২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৫:৩৯/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৫:৩৯ অপরাহ্ণ

ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. আবদুল করিম এর মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে

     

সোহেল মো. ফখরুদ-দীন

ইতিহাসের সন্ধানী পুরুষ প্রফেসর ড. আবদুল করিম ২০০৭ সালের ২৪ জুলাই পরলোকগমন করেন। ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই তাঁর ১০তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনে আমরা তাঁর কর্মকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। জীবন সংগ্রামের বাঁশি বাজাতে বাজাতে হাজার হাজার ইতিহাস সন্ধানী গবেষক, লেখক, দেশ-বিদেশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য শিক্ষক ও হাজার হাজার ছাত্র/ছাত্রী রেখে এ জগত ছেড়ে চলে গেলেও আজও ইতিহাসের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে তিনি অমর এবং প্রাতঃস্মরণীয়। যতদিন না মানুষ ইতিহাস এবং অতীতকে জানতে চাইবে, ততদিন প্রফেসর ড. আবদুল করিম তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে এ জাতিকে আলোকিত পথ দেখাবে। প্রফেসর ড. আবদুল করিম স্যার আমার শিক্ষাজীবনে সরাসরি শিক্ষক ছিলেন না। তবুও আমার জীবনপ্রবাহে শুধু ড. আবদুল করিম স্যারই নয়, তিনি আমার পথ চলার পথের সন্ধান-দাতা। ৯০’র দশকের শুরুতে প্রতœতত্ত্ব গবেষণা ও সংরক্ষণে কাজ করার তাগিদে যখন ক্যামেরা নিয়ে বের হলাম তখন বিচারপতি আবদুস সালাম মামুনের মাধ্যমে ড. আবদুল করিম স্যার’র সঙ্গে দেখা ও জানা। তিনি প্রথম দেখাতে আমাকে খুব আপন করে কাজ করতে উৎসাহিত করেছিলেন। ২০০৭ সালে মে মাসের প্রথম দিকে যখন প্রাচীন চট্টগ্রাম শিরোনামে আমি তথ্যচিত্র নির্মাণ করে স্যারের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম- সেই দিন স্যার আমার সাথে এক ঘন্টা কথা বলেছিলেন চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে। যা আমার ভিডিও ফুটেজে ধারণ করা আছে।
আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই, আছে শুধু তারই দিক নির্দেশনা। আমরা যারা ইতিহাস নিয়ে গবেষণা ও সংরক্ষণ করে আসছি তারা স্যারের কথা মনে রাখলে জীবন-সংগ্রামে প্রতিটি মুহুর্তে তাঁকে আমরা পাবো, এটি আমার দৃঢ় বিশ্বাস। চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ঐতিহাসিক ড. আবদুল করিম ১৯২৮ ইংরেজীর ১ জুন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার বাঁশখালী থানার চাপাছড়ি গ্রামের সৈয়দ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম সৈয়দ ওয়াইজুদ্দীন। তিনি স্বগ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে চট্টগ্রামের ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৪ ইংরেজীতে তিনি সেখান থেকে প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করেন এবং ১৯৪৬ ইংরেজীতে প্রথম বিভাগে অষ্টম স্থান অধিকার করে ইন্টরমিডিয়েট পাশ করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। তিনি ১৯৪৯ ইংরেজীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে বি.এ অনার্স পাশ করেন এবং ১৯৫০ সালে ইংরেজীতে ইতিহাসে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম.এ পাশ করেন। ১৯৫১ ইংরেজীতে তিনি প্রভাষক হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগে যোগদান করেন এবং গবেষণায় লিপ্ত হন। তিনি ১৯৫৩ ইংরেজীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে পি.এইচ.ডি লাভ করেন। অতঃপর উচ্চতর শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে পি.এইচ.ডি লাভ করেন। অতঃপর উচ্চতর শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হন। তিনি ১৯৫৯ ইংরেজীতে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণার জন্য পি.এইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। লন্ডন থেকে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে রিডার পদে উন্নীত হন। ১৯৬৯ ইংরেজীর এপ্রিল মাসে তিনি চট্টগ্রাম ইতিহাস বিভাগের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। পরবর্তীতে আর্ট ফ্যাকালটির ডিন হন। ১৯৭৫ ইংরেজীতে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিযুক্ত হন। প্রফেসর ড. আবদুল করিমকে প্রশংসনীয় ঐতিহাসিক অবদান রাখার জন্য লন্ডনের রয়েল এসিয়াটিক সোসাইটি অফ গ্রেট ব্রিটেন এন্ড আয়ারন্যান্ড ফেলোশিপ প্রদান করেন। ভারতের বেনরস্থ, ন্যুমিষ্টিক সোসাইটি অব ইন্ডিয়া, বাংলাদেশে উক্ত বিভাগে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য তাঁকে আকবর রৌপ্য পদক ও সদস্য পদ প্রদান করেন, ২০০৩ সালে ভাষা আন্দোলনের স্থপতি অধ্যক্ষ আবুল কাশেম সাহিত্য একাডেমী পদক, ২০০৬ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী গবেষণা পরিষদ স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে ইতিহাস সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষে ইংল্যান্ড, ফ্রন্স, পশ্চিম জার্মানী, ভারত ও পাকিস্তান সফর করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থাবলী- ঝড়পরধষ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযব গঁংষরসং রহ ইবহমধষ ১৯৫৯ ইংরেজীতে প্রকাশিত। ঈড়ৎঢ়ড়ঁং ড়ভ ঃযব গঁংষরসং ঈড়রহং ড়ভ ইবহমধষ ১৯৬০ ইংরেজীতে প্রকাশিত। গঁৎংযরফ ছঁষর কযধহ ধহফ যরং ঞরসবং ১৯৬৩ ইংরেজীতে প্রকাশিত। উধপপধ ঃযব গঁমযধষ ঈধঢ়রঃধষ ১৯৬৪ ইংরেজীতে প্রকাশিত। এই চারটি গ্রন্থ এসিয়াটিক সোসাইটি অব পাকিস্তান ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত হয়। ঢাকাই মসলিন, ১৯৬৫ ইংরেজী, বাংলা একাডেমী। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন, বাংলা একাডেমী, বাংলার ইতিহাসঃ সুলতানী আমল, ১৯৭৭ ইং, বাংলা একাডেমী। চট্টগ্রামে ইসলাম, ১৯৬৯ ইংরেজী, সোসাইটি ফর পাকিস্তান ষ্টাডিজ। নশরুল্লাহ খোন্দকার রচিত শরীয়ত নামা- সম্পাদনা ১৯৭৫ ইং, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ঈধঃধষড়মঁব ড়ভ ঃযব ঈড়রহং ড়ভ ইধহমষধফবংয রহ ঃযব ঈযরঃঃধমড়হম টহরাবৎংরঃু গঁংবঁস সহ আরও অসংখ্য গ্রন্থের প্রণেতা। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণা পত্রিকায় ৫০০টিরও অধিক প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। চট্টগ্রাম নগরীর ঐতিহাসিক গরীবউল্লাহ শাহ (রহ.) মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে এই মহান মনীষীকে চির সমাহিত করা হয়। তাঁর ১০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply