূল করবে সেখানে তারা অপরাধ কেন করবে সেটায় জনগনের প্রশ্ন এবং সেটায় আমাদের ব্যাথার কারণ। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে পুলিশের দায়িত্ব হলো নাগরিকদের সেবা দেয়া। সেখানে বিনা অপরাধে কাউকে হয়রানী করা কোনো অবস্থায় মেনে নেয়া যায়না। জমিজমা বাড়ী ভিটা সংক্রান্ত মামলায় এ বাহিনীর না জড়ানোই উত্তম। আদালতের কাজ আদালত করবে নিয়ম হলো আদালতের অর্ডার পালন করে আইনের পক্ষে থাকাই হলো এ বাহিনীর দায়িত্ব। জায়গা জমির মামলায় জড়িয়ে এ বাহিনীর ভাবমূর্তি বেশী ক্ষতি হচ্ছে। আইন শৃংখলা রক্ষার নামে বিরোধী মতের বিরোদ্ধে অবস্থান নেয়াও গ্রহণযোগ্য নয়। সর্বদা তাদের নিরপেক্ষ ও শান্তিপ্রিয় মানুষের কাতারে থাকা দরকার। রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে রাষ্ট্রের সেবক হিসেবে চায় জনগণ। অন্যায়ভাবে সবধরনের হয়রানীর বিরোদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ। সব দল মত গোত্রের মানুষের সমানভাবে সেবা দিতে হবে। আইনের সামনে সকলেই সমান, রাষ্ট্রপতি যেভাবে সেবা পাবেন, গ্রামের দিন মজুরও একইভাবে সহযোগীতা পাবেন। সব নাগরিককে সমান চোঁখে রেখে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করুক সেটায় জনগণের প্রত্যাশা ও দাবী। সব ধরনের রাস্তা ঘাটে পুলিশী হয়রানী ভোগান্তি বন্ধ করতে হবে। মাঠের কতিপয় কর্মকর্তাদের কারণে গোটা এ বাহীনীর দুর্নাম মেনে নেয়া যায়না। জাতি আশা করে এ বাহীনী তাদের উপর জনগণের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন ও রক্ষা করবেন। অন্যায়ভাবে অহেতুক কোন নাগরিককে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া যেন হয়রানী আর ভোগান্তি না করা হয়। সেটায় প্রত্যাশা এ বাহিনীর প্রতি।

 

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply