২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১০:৪৭/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ১০:৪৭ অপরাহ্ণ

তুমি বেঁচে রবে তোমার গানে গানে

     

আকাশ ইকবাল
হাই স্কুলের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের বইতে একটি ভাবসম্প্রসারণ আছে কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। ভাবসম্প্রসারণটি এমনি এমনি আসেনি। আসার অনেকগুলো কারণ আছে। মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মাধ্যমে, বয়সের জন্য নয়। কত কোটি কোটি মানুষ এ পৃথিবীতে এসেছে। কিন্তু মৃত্যুর পর কেউ তাদের মনে রাখেনি। তারা ভেসে গিয়েছে কাল¯্রােতে। কিন্তু কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গ মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করে মৃত্যুবরণ করেন, তারা অমর। নশ্বর পৃথিবীতে মানুষ অবিনশ্বর হয় কর্মগুণে। মানব কল্যাণে ব্যয়িত জীবন মানুষের মনে বেঁচে থাকে অনন্তকাল। বস্তুত মানব জীবনের সার্থকতা এখানেই নিহিত। মানুষ মরণশীল হলেও কর্মগুণে অমরত্ব লাভ করা সম্ভব। মিথ্যে নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে সেই ব্রিটিশ আন্দোলনের জীবন উৎসর্গকারী ১৯ বছরের যুবক ক্ষুদিরাম বসুও তার কর্মের জন্য আজ পৃথিবীতে অমর হয়ে আছেন। থাকবেন বাকি জীবন। ক্ষণস্থায়ী মানবজীবনকে অনন্তকাল বাঁচিয়ে রাখতে হলে তথা স্মরণীয়-বরণীয় করে রাখতে হলে কল্যাণকর কর্মের কোনো বিকল্প নেই। ঠিক একই ভাবে বঙ্গবন্ধু ও ক্ষদিরাম বসুর মতো যুগ যুগ ধরে বেঁচে রবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠশিল্পী আবদুল জব্বারও। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা জোগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’সহ অসংখ্য গানে কণ্ঠ দেন। তাঁর গানে অনুপ্রাণিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা পেয়েছিলেন প্রেরণা ও মনোবল। শুধু গান গেয়ে থেমে থাকেন নাই। তিনি নিজেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন নিয়মিত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যোদ্ধাদের জন্য গান গেয়ে ত্রাণ জোগাড় করেছিলেন। এরপর গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে গণসংগীত গেয়ে পান ১২ লাখ টাকা, যা স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করেছিলেন। সারা কলকাতার ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।
তিনি প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনমত তৈরিতেও নিরলসভাবে কাজ করেন। তাঁর গাওয়া বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’। এই গানগুলো তিনি বেঁচে থাকতে মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিটা দিবস ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সব সময় সম্প্রচার করা হয়। এছাড়াও স্কুল-কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় তথা সকল পেশাজীবি মানুষের মুখের গান এগুলো। এগানগুলো ছাড়াও আরো অসংখ্য গানের গায়ক আব্দুল জব্বার। তার গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ও ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গান তিনটি ২০০৬ সালের মার্চ মাসে বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি গানের তালিকায় স্থান পায়। তিনি বাংলাদেশ সরকার প্রদন্ত দুটি সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক (১৯৮০) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে (১৯৯৬) ভূষিত হন। যে মানুষটি বেঁচে থাকতে এতো বেশি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছে, যে মানুষটি বেঁচে থাকতে দেশের মানুষ প্রতিনিয়ত তাঁকে স্মরণ করেছে সে মানুষটির মৃত্যু কীভাবে হয়? তোমার মৃত্যু নেই। তুমি বেঁচে রবে আমাদের মাঝে। তুমি বেঁচে রবে বাংলাদেশের বুকে। তুমি বেঁচে রবে তোমার গানে গানে। তুমি জন্মেছিলে তবে তোমার মৃত্যু নেই।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply