২৮ মার্চ ২০২৪ / ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৭:১৭/ বৃহস্পতিবার
মার্চ ২৮, ২০২৪ ৭:১৭ অপরাহ্ণ

লামা মিরিঞ্জা টাইটানিক পর্যটন’পাহাড় যিনি ঘুরতে আসেনি: তিনি বাংলাদেশ দেখেননি

     

ফরিদ উদ্দিন,লামা 
পর্যটকদের মনের তৃপ্তি দিতে নতুন রুপে সেজেছে লামার মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স। আনন্দকে উপভোগ করার জন্য যে কোনো পর্যটককে আকর্ষণ করছে ১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবন্ত টাইটানিক জাহাজের আদলে নির্মিত লামার মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারনায় মূখরিত এ পর্যটন কমপ্লেক্স। এ জন্য নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যাবস্থা।

সাগর পৃষ্ট থেকে প্রায় ১৫শ ফুট উঁচু মিরিঞ্জা পর্যটন পাহাড়। মাথার উপর টুকরো নীল আকাশ, প্রতিনিয়ত মেঘ ছূঁয়ে যায় মিরিঞ্জা পাহাড়ের গায়।বন মোরগের ডাক, পাহাড়ি বন ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মাখামাখি, প্রজাপতির লুকচুরি খেলা,নানা রংয়ের পাহাড়ি পাতা ফুলের হাসি। পাহাড়ের নীচে লুকানো ঝরণা, চূড়ায় উপজাতীয় (মুরং) টংঘর, জুম চাষ আর অরন্য রানীর ঐতিহ্যের পোষাক। পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয় করে তুলতে গড়ে তোলা হয়েছে সাড়া জাগানো টাইটানিক জাহাজের ভাস্কর্য। এ পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য অনেক সময় কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের সূর্য ডুবার দৃশ্যকেও হার মানায়। পশ্চিমের পাহাড়ে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন চির সবুজ পাহাড়।
রয়েছে এ পাহাড়ে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত ও বঙ্গোপসাগরে রাত্রিকালীন অলংকার লাইট হাউসের আলোর ঝিলিক ও কুতুবদিয়া চ্যানেল দেখার সুযোগ। মিরিঞ্জার দক্ষিন প্রান্তে ১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবন্ত টাইটানিক জাহাজের আদলে পাহাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে সাড়া জাগানো সেই ইতিহাসের টাইটানিক জাহাজের ভাস্কর্য। এখানে দাঁড়ালে মনে করিয়ে দেয় শত বছর পূর্বের টাইটানিক চিত্র কাহিনী। নির্মাণ করা হয়েছে সুরম্য গিরিদ্বার, রেষ্ট হাউজ কাম ওয়েটিং সেড বনরত্না। আপনজনকে নিয়ে নির্জনে বসে গল্প করার স্থান সংযোগ সেতুসহ দুই স্তরের গোলঘর মালঞ্চ। নির্মাণ করা হয়েছে টেলিস্কোপ ঘর এবং ফ্ল্যাট ফরম। জোৎস্মা রাতে চাঁদ দেখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে চন্দ্রমা গোলঘর। শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে মিনি শিশুপার্ক। খাওয়ার দাওয়ার জন্য রয়েছে শিশু পার্ক সংলগ্ন অত্যাধুনিক রেস্টুরেন্ট। ভ্রমণ পিপাসুদের নিরাপত্তার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে স্পেশাল পুলিশ ফাঁড়ি।

সবুজ বৃক্ষ আর পাহাড় ঘেরা মাতামুহুরী নদী বেষ্টিত প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকদের মন ভরিয়ে দিতে সর্বদা প্রস্তুত মিরিঞ্জা। এখানে উপভোগ করা যায় শান্ত শীতল মাতামুহুরী নদীর সৌন্দর্য্য, আকাশ, পাহাড়, মেঘ ও নদীর অপরূপ মিলন।
পর্যটনের পূর্ব দিগন্ত জোড়া সবুজ পাহাড়ের সারিতে শোনা যায় প্রায় ১হাজার ফুট গভীর ঝিরি থেকে উৎঘিরিত জল সিঞ্চনের বিরামহীন কলরব। লক্ষ্য করা যায়- বন মোরগ, খরগোশ, মায়াবী বনো হরিণের অবাধ বিচরণ-ডাক ছাড়াও আরো কত কি ? উপজাতীয়দের টংঘরে পাহাড়ী নর-নারীর সরল জীবন যাপন, এ যেন এক অনন্য ভূবন। অরণ্যে পাহাড়ী মিরিঞ্জা চূড়াকে এত সবুজ মায়া, টিলা, পাহাড়ী ঝরণা, কাঁকর বিছানো পথে এত আমোদ করা আন্তরিকতা এখানে না আসলে বোঝাই মুশকিল। এখানকার মানুষের হৃদয়ে রয়েছে দিগন্তের বিস্তার আর আতিথ্যের ঐশ্বর্য্য।
পর্যটনের কাছেই উপজেলা সদরে আরো থাকছে, মুরুং, মার্মা, ত্রিপুরাসহ ১১ ভাষার সম্প্রদায় উপজাতির সংস্কৃতি ও লোকাচারের সান্নিধ্য।থাকছে সুঃখী ও দুঃখী নামের দুটি ১’হাজার ফুট সুউচ্চ ২টি পাহাড়ের বুকচিরে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা মাতামুহুরী নদী।বিকাল বেলা মাতামুহুরী নদী নৌকা দিয়ে সিতার কুম,আলোর পাহাড়ে ডুবন্ত সুর্য দেখে মনভরে যাবে এছাড়াও মিরিঞ্জা ঘুরে ১ ঘন্টার মধ্যে সরাসরি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার চলে যাওয়া যায়। যে সকল পর্যটক রাত্রি যাপন করতে চান তাদের জন্য রয়েছে একাধিক লামা বাজারে হোটেল- মোটেল উন্নতমানের খাবার ব্যবস্থা। অল্প খরচে মান সম্মত সেবা পাওয়া যায় এ হোটেলে।
সুদুর খুলনা থেকে স্ব-পরিবারে এসেছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, মিরিঞ্জা এসে আমাদের খুব ভালো লাগছে। এত মনোমগ্ধকর পরিবেশ আছে মিরিঞ্জায় তা আগে জানতাম না।কুমিল্লার মনিরুল ইসলাম পাচঁদিনের জন্য লামায় বেড়াতে এসে ঘুরে দেখেছেন দুখিয়া-সুখিয়া পাহাড়ের বুকের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওযা মাতামুহুরী নদী মনোরম দৃশ্য,সিতার কুম,মিরিন্জা পর্যটন কমপ্লেক্স,আলোর পাহাড়,সুর্যঘিরি নুনার ঝিরি ঝাণা নামে পরিচিত। তিনি বলেন,যিনি মিরিন্জা টাইটানিক পর্যটন পাহাড় দেখেননি তিনি বাংলাদের সৌন্দর্য্য দেখেনি।
লামা থানা অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন (ওসি) বললেন, দেশী-বিদেশী পর্যটকদের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সে জন্য নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যাবস্থা।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply