২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১২:৫৮/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ১২:৫৮ অপরাহ্ণ

চালের দাম বৃদ্ধিতে জনভোগান্তি বাড়ছে

     

মাহমুদুল হক আনসারী

অক্টোবর ২০১৬ থেকে বাজারে ধাফে ধাফে চালের দাম বৃদ্ধি শুরু হয়। পাঁচ মাসের মাথায় চালের মূল্য বাড়তেই আছে। চাউল বাঙ্গালী মানুষের প্রধান খাদ্য হিসেবে এখনো তালিকায় আছে। শহর থেকে গ্রাম সকল পেশার মানুষের সকাল-বিকাল খাদ্যের তালিকায় চাউল বা ভাত-ই আছে। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ পন্থাভাত আর মরিচ দিয়ে সকালের নাস্তা করে থাকে। নাস্তা কাকে বলে কী ভাবে তা তৈরী করতে হয় সেটাও জানে না বুঝে না। কোটি কোটি গ্রামীণ জনপদের মানুষ। এ মানুষগুলোর সকাল-বিকেলের, রাতের খাবার চাউল আর ভাত, যখন এ চাউল, বা ভাতের আয়োজন করতে বেশী টাকার খরচ হয় তখন ঐ মানুষগুলো অস্থীর হয়ে যান। তাদের মাথা ঠিক থাকেনা, মাছে ভাতে বাঙ্গালী এটা আমাদের সাহিত্যের। ভাষা, সংস্কৃতি, আবাহমান কাল থেকেই, এ সংস্কৃতির লালনে পালনে অনুসরনে বাঙ্গালী জাতি বেঁচে আছে। চাউল, ভাত ছাড়া বাঙ্গালী জাতী বাঁচেনা। ভাত খেতেই হবে। যত পিঠা, পুরী, নাস্তা খাওয়া হউক না কেন? পরিমানে কম হলেও ভাত চাই। এমনকি ডাক্তাররা যাদেরকে ভাত কম খেতে বলেন তারও ভাতের এ অভ্যাস ছাড়তে পারছেনা। ভাত ছাড়া কোন বাঙ্গালীর বিকল্প কোন খাদ্যাভ্যাস এখনো তৈরী হয়নি। ভাত আমাদের খেতেই হবে। ভাত আমাদের খাদ্যে তালিকার প্রধান খাদ্য। বাংলাদেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের ভাতের প্রয়োজনে চাল দরকার। শহরে ধান চাষ না হলেও গ্রামের জামিতে বছরে ২-৩ বার ধান চাষ হচ্ছে। ধান চাষের আধুনিক যন্ত্রপাতি, কীটনাষক, আধুনিক চাষাবাদ, চিকিৎসা বিদ্যালয় সব আছে। এসব প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা কেন্দ্রের লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্য হল কৃষীর উন্নয়ন, অগ্রগতি, দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও কৃষি পণ্যের রপ্তানী করা কৃষিতে দেশ কম অগ্রগতি অর্জন করেনি। উন্নতি অনেক হয়েছে। তার পরও এত অগ্রগতির পরও খাদ্যে বাংলাশে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে উঠছেনা। বিদেশ নির্ভর হতে হচ্ছে। বিদেশ হতে খাদ্য সমাগ্রী আমদানী না করলেই কী সে চাল, চাউলের দাম বৃদ্ধি হবে? মনে হচ্ছে তাই। দেশে প্রচুর পরিমান ধানের চাষ হচ্ছে। জমি কোন ভাবেই খালী থাকেনা। কেননা কোন াফসল চাষ হচ্ছেই। ধানের চাষটা খুবই বেশী হয়। ধানীজমিগুলোতে ধান চালের চাহিদাও সব সময় বেশী থাকে। চাদিার সাথে তাল মিলিয়ে সরকারের ধান চাল সংগ্রহ থাকে। সব সরকারের আমলেই তা হয়। বর্তমান সরকারের একটা সমালোচনা অনেক দিন থেকেই আছে, আওয়ামী লীগ সরকার আসলেই চালের মূল্য বৃদ্ধি পায়। ভাতের ও চালের জন্য জনগণের মধ্যে উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়, জনগন ভোগান্তির শিকার হয়। কৃষি প্রধান, কৃষি নির্ভর দেশ হয়েও বাংলাদেশ খাদ্যে পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারল না সেটায় মূলত ভাবভার বিষয়। কোন না কোন ভাবেই আমরা সকলেই কৃষকের সন্তান। কম বেশী সকলেই কৃষির সাথে আমরা জড়িত। কৃষকদের প্রতি ভালোবাসা, আন্তরিকতা, সহানুভূতি থাকা দরকার। যে কৃষকরা কৃষির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন গতি ধরে রেখেছে তারাই চাল-ভাতে ভোগান্তির শিকার হবে সেটা মেনে নেয়া যায় না। কৃষি কাজের সাথে যারা জড়িত তাদের নানা সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে তারা অনেকেই বর্গা চাষি। নিজের