বুদ্ধ পূর্ণিমা : বুদ্ধের শিক্ষা
বুদ্ধ পূর্ণিমা সমগ্র মানব জাতির জন্য নিয়ে আসে শান্তির মহান বার্তা। সকল প্রকার হিংসা, শোষণ–নির্যাতন, অবিচার– অনাচার, বর্ণ বৈষম্য,বিভেদ,পৈশাচিকতার বেড়াজাল ছিন্ন করে, ক্ষমা, সহিষ্ণুতা বা ক্ষান্তি, ত্যাগ দয়াশীলতা, সংযমতা বা চারিত্রিক শক্তিতে বলিয়ান হয়ে পাপে ঘৃনা,পূন্যকাজে অকুতোভয় জীবন রক্ষাই বুদ্ধের শিক্ষা। বুদ্ধের জীবদ্দশায় বহু ধর্ম প্রবক্তা তথা ধর্ম প্রচারকের নাম প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে পরিদৃষ্ট হয়।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্রে দেখা যায় প্রাচীন ভারত ষড়দর্শনের প্রভাব ছিল। যা হলঃ সাংখ্য, যোগ ন্যায় বৈশেষিক, মীমাংসা ও বেদান্ত এই দর্শনগুলো বেদেরকর্তৃত্বে বিশ্বাসী, বেদকে অভ্রান্ত ও বেদের সিদ্ধান্তকে প্রামাণ্য বলে মেনে নিতেন, তাই তারা নিজেদেরকে আস্তিক বলে প্রকাশ করত। অপরদিকে চার্বাক,বৌদ্ধ ও জৈন দর্শনে বেদের কর্তৃত্ব ও প্রামাণ্য কে অস্বীকার করার কারণে তাদেরকে বলা হত নাস্তিক দর্শন। কোন কোন ক্ষেত্রে ঈশ্বরে বিশ্বাসী আরঅবিশ্বাসী এ নিয়েও আস্তিক বা নাস্তিক নামে আখ্যায়িত করা হত। তার মাঝে আবার সাংখ্য এবং মীমাংসা দর্শনে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করা নাহলেও তারা বেদে বিশ্বাসী বলে তাদেরকে আস্তিক দর্শনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ষড়দর্শনের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে অমিল পরিদৃশ্য মান ঘটে। একইভাবে নাস্তিক দর্শনের নামে খ্যাত চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শনের মাঝে বৌদ্ধ দর্শনের সাদৃশ্য কতটুকু তাহা উপলব্ধি করা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।
মুলতঃ বৌদ্ধ দর্শনের সাথে চার্বাক ও জৈন দর্শনের একটি বিষয়ে মিল আছে আর তা হল এ দুটি দর্শন ঈশ্বর ও বেদের কর্তৃত্বে বিশ্বাসী নয়। আদর্শগতভাবে অন্যান্য বিষয়ে তেমন মিল দেখা যায় না। জৈন দর্শনে কতিপয় নীতির সাথে বুদ্ধের প্রবর্তিত নিয়মের সাথে মিল থাকলেও পর মূলগত দর্শনেরসাথে মিল নেই বললেই চলে। চার্বাক দর্শন যেখানে অক্রিয়াবাদী, কর্তা, ভোক্তা, সুকৃত ও দুষ্কৃত কর্মের ফল বা বিপাকে কোন অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়অপরদিকে জৈন দর্শনে আত্মনিগ্রহ বা কৃচ্ছতায় বিশ্বাসী হয়ে আত্মহননের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করা হয় সেখানে বৌদ্ধ দর্শন উভয় দর্শনের মধ্যবর্তীএকটি আদর্শ পথের সন্ধান দিলেন,যা বৌদ্ধ দর্শনে মধ্যম পথ নামে খ্যাত। অতিরিক্ত ভোগ, বিলাস তথা স্বৈরতাকে অবদমিত করা, আবার কঠোরআত্মনিগ্রহ বা কৃচ্ছতা গ্রহণ না করে মধ্যবর্তী পথে এগিয়ে আসা যা বুদ্ধের মূল শিক্ষা বা শীল, সমাধি, প্রজ্ঞার অনুশীলনের শিক্ষা।
বুদ্ধের মূল শিক্ষাই হচ্ছে এই তিনটি স্কন্ধের শিক্ষা– অর্থাৎ শীলস্কন্ধ, সমাধিস্কন্ধ এবং প্রজ্ঞাস্কন্ধ। শীলস্কন্ধে আমরা দেখি বুদ্ধ আমাদের কায়িক বাচনিকও মানসিক সংযম শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন। তাই আস্টমার্গের তিনটি মারগই শীলস্কন্ধের অন্তর্গত। তিনটি মার্গ সমাধি স্কন্ধ।