জমি আছে এমন কৃষক খুবই নগন্য। তবুও ঐ কৃষকগণ কৃষি কাজ করেই তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। জমির মালিককে খাজনা আর জমির উপর বাজনা যা দারকার সব দিয়ে কৃষকের ঘরে চলার মত তেমন বেশী কিছু ফসল থাকে না। কোন না কোন কৃষি কাজে তারা সক্রিয় থাকে। এ কৃষকরাই আবার সারা বছর চাল কিনে ভাত খায়, তাদের গোলায় ধান রাখতে পারে না। ধান গোলায় উঠার পূর্বেই বিক্রি করে নানাভাবে কর্জ পরিশোধ করতে হয়। তার পরও তাদের সংগ্রাম থেমে নেই। তারাই সমাজের রাষ্ট্রের চালিকা শক্তি। রাষ্ট্রের মালিক, তাদের ভোটেই সরকার গঠন হয়, ভোটের সময় রাজনৈতিক দলগুলো তাদেরকে অসংখ্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। কিন্তু ঐ দুঃখি মেহনতী মানুষদের বাস্তবে ভাগ্যের কোন পরিবর্তন দেখা যায় না। অভাবই তাদের স্বভাব। বর্তমান সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কিছু কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছিল। এ সরকারের অতীত ইতিহাসে চালের কারণে একট দূর্নাম ছিল। বাঙ্গালী ভাত খেতে না পারলে কোন কিছুই তাদেরকে খুশি রাখতে পারে না। তাই দেশ যতই ভাল সুন্দর চলুক না কেন, যখন চালের মূল্য বৃদ্ধি হয় তখন বাঙালির মাথা ঠিক থাকে না। অন্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও গায়ে লাগে না। খবর হয় না, বেশী বলতেও শোনা যায় না। কিন্তু যখন চালের দাম বৃদ্ধি হয় তখন সারা দেশেই মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয় ‘আর ভাত খেতে পারব না’। না খেয়েই মরতে হবে। এমন কথা এখন গ্রাম কী শহরের সব খানেই শোনা যাচ্ছে। বর্তমান সরকারকে অতীত সমালোচনা থেকে বাঁচার জন্য দশ টাকায় চাল দেওয়ার কথাও প্রচার হয়। গরীব ও দুঃস্থদের দেওয়া হয়েছে। তা হলে প্রশ্ন হলো এখন কী সেই গরীব দুঃস্থ মানুষ সমাজে আর নাই? ওরা সবাই এখন ধনী হয়ে গেছে? গরীবদের ভোটের দরকার নাই? এসবের কী উত্তর আমার জানা নাই। সরকারের যারা দায়িত্বশীল তারা কী বাস্তবে বঙ্গবন্ধুর কন্যার সফলতা চায়? নাকি অন্য কিছু? যদি সফলতা চায় তা হলে গ্রামের মানুষের দুঃখ দূর্দশার চিন্তা আগে করা দরকার। তারা বেঁচে থাকলেই শহর বাঁচবে, দেশ বাঁচবে, সরকার টিকে থাকবে। তাদের ভোটেই সরকার আসে এবং যায়। তাদের ঘামের ফসল সোনার বাংলাদেশ। সেই বিশাল শ্রমজীবি মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে অবশ্যই চালের মূল্য বৃদ্ধি বন্ধ করতে হবে। চাল ও ভাত যে কোন মূল্যে মানুষের নাগালের মধ্যে এবং সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। গ্রামের মানুষ মোটা চিকন চাল বুঝে না তারা ভাত চায়। সেটা মোটা হউক আর চিকন হোক। আমি বর্তমান সরকারকে বলব, সব ধরনের চালের বাজার কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কৃষক, ধনী-গরীব দুঃস্থ সকলকেই বাঁচান। ভাত ও চাল ছাড়া বাঙালী বাঁচবে না। অসৎ ও লোভী মৌজুদদারদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। আমার জানা মতে, চালের কোন সংকট নেই। এটা রাজনৈতিক সংকট হতে পারে। ব্যবসায়ীদের সুদুর প্রসারী ষড়যন্ত্রও হতে পারে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য ষড়যন্ত্রের অভাব নেই। মৌজুদদারদেরকে কঠোর ভাবে নজরদারীতে এনে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোন অবস্থায় গরীব দুঃস্থ মানুষদের চালের কারণে ভোগান্তিতে ফেলানো যাবে না। যে কোন মূল্যে চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তবেই জনগণ শন্তি ও স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে বলে আমি মনে করি।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